ফাইল চিত্র।
একের পর এক হাজারের মাত্রা পেরিয়েও ক্লান্তি নেই শেয়ার বাজারের। অর্থনীতি সম্পর্কে মাঝেমধ্যেই পাওয়া নেতিবাচক খবরেও দমছে না। আর এই দৌড়ে শুধু বড় নয়, মাঝারি ও ছোট সংস্থাগুলির সূচকও ফুলেফেঁপে উঠছে। ৯ ডিসেম্বর প্রথম ৪৬ হাজারের ঘরে বন্ধ হয়েছিল সেনসেক্স। এক মাস পরে তা ৪৯ হাজারের কাছে (৪৮,৭৮৩ পয়েন্টে)। নিফ্টিও এখন ১৪,৩৪৭। এই অবস্থায় করোনার প্রতিষেধকের পাশাপাশি লগ্নিকারীদের নজর এখন কর্পোরেট সংস্থাগুলির হিসেবের খাতায়। গত সপ্তাহে শুরু হয়েছে চলতি অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আর্থিক ফল প্রকাশের মরসুম। অক্টোবর-ডিসেম্বরে বিভিন্ন সংস্থার আয়, লাভ, ক্ষতির হিসেব দেখে কোন শিল্প কতটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, অর্থনীতির অবস্থা কোন দিকে গড়াচ্ছে আঁচ করার চেষ্টা চলবে।
ইতিমধ্যেই ফল বেরিয়েছে টিসিএসের। টাটা গোষ্ঠীর সংস্থাটির আয় ৩৯,৮৫৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪২,০১৫ কোটি। নিট লাভ ৭.১৮% বেড়ে ছুঁয়েছে ৮৭০১ কোটি। শেয়ার পিছু ৬ টাকা অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে টিসিএস। চলতি সপ্তাহে ফল প্রকাশ করবে ইনফোসিস, উইপ্রো, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক, টাটা এলেক্সি, সিইএসসি, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, মাইন্ডট্রি, বজাজ ফিনান্স ইত্যাদি। সূচকের উপরে অনেকটাই প্রভাব ফেলবে এই ফল।
অর্থনীতি দ্রুত ছন্দে ফিরবে, মূলত এই আশাতেই উঠে চলেছে ভারতের শেয়ার বাজার। তবে প্রত্যাশা বিদেশি লগ্নিকারীদের যতটা, ভারতীয়দের হয়তো ততটা নয়। যে কারণে গত শুক্রবার বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি যখন ৬,০৩০ কোটি টাকা ঢেলেছে সেখানে, তখন দেশি সংস্থাগুলি বেেচছে ২৩৭২ কোটি টাকার শেয়ার।
• উৎসবের মরসুম শেষ, এ বার চাহিদা দ্রুত বাড়বে তো?
• রুজি-রোজগার নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও বহাল।
• উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই বলছে, ডিসেম্বরে দেশে বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৯.১%। ছ’মাসের মধ্যে সব থেকে বেশি।
• বাজারে চড়া মূল্যবৃদ্ধির হার।
• তার উপরে পেট্রল-ডিজেলের দাম বিপুল বেড়েছে। যা খাদ্যপণ্য-সহ সব কিছুর দামকে আরও ঠেলে তুলতে পারে।
• রোজগার না-থাকায় কিংবা না-বাড়ায় অনেকের কাছে হাত খুলে খরচের টাকাই নেই।
• অনেকে আবার খরচ করার আগে দু’বার ভাবছেন।
• চাহিদা চোখে পড়ার মতো মাথা না-তুললে বহু কল-কারখানা উৎপাদনে গতি আনতে পারছে না।
• অনেক জায়গাতেই
রয়েছে কর্মীর অভাব।
• এখনও বিপর্যস্ত হোটেল, রেস্তরাঁ, পর্যটনের মতো পরিষেবা শিল্প।
• আইএইচএস মার্কিট ইন্ডিয়ার সমীক্ষায় পরিষেবা শিল্পে কর্মকাণ্ড নির্দেশক সূচক ডিসেম্বরে ৫২.৩ (৫০-এর বেশি হওয়া মানে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বৃদ্ধি)। নভেম্বরের ৫৩.৭-এর থেকে কম তো বটেই, তিন মাসেও সর্বনিম্ন।
• খোদ সরকারই চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি ৭.৭% কমবে বলে মনে করছে।
• রাজকোষ ঘাটতি হতে পারে অনুমানের দ্বিগুণ (৭%)।
লাভ তুলতে ইউনিট বিক্রি করছেন ফান্ডের লগ্নিকারীরাও। তাঁরা নভেম্বর ও ডিসেম্বরে শেয়ার নির্ভর (ইকুইটি) ফান্ডের যথাক্রমে ১২,৯১৯ কোটি ও ১০,১৪৭ কোটি টাকার ইউনিট বেচেছেন। ওই দু’মাসে এসআইপি-র পথে ফান্ডে লগ্নিও হয়েছে যথাক্রমে ৭,৩০০ কোটি ও ৮,৪১৮ কোটি টাকা। শেয়ারের দাম বাড়ায় ও ডেট ফান্ডে ১৩,৮৬২ কোটি টাকার লগ্নি আসায় মিউচুয়াল ফান্ডের মোট তহবিল বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩১ লক্ষ কোটি।
তবে করোনার প্রতিষেধক প্রায় হাতের মুঠোয় আসার তথ্য যতই আশা জাগাক, নেতিবাচক খবরগুলি উড়িয়ে দেওয়ার নয়। খোদ কেন্দ্রেরই পূর্বাভাস, চলতি অর্থবর্ষে জিডিপি সঙ্কুচিত হতে পারে ৭.৭%। কৃষি বাদে কম-বেশি সঙ্কোচন হবে প্রায় প্রতিটি শিল্পে। ফলে কাজ হারাবেন আরও অনেকে। অবস্থা ভাল নয় পরিষেবা শিল্পের। গত মাসে তার সূচক নভেম্বরের থেকে নেমেছে।
(মতামত ব্যক্তিগত)