লগ্নিকারী খোঁজার পথে পা বাড়িয়ে প্রথমেই হোঁচট খেল রাজ্যের হার্ডওয়্যার পার্ক।
সোনারপুরে প্রায় এগারো একর জমির উপর তৈরি হার্ডওয়্যার পার্কে লগ্নিকারী টানতে অনলাইনে জমি নিলাম বা ই-অকশন করেছিল রাজ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, প্রথম দফায় এই নিলামে সাড়া পাওয়া যায়নি। তার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে জমির চড়া দাম। একর প্রতি তিন কোটির কাছাকাছি ন্যূনতম দর বা ‘রিজার্ভ প্রাইস’ ধরা হয়েছিল।
এ জন্য দ্বিতীয় বার দরপত্র চেয়েছে লগ্নিকারী খুঁজতে মরিয়া রাজ্য। নির্ধারিত সময়সীমা আগামী ৪ নভেম্বর। পার্কের দায়িত্বে থাকা রাজ্য সরকারি সংস্থা ওয়েবেল বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি।
বছর তিনেক আগে জোরকদমে সোনারপুরে পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু আইনি লড়াইয়ের জেরে থমকে যায় রাজ্য পরিকল্পিত হার্ডওয়্যার পার্ক। প্রায় ১১ একরের এই পার্কে আইনি জটে জড়িয়ে যায় ৫ একরের একটি জমি। জমির সঠিক দাম দেওয়া হয়নি বলে এক জমি-মালিক রাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর জেরে আটকে যায় এই শিল্পতালুকে লগ্নি। মামলার নিষ্পত্তি অবশ্য এখনও হয়নি। তবে সেই আইনি লড়াইকে পাশে সরিয়ে রেখেই বাকি জমি বিপণন করতে মাঠে নেমেছিল রাজ্য।
সোনারপুরে ২০১০ সালে বাম জমানাতেই হার্ডওয়্যার পার্কের শিলান্যাস হয়। প্রায় ৯ কোটি টাকা দিয়ে জমি কেনা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা মতো ১১ একরের পার্কে ২০টি সংস্থার জায়গা হওয়ার কথা। তবে সে সময়ে পরিকাঠামোয় খামতি ও আইনি সমস্যায় আগ্রহী লগ্নিকারীদের সংখ্যাও কমতে শুরু করে বলে সংশ্লিষ্ট শিল্পের ক্ষোভ।
২০১৩ সালে পার্কের রাস্তা-ঘাট, নিকাশি ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগের মতো ন্যূনতম পরিকাঠামো গড়ে তুলতে রাজ্য প্রায় ৮ কোটি টাকা মঞ্জুর করে। দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে হার্ডওয়্যার পার্ক তৈরি হওয়ার কথা ছিল। হিসেব মতো ২০১৫ সালে পার্ক পুরোদমে চালু করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সরকারের।
সফটওয়্যারে লগ্নি টানার দৌড় দেরিতে শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গ। সেই ভুল হার্ডওয়্যার শিল্পের ক্ষেত্রে শুধরে নিতে চেষ্টা করেছিল বাম সরকার। আর বর্তমান সরকার আর এক ধাপ এগিয়ে হার্ডওয়্যার শিল্পের তালিকায় নিয়ে এসেছে সৌর বিদ্যুৎ তৈরির যন্ত্রপাতিও। এমনকী নতুন তথ্যপ্রযুক্তি নীতিতেও এই শিল্পকে বিশেষ জায়গা দেওয়া হয়েছে। তবুও এই শিল্পে দেশের বাজারে রাজ্যের ভাগ প্রায় নেই বললেই চলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২০ সালের মধ্যে ভারতে বৈদ্যুতিন শিল্পের বাজার দাঁড়াবে ৪০,০০০ কোটি ডলার। আর হার্ডওয়্যার উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০,৪০০ কোটি। অর্থাৎ চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে রয়েছে বিপুল ফারাক। যে-ফারাকই তৈরি করেছে ব্যবসার আকাশছোঁয়া সম্ভাবনা, যা ছুঁতে পারার মতো উৎপাদন পরিকাঠামো পশ্চিমবঙ্গে এখনও নেই বললেই চলে। ফলে সেই বাজার এখনও রাজ্যের অধরা।
আর শুধু বাজারই নয়। আটকে গিয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগও। সরকারি সূত্রে খবর, হার্ডওয়্যার পার্ক চালু হলে প্রায় হাজার দুয়েক প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে। পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ কমপক্ষে দশ হাজার। রাজ্য সরকারি সংস্থা ওয়েবেল এই পার্ক তৈরি ও চালু করার দায়িত্বে রয়েছে।