ত্রুটি নির্মাতা সংস্থা এম এল ডালমিয়া অ্যান্ড কোম্পানির। কিন্তু শেষমেশ তার খেসারত দিতে হল রাজ্যকেই। বানতলা চর্মনগরীর বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা তৈরির জন্য খরচ ভাগাভাগিতে রফার পথে হাঁটতে গিয়ে ৩৮ কোটি টাকা গুনতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
এমনিতে ওই পরিশোধন ব্যবস্থা তৈরির জন্য ৯০ কোটি টাকার খরচ আধাআধি হওয়ার কথা ছিল। অর্ধেক (৪৫ কোটি) জোগানোর কথা ছিল রাজ্যের। আর বাকি অর্ধেক চর্ম ব্যবসায়ীদের। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বানতলায় চুক্তি অনুযায়ী পরিকাঠামো তৈরি করে দেয়নি নির্মাতা সংস্থা। তাই অর্ধেক টাকা দিতে চাননি তাঁরাও। বিস্তর টালবাহানার পরে শেষ পর্যন্ত চর্ম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রফার পথেই হাঁটল রাজ্য। শিল্প দফতর জানাল, ব্যবসায়ীরা ৭ কোটি টাকা দিলেই চলবে। বাকিটা জোগাবে রাজ্য। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এর ফলে চর্মনগরীর বাকি পরিকাঠামো গড়ার জন্য কেন্দ্রীয় ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হল ঠিকই, কিন্তু তেমনই ডালমিয়াদের জন্য ৩৮ কোটি গুনাগার দিতে হল রাজ্যকেই।
সেপ্টেম্বরেই বিরোধে ইতি টেনে চর্ম ব্যবসায়ীদের চিঠি দেয় রাজ্য। সেখানে বলা হয়,৭ কোটি টাকা দিয়েই বকেয়া মিটিয়ে ফেলা যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ওই টানাপড়েনের জেরে এতদিন আটকে ছিল নতুন কেন্দ্রীয় ঋণ। কারণ, পুরনো হিসেব না-মিলিয়ে নতুন করে আর ধার দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছিল তারা। চর্ম ব্যবসায়ীদের ভাগের ৪৫ কোটি ঋণ হিসেবে রাজ্যকে আগেই দিয়েছিল কেন্দ্র। এ বার তাদের কাছে নতুন ধার পাওয়া সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি।
১৯৯৫ সালে কলকাতায় দূষণ কমাতে ট্যাংরা, তপসিয়া এলাকার ৫৩৮টি ট্যানারিকে সরানোর নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তৈরি হয় বানতলা চর্মনগরী। কিন্তু প্রথম দিন থেকে সেই দূষণেরই ভূত তাড়া করেছে তাকে।
চর্মনগরীর যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরির দায়িত্বে ছিল এম এল ডালমিয়া অ্যান্ড কোম্পানি। কিন্তু শুরু থেকে বিতর্ক মাথাচাড়া দেয় বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থাকে ঘিরে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কমন এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থার ছ’টি মডিউল তৈরির কথা ছিল। হয়েছে মাত্র চারটি।
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বর্জ্য ব্যবস্থা তৈরির খরচ ধরা হয়েছিল ৬৫ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে অভিযোগ, প্রশাসনিক উদাসীনতা ও নির্মাতার গড়িমসিতে প্রকল্প ক্রমে পিছোতে থাকে। ড়ে যায় খরচও। ছ’টি মডিউল তৈরির জন্য তা পৌঁছয় ১৩৫.৪৪ কোটিতে। নির্মাতার ভুলের মাসুল গুনে তা দিতে চর্ম ব্যবসায়ীরা বেঁকে বসলে, শুরু হয় টানাপড়েন। অবশেষে চারটি মডিউল তৈরির কথা হয়। খরচ ৯০ কোটি। চুক্তি মাফিক এরই অর্ধেক (৪৫ কোটি) দেওয়ার কথা ছিল চর্ম ব্যবসায়ীদের।
ওই ব্যবসায়ীদের সংগঠন কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, বর্জ্য ব্যবস্থায় গলদ আছে। অধিকাংশ জায়গায় পাইপ পাতা হয়নি। ডালমিয়াদের বিরুদ্ধে রাজ্যকে বহু বার জানিয়েও মেলেনি সুরাহা। নির্মাতা সংস্থা অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তবে রাজ্যকে খেসারত দিতে হলেও এক দশক পুরনো বিতর্কের নিষ্পত্তি হল অবশেষে। এর পরে চর্মনগরীর পরিকাঠামো গড়ার কাজ কেমন এগোয়, এখন সে দিকেই চোখ সকলের।