ছবি প্রতীকী
রাজ্যে এখনও কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের (ইপিএফ) আওতায় থাকা প্রায় ২.৫ লক্ষ কর্মীর আধার কার্ডের সঙ্গে তাঁদের পিএফ অ্যাকাউন্ট সংযুক্ত হয়নি। অথচ পিএফ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছিল, ৩১ অগস্টের মধ্যে সংযুক্তিকরণ না-হলে পিএফের টাকা জমা বন্ধ করে দেওয়া হবে। সূত্রের খবর, সেই অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর থেকেই রাজ্যে ওই আড়াই লক্ষ কর্মীর পিএফ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ছে না। অভিযোগ পেয়ে ওই নির্দেশ আপাতত স্থগিত রাখার আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না। বলেছেন, অনেকেই করোনার জন্য পিএফ-আধার জুড়তে পারেননি। এখন তা সারছেন। ফলে কড়া পদক্ষেপ করার আগে সাধারণ মানুষকে আরও একটু সময় দেওয়া দরকার।
পিএফ কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন, অগস্টের মধ্যে কোনও কর্মীর পিএফ-আধার যোগ না-হলে ১ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর পিএফ অ্যাকাউন্টের সব কাজ-কর্ম থমকে যাবে। তাঁর বেতন থেকে কেটে নেওয়া এবং নিয়োগ-কর্তার দেওয়া টাকা, দু’টি অংশের কোনওটাই জমা পড়বে না। আধার সংযুক্তি না-হওয়া পর্যন্ত তা নিয়োগকারীর কাছে থাকবে। পিএফের বাকি পরিষেবাও মিলবে না। কেউ চাকরি ছাড়লে পিএফের টাকা তুলতে পারবেন না। তহবিল থেকে অগ্রিম নেওয়া যাবে না। অ্যাকাউন্টে আধার জুড়লে ফের পুরনো নিয়মে স্বাভাবিক হবে সব কিছু।
রাজ্যের বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাকালে এতটা কড়া হওয়া উচিত নয়। এমন নয় পিএফ কর্তৃপক্ষের এই কড়াকড়িতে আর্থিক ভাবে কোনও লোকসান হবে কারও। তবে বিষয়টি ঘিরে জটিলতা তৈরি হবে। আশঙ্কাও দানা বাঁধবে পিএফের টাকা ঠিকঠাক পাওয়া নিয়ে। তাঁদের মতে, অতিমারির জেরে এমনিতেই যাঁরা চূড়ান্ত বিধ্বস্ত, তাঁদের পিএফের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগে রাখা ঠিক নয়। একই দাবি বেচারামবাবুর। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী বলছেন, ‘‘চটকল, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প, বিড়ি শিল্প, চা বাগান-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রায় আড়াই লক্ষ কর্মী সংযুক্তির কাজ সারতে পারেননি। তাঁরা উদ্বেগে রয়েছেন।’’ সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, অনেকের আধার কার্ডের তথ্য সংশোধন করাতে হবে। না-হলে পিএফের সঙ্গে জোড়া যাবে না। সেই কারণেও একটু বাড়তি সময় দরকার।
আধার-পিএফ সংযুক্ত করতে বিভিন্ন কারখানার মধ্যেই শিবির করার ব্যবস্থা হচ্ছে, জানিয়েছেন বেচারামবাবু। ওই শিবিরে আধার কার্ডে ভুল তথ্য থাকলে, তা-ও সংশোধন করা যাবে। তিনি বলেন, ‘‘চা বাগানে আগেই শিবির চালু হয়েছে। চটশিল্পে সম্প্রতি হাওড়ার লাডলো চটকলে প্রথম শিবির হয়েছে। রাজ্যের ৭০টি চটচকলেই ওই ব্যবস্থা হবে।’’
পিএফের আঞ্চলিক কমিশনার কৃষ্ণ শঙ্কর অবশ্য বলছেন, ‘‘প্রতারণার অনেক অভিযোগ পাই। জালিয়াতির ফলে এক জনের টাকা অন্যের পিএফ অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। আধার যুক্ত হলে তা কমবে।’’ তাঁর দাবি, এ ছাড়া আধার কার্ডের তথ্যের সঙ্গে পিএফে নথিভুক্ত সদস্যের নাম, পিতার নাম ইত্যাদি তথ্যের ফারাক দেখা যাচ্ছে। ফলে আটকে যাচ্ছে তহবিলের অ্যাকাউন্ট। ওই তথ্য সংশোধনও জরুরি। পিএফ কর্তৃপক্ষ জানান, পিএফের নথির ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য সঠিক তথ্য-সহ আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট সদস্য এবং সংস্থা কর্তৃপক্ষকে যৌথ ভাবে পিএফ দফতরে জমা দিতে হবে। আর আধার কার্ডের তথ্য সংশোধন করাতে হবে আধার পরিষেবা কেন্দ্রে গিয়ে।