প্রতীকী ছবি।
দেশ এবং অর্থনীতির পরিস্থিতি যা-ই হোক না-কেন, বুলেরা যেন কিছুতেই বাজারের দখল ছাড়তে রাজি নয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতিকে নানান দিক থেকে আঘাত করা সত্ত্বেও শেয়ার সূচকের দৌড় দেখে অন্তত তেমনই মনে হচ্ছে। গত সোমবার একাধিক প্রতিকূল খবর প্রকাশ হওয়ার পরেও সেনসেক্স ৫১৫ পয়েন্ট বেড়েছিল। পরের দু’দিন সামান্য ঝিমিয়ে থাকলেও বৃহস্পতিবার ৩৮৩ পয়েন্ট উঠে সূচকটি পৌঁছে যায় ৫২,২৩২ অঙ্কে। ভেঙে দেয় আগের নজির (গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৫২,১৫৪)। একই দিনে ১১৪ পয়েন্ট বেড়ে নিফ্টি পৌঁছয় ১৫,৬৯০ অঙ্কে। তা-ও রেকর্ড।
কিন্তু অর্থনীতির বাস্তব পরিস্থিতিটা কী? সাম্প্রতিক কালে যে সব পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে, তা দেখে নেওয়া যাক এক ঝলকে:
• ২০২০-২১ অর্থবর্ষে জিডিপি ৭.৩% সঙ্কুচিত হয়েছে।
• একই বছরে রাজকোষ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে জিডিপির ৯.৩%।
• এপ্রিলে আটটি প্রধান শিল্প ক্ষেত্রের উৎপাদন বেড়েছে ৫৬.১%। কিন্তু, আগের বছরের এপ্রিলের নিচু ভিতের তুলনায় (যখন দেশে পুরো লকডাউন চলছিল) এই হিসেব কষা হয়েছে বলে বৃদ্ধি এতটা আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে।
• আইএইচএস মার্কিটের পরিষেবা সূচক মে মাসে নেমেছে ৪৬.৪-তে। যা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সঙ্কোচনকে ইঙ্গিত করে। এই সূচক ৫০-এর উপরে থাকার অর্থ বৃদ্ধি। এপ্রিলে তা ছিল ৫৪।
• এখানেই শেষ নয়। ওই সূচকের বড় পতন ঘটেছে শিল্প ক্ষেত্রেও। এপ্রিলের ৫৫.৫ থেকে মে মাসে তা নেমেছে ৫০.৮-এ। যা ১০ মাসের সর্বনিম্ন।
• এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে দেশে গাড়ি বিক্রি কমেছে অনেকটাই।
এখন প্রশ্ন হল, এই প্রতিকূল অবস্থাতেও বাজার উঠছে কোন শক্তিতে ভর করে। আসলে গত অর্থবর্ষে অর্থনীতির ৭.৩% সঙ্কোচন লগ্নিকারীদের যতটা না হতাশ করেছে, তার চেয়ে বেশি উৎসাহিত করেছে গত ত্রৈমাসিকের ১.৬% বৃদ্ধি। জিডিপি সঙ্কোচন ও রাজকোষ ঘাটতিও আশঙ্কার চেয়ে কম হয়েছে বলে ধারণা তাঁদের। তার উপরে উৎসাহ জুগিয়েছে মে মাসে ৬৮.৫% রফতানি বৃদ্ধি। টিকাকরণ খুব বেশি গতি না-পেলেও সংক্রমণ অনেকটা কমা সূচকের উত্থানের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ, সামগ্রিক পরিসংখ্যানের বদলে গত বছরের লকডাউন পরবর্তী সময়ের আর্থিক অগ্রগতিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন লগ্নিকারীদের বড় অংশ।
সূচকের এই উত্থানে সন্তুষ্ট হলেও বহু লগ্নিকারীই কিন্তু ভবিষ্যতে সতর্ক হয়েই পা ফেলতে চান। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ১১৬ কোটি ভারতীয়ের কত সময়ের মধ্যে টিকাকরণ সম্ভব হবে তা নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। আশঙ্কা করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ ঘিরেও। তা ছাড়া বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী, পরিস্থিতির চেয়ে সূচক বেশি উঠে থাকলে বিক্রির চাপ আসে। সংশোধন দেখা যায়। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক প্রতিকূল থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু দিন ধরে তা হচ্ছে না বলেই বাজারে বুদ্বুদ তৈরি হয়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে সূচকের পতনের সম্ভাবনা থাকছে। পাশাপাশি, গত এক বছরে আকর্ষণীয় হারে বেড়েছে ইকুইটি ফান্ডের ন্যাভও। এতে খুশি ফান্ডের লগ্নিকারীরা। এখনকার উঁচু বাজারে একলপ্তে লগ্নি না-করে, এসআইপি পথে ধীরে ধীরে লগ্নিতে ঝুঁকি কম বলে মনে করছেন অনেকে।
এ দিকে, প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই সুদ বদলায়নি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। সে ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থাগুলিতেও সুদের বিশেষ হেরফের হবে না বলেই ধারণা। তবে চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৯.৫% করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
বছরের শেষ তিন মাসে আইটিসির আয় ২২.৬% বাড়লেও সামগ্রিক মুনাফা কমে হয়েছে ৩৮১৯ কোটি টাকা। সংস্থাটি ১ টাকার শেয়ারে ৫.৭৫ টাকা ডিভিডেন্ড দেবে।
(মতামত ব্যক্তিগত)