ভাগ্যিস পাঁচ রাজ্যে ভোট আসছে! না-হলে এত দিনে হয়তো ফের বাড়তে শুরু করত পেট্রল-ডিজ়েলের দাম— বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড) দর বাড়তে দেখে দেশ জুড়ে এই জল্পনা শুরু হয়েছে আগেই। সেই সঙ্গে ভোট মিটলে দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা নিয়ে কাঁপুনিও। তাতে আরও ইন্ধন জোগাচ্ছে ব্যারেলে ব্রেন্টের ৮৭ ডলার ছাড়ানো দাম। ২০১৪ সালের পরে যা সর্বাধিক। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, গত বছর পেট্রল-ডিজ়েল যখন ১০০ টাকা পার করেছিল তখনও অশোধিত তেল এত চড়া ছিল না? অথচ মোদী সরকার বিশ্ব বাজারের দিকেই আঙুল তুলেছে। তা হলে মাস দেড়েক ধরে অশোধিত তেল দামি হলেও ভারতে টানা ৭৪ দিন জ্বালানির দর স্থির থাকা কি স্বাভাবিক? আর এখানেই দানা বাঁধছে সন্দেহ। অতীতে গুজরাত, কর্নাটক-সহ বেশ কিছু রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে তেলের দামে ভোট-রাজনীতির অঙ্ক কষতে দেখার কথা মনে করাচ্ছেন বিরোধী থেকে আমজনতা সকলেই। তাঁদের আশঙ্কা, স্বস্তি হয়তো ভোট পর্যন্ত। তা পরেই বিশ্ব বাজারে চড়া দরে আমদানি খরচ বৃদ্ধির কথা মনে পড়বে।
দীপাবলির সময়ে কেন্দ্র পেট্রল ও ডিজ়েলে লিটারে যথাক্রমে ৫ ও ১০ টাকা করে শুল্ক কমিয়েছিল। বেশ কিছু রাজ্য সেই সময় ভ্যাট-ও কমায়। ফলে দাম কমে। কিন্তু তার পর থেকে তা স্থির। ১ ডিসেম্বর ব্রেন্ট ৬৮.৮৭ ডলারে নামলেও দেশের দামে নড়চড় হয়নি, হালে অশোধিত তেল চড়লেও নয়। এই অবস্থায় আবু ধাবিতে তেলের ট্যাঙ্কারে ড্রোন হামলার জেরে জোগান নিয়ে সংশয় ও বিশ্ব জুড়ে মজুত ভান্ডার কমায় ব্রেন্ট ৮৭ ডলারে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ভারত এর ধাক্কা হয়তো টের পাবে আগামী দিনে।
সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের বক্তব্য, মোদী সরকার না মানলেও গত সাড়ে সাত বছরে ভোটের সময় তেলের দর স্থির রাখা বা সম্ভব হলে ছাঁটার উদাহরণের অভাব নেই। ২০১৮ সালে কর্নাটকে ভোটের আগে ১৯ দিন দর স্থির ছিল। তখন অশোধিত তেল বেড়েছিল ব্যারেলে প্রায় পাঁচ ডলার। ভোট মিটতেই দ্রুত গতিতে টানা ১৬ দিন দাম বাড়ায় তেল সংস্থাগুলি। ২০১৭ সালে গুজরাতে ভোটের আগেও ১৪ দিন দাম এক থাকার ‘স্বস্তি’ পেয়েছিলেন মানুষ। ওই বছরেই জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে পঞ্জাব, গোয়া, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ ও মণিপুরের ভোটের সময় ফের সাময়িক ক’দিনের স্বস্তি মেলে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় নামমাত্র দর বৃদ্ধি হলেও, তা মিটতেই বৃদ্ধির হার বাড়তে থাকে। ভোটের ঠিক আগে দর স্থির ছিল গত বছরেও।
অতীতের এই অভিজ্ঞতা থেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন মানুষ। তেলের দরের আরও বেশি ছেঁকা থেকে ভোটের দামামা কত দিন রক্ষাকবচ দেয়, তা নিয়েই চর্চা বাজারে।