যতটা গর্জেছিল, তার ধারেকাছেও বর্ষাল না স্পেকট্রাম নিলাম।
গত ১ অক্টোবর শুরু হওয়ার পরে ৭ টেলি পরিষেবা সংস্থার দর হাঁকার লড়াই শেষ হল বৃহস্পতিবার। ৩১ রাউন্ডের পরে। দেখা গেল, সব মিলিয়ে বিক্রি হয়েছে নিলামে তোলা ২,৩৫৪.৫৫ মেগাহার্ৎজ স্পেকট্রামের মাত্র ৪০%। দর জমা পড়েছে মোট ৬৫,৭৮৯ কোটি টাকার। আর ৪জি পরিষেবা দেওয়ার জন্য যে ৭০০ মেগাহার্ৎজ ব্যান্ডের স্পেকট্রামের দাম সবচেয়ে বেশি রাখা হয়েছিল, তার জন্য দরই হাঁকেনি কোনও সংস্থা।
টেলিকম মন্ত্রী মনোজ সিন্হার দাবি, মোট ওঠা দামের মধ্যে ৩২ হাজার কোটি টাকা শুরুতেই (এই অর্থবর্ষে) কেন্দ্রের ঘরে জমা দেবে সংস্থাগুলি। গত পাঁচ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। বাকি টাকা জমা পড়বে কিস্তিতে। অথচ এই নিলাম থেকে চলতি আর্থিক বছরে ৬৪,৫৮১ কোটি রাজকোষে আসতে পারে বলে বাজেটে ধরে রেখেছিল মোদী সরকার। শুধু তা-ই নয়। বিভিন্ন ব্যান্ডের স্পেকট্রামে যে ন্যূনতম দর বেঁধে দেওয়া হয়েছিল এবং যে পরিমাণ স্পেকট্রাম এ বার নিলামে তোলা হয়েছিল, তাতে প্রত্যাশা ছিল আরও অনেক বেশি। নিলামে চড়ানো সমস্ত স্পেকট্রাম বিক্রি হলে, কেন্দ্রের ঘরে আসার কথা ছিল অন্তত ৫ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা। স্পেকট্রাম লিজ থেকে কেন্দ্রের আদত রোজগার তার ধারেকাছেও পৌঁছয়নি। বরং আটকে গিয়েছে সম্ভাবনার ১২ শতাংশের আশেপাশে। ফলে এখনও পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম স্পেকট্রাম নিলামকে এক অর্থে ব্যর্থই মনে করছেন অনেকে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, এ বারের নিলাম সে ভাবে সাফল্যের মুখ দেখল না স্পেকট্রামের ন্যূনতম দর অত্যন্ত বেশি রাখায়। যেমন, ৭০০ মেগাহার্ৎজ ব্যান্ডের স্পেকট্রামের প্রতি মেগাহার্ৎজের ন্যূনতম দর রাখা হয়েছিল ১১,৪৮৫ কোটি টাকা। মনে করা হয়েছিল, ৪জি পরিষেবা দিতে বিপুল চাহিদার কারণে শুধু এই স্পেকট্রাম থেকেই অন্তত ৪ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তুলবে কেন্দ্র। কিন্তু নিলাম শেষে দেখা গিয়েছে, অত দাম দিয়ে ওই স্পেকট্রাম নিতে আগ্রহই দেখায়নি কোনও সংস্থা। কোনও দরপত্র জমা পড়েনি ৯০০ মেগাহার্ৎজ ব্যান্ডের স্পেকট্রামের জন্যও।
জিএসএম প্রযুক্তির টেলি পরিষেবা সংস্থাগুলির সংগঠন সিওএআইয়ের কথায়, আকাশছোঁয়া ন্যূনতম দাম রাখার কারণেই ৭০০ মেগাহার্ৎজের স্পেকট্রাম হাতে নিতে আগ্রহ দেখায়নি কেউ। তাদের আশা, পরবর্তী স্পেকট্রাম নিলামের সময় টেলিকম মন্ত্রক এ কথা মাথায় রাখবে।
মোবাইল পরিষেবার ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও লোভনীয় বাজার। যেখানে প্রতিদিন ব্যবহার হয় প্রায় ১০৫ কোটি মোবাইল হ্যান্ডসেট। ২০১৪-’১৫ সালেই টেলি পরিষেবা সংস্থাগুলির মোট ব্যবসার অঙ্ক ছিল ২ লক্ষ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। অথচ এ হেন আকর্ষণীয় বাজারেও এ বার অবিক্রিত থেকে গিয়েছে নিলামে তোলা ৬০% স্পেকট্রাম।
মূল্যায়ন সংস্থা ইকরা-র হিসেব অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরেই দেশের টেলি পরিষেবা সংস্থাগুলির ঘাড়ে চেপেছিল মোট ৩ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকার ধারের বোঝা। ২০১৪ সালের শেষে যা ছিল ২ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ভাবে লাফিয়ে ঋণ বাড়তে থাকায় চড়া দরে স্পেকট্রাম কিনতে গিয়ে ফের তা অনেকখানি বাড়াতে চায়নি কোনও সংস্থা। তার উপর বেশি দামে স্পেকট্রাম কিনলে, তার খরচ সামাল দিতে চাপ তৈরি হবে মাসুল বাড়ানোর। এখনকার গলাকাটা প্রতিযোগিতায় যা প্রায় অসম্ভব। এই সমস্ত কারণেই এ বার নিলামে তারা ‘সাবধানে খেলেছে’ বলে ধারণা অনেকের।