পর্যটনমন্ত্রী: গৌতম দেব
বাণিজ্য সম্মেলনে আসতে পারেননি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। কিন্তু সম্মেলনের মঞ্চে তাঁর পাঠানো ভিডিয়ো বার্তায় চলতি আর্থিক বছরে উত্তরবঙ্গে ২০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ টানার বার্তা দিলেন তিনি। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই)-নর্থবেঙ্গল শাখার উদ্যোগে শনিবার শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়ির একটি অভিজাত হোটেলে হওয়া উত্তরবঙ্গ কনক্লেভে ওই ভিডিয়ো বার্তা দেখানো হয়। সিআইআই কর্তৃপক্ষ এই আর্থিক বছরে উত্তরবঙ্গে প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছিল। অর্থমন্ত্রী তা বাড়িয়ে ২ হাজার কোটি টাকা করানোর আর্জি জানান। এ দিন উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে থাকা প্রথম বাণিজ্য সচিব মহম্মদ শামছুল আরিফ। ছিলেন নেপাল এবং ভুটানের প্রতিনিধিরাও। বিনিয়োগ, রফতানি বাণিজ্য এবং পরিকাঠামোর বিষয়কেই এ দিনের সম্মেলনে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এ দিন ভিডিয়ো বার্তায় মন্ত্রী বলেন, ‘‘এই আর্থিক বছরে ১৬৭৮ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাবের কথা জানিয়েছে সিআইআই। তাদের আমি বলব উত্তরবঙ্গে এই আর্থিক বছরে যাতে ২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়।’’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, রাজ্যে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পখাতে উদ্যোগপতিদের ব্যাঙ্কগুলো যাতে ৭০ হাজার কোটি টাকা অর্থ সাহায্য করে সেই লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। তার একটা অংশ উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রেও মিলবে। তাতে উত্তরবঙ্গের আটটি জেলার উদ্যোগপতিরাও উপকৃত হবেন। ইতিমধ্যেই ৬ মাসে অর্ধেকের মতো অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ছিলেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে শিল্পের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। সরকার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে দিচ্ছে। উদ্যোগীরা আসুন।’’ পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে হোমস্টে ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিনিয়োগের বিষয়টি তুলে ধরেন। গজলডোবায় দিন কয়েক আগে হোটেল চালু করেছেন শিলিগুড়ির এক উদ্যোগী। তাঁকে সাধুবাদ জানান পর্যটনমন্ত্রী। এ দিনের সম্মেলনে উত্তরবঙ্গে পর্যটনের সম্ভাবনা নিয়ে ‘লুকিং ফরওয়ার্ড টুয়েন্টি টুয়েন্টি অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক আলোচনাসভা হয়। একটি পর্যটন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানান, ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশকে নিয়ে ট্যুরিজম সার্কিট গড়ে পর্যটনের উন্নয়নের লক্ষে এ দিন বিভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই দেশগুলোকে নিয়ে পর্যটনের প্রসারে সাধারণ নীতি তৈরির প্রস্তাব রয়েছে। আর একটি পর্যটন সংস্থার অন্যতম কর্ণধার রাজ বসু জানান, হোম-স্টে অনুমোদনের ক্ষেত্রে গ্রামীণ এবং শহর এলাকা ভেদে সুবিধা দেওয়ার আলাদা নীতি হওয়া জরুরি। সেই প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয়ের সার্থে জেলাস্তরে যে কমিটি রয়েছে তাতে বেসরকারি পর্যটন সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদেরও রাখা দরকার বলে আলোচনায় উঠে আসে।
সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গ জোনের চেয়ারম্যান আনন্দ কুমার আগরওয়ালের কথায়, ‘‘অর্থমন্ত্রী যা চাইছেন আগামী মার্চের মধ্যে আমরা তা করার চেষ্টা করব। ইতিমধ্যেই অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে।’’ সিআইআই সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি সিমেন্ট সংস্থা উত্তরবঙ্গে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। ফুলবাড়ি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে বলেও জানান তারা। জলপাইগুড়িতে শিল্পাঙ্গন নামে যে উদ্যোগ গড়ে উঠছে সেখানে ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হতে চলেছে। এ ছাড়া মালদহ, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুরের মতো এলাকায় কয়েকশো কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে বলে জানান হয়েছে সিআইআই-এর তরফে।