—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
দেশ জুড়ে একগুচ্ছ রাজ্য এখন নিয়ম করে প্রতি বছর শিল্প সম্মেলনের আসর বসায়। পূর্বাঞ্চলও শামিল তাতে। লক্ষ্য, লগ্নি টানা। এ বছর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে সেই যজ্ঞ। গতকাল শেষ হয়েছে দু’দিন ধরে চলা ওড়িশার শিল্প সম্মেলন। আগামী সপ্তাহে এ রাজ্যে বসবে বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলন (বিজিবিএস)। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তা হওয়ার কথা অসম এবং ঝাড়খণ্ডে। যে প্রশ্নে জল্পনা বাড়ছে তা হল, এতে কে কতটা সফল হচ্ছে? অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত কার ঝুলি কতটা ভরছে?
ওড়িশা সরকারের দাবি, এ বছর মোট ১৬.৭৩ লক্ষ কোটি টাকার লগ্নি-প্রস্তাব পেয়েছে তারা। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এতে কড়া প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে পুবের অন্য রাজ্যগুলি। বিশেষত বেশ কিছু দিন ধরেই যেহেতু বিনিয়োগের খরায় ভুগছে দেশ। ফলে কে কতটা পুঁজি টানতে পারল, সে দিকে নজর সকলের।
ওড়িশায় আদানিরা ২.২৮ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নির বার্তা দিয়েছে। এ ছাড়া বেদান্তের ১ লক্ষ কোটি, টাটাদের প্রায় ৮৮ হাজার কোটি, মহানদী কোলফিল্ডস-এর প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব উল্লেখযোগ্য। তালিকায় রয়েছে জেএসডব্লিউ, আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠী, ওএনজিসি, সেল, এনটিপিসি-র মতো বড় সংস্থাও। প্রায় ১৩ লক্ষ কোটি টাকার প্রস্তাব বাস্তবায়িত করতে সম্মেলনেই ওড়িশা সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে কিছু সংস্থা। লগ্নি প্রতিশ্রুতির পুরোটা কার্যকর হলে অন্তত ১৩ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে, দাবি মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝির। একাংশ মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত সত্যি তা হলে ওড়িশার ছবিটা বেমালুম বদলে যাবে। আর এখানেই প্রশ্ন, আগামী সপ্তাহে এ রাজ্যের শিল্প সম্মেলন ওড়িশার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে কি? যদি লগ্নির প্রস্তাব আরও বেশি আসেও, তার বাস্তবায়নে এগিয়ে থাকবে কে?
বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, ওড়িশায় যাঁরা লগ্নি করতে চান তাঁদের অনেকে বাংলায় এতটা ঢালতে আগ্রহী নন। গত কয়েক বছর ধরে তেমন বিরাট অঙ্কের পুঁজি ঢালার প্রতিশ্রুতি দেননি কেউ। টাটা গোষ্ঠীও এখানে নতুন বিনিয়োগে কিছুটা পিছিয়েই। ফলে বড় অঙ্কের লগ্নি টানার দৌড়ে পশ্চিমবঙ্গ কাদের পেতে পারে, তা নিয়ে চর্চা চড়ছে। একাংশের দাবি, বাংলার জমি নীতি, আর্থিক সহায়তার নীতি ইত্যাদিও ওড়িশা কিংবা অসমের মতো পূর্বাঞ্চলের পড়শির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো নয়।
শিল্পমহলের বেশির ভাগেরই অবশ্য অভিমত, পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সফল হচ্ছে, সেটা আলোচনার বিষয়বস্তু বটে। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে যে সুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে, তা সামগ্রিক ভাবে পূর্ব ভারতের উপকার করবে। লাভের ফসল ঘরে তুলতে সকলকে শুধু কড়া নজর রাখতে হবে বিনিয়োগ করার প্রস্তাবের কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, সে দিকে।