Share Market

Share market index: সূচক তুঙ্গে, আশঙ্কায় সুদ নির্ভর মানুষ

করোনার সঙ্গে ঘর করার দেড় বছর পার হয়ে গেল। গোটা দুনিয়াকে পাল্টে দিয়েছে এই অতিমারি।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:১৯
Share:

ফাইল চিত্র।

করোনার সঙ্গে ঘর করার দেড় বছর পার হয়ে গেল। গোটা দুনিয়াকে পাল্টে দিয়েছে এই অতিমারি। বড় রকমের চাপ এসেছে বিশ্ব অর্থনীতির উপর। সেই চাপ সবচেয়ে বেশি অনুভব করছেন আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষ। বদলে যাওয়া এই অর্থনীতিতে পাল্টেছে বিনিয়োগের দুনিয়াও। করোনার প্রাদুর্ভাবে প্রথম দিকে বড় রকমের ধস নেমেছিল ভারতের শেয়ার বাজারে। পরে লকডাউন শিথিল হয়ে উৎপাদনের চাকা ঘুরতে শুরু করায় ফের মাথা তোলে সূচক। ভবিষ্যতে অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে, এই আশায় দুরন্ত গতিতে তা ছুটতে শুরু করে। গড়তে থাকে একের পর এক নজির। গত ২ অগস্ট যে সেনসেক্স ছিল ৫২ হাজারের ঘরে, ৩ সেপ্টেম্বর তা ৫৮ হাজারের কোঠায় ঢুকে পড়ে। বস্তুত, গত সপ্তাহেও নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে দুই সূচক সেনসেক্স (৫৮,৩০৫) এবং নিফ্টি (১৭,৩৭৮)। বাজারের এই উত্থানে একুইটি ভিত্তিক ফান্ডের লগ্নিকারীরাও ইউনিটের দাম (ন্যাভ) ৬০% থেকে ১০০% বাড়তে দেখেছেন প্রায় প্রতিটি প্রকল্পে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে লগ্নিকারীদের একাংশ পাল্টে ফেলেছেন বিনিয়োগের ধাঁচ। শেয়ার বাজারের নাগাড়ে উত্থান অনেককেই টেনে এনেছে শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে। তবে ভুললে চলবে না, লগ্নিকারীদের কম-বেশি ৯৫ শতাংশই কিন্তু এখনও রয়েছেন সুদের দুনিয়ায়। তাঁরা নির্ভর করেন ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরের বিভিন্ন প্রকল্পের উপরে। ফলে শেয়ার বাজার লগ্নিকারীদের মুনাফার মুখ দেখালেও, বড় অংশের মানুষেরই কিন্তু নিচু সুদের এই জমানায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে। অতিমারির সময়ে যখন দ্রুত দাম বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের তখন ব্যাঙ্ক, ডাকঘর এবং অন্যান্য সুদ নেমে এসেছে তলানিতে। ফলে কমে আসা সুদের আয়ে মূল্যবৃদ্ধিকে অতিক্রম করা সম্ভব হচ্ছে না তাঁদের পক্ষে।

করোনার আগমনের সময়ে ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে বড় রকমের কোপ পড়েছিল। ২০২০ সালের ১ এপ্রিল ভাল রকম ছাঁটাই হয়েছিল পিপিএফ, এনএসসি, সিনিয়র সিটিজেন্স সেভিংস স্কিমের সুদ। ৮% থেকে সুদ কমিয়ে ৭.৪% করা হয় প্রধানমন্ত্রী বয়োবন্দনা পেনশন প্রকল্পেও। অন্য দিকে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে গত বছরের মে পর্যন্ত ২২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে রেপো রেট ৪ শতাংশে নামিয়ে আনে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। এই হার এতটা কমায় ব্যাঙ্কগুলিও একই পরিমাণ বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে তারও বেশি সুদ কমায় তাদের বিভিন্ন প্রকল্পে। ফলে উঁচু মূল্যবৃদ্ধির চাপ দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে সুদ নির্ভর বিরাট সংখ্যক মানুষের।

Advertisement

এই প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার। খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার সামান্য কমলেও এখনও তা ৫.৫৯%। ১০ বছর মেয়াদি ঋণপত্রের ইল্ড অনেকটা বেড়ে ৬.২ শতাংশের আশেপাশে। সব মিলিয়ে এমন পরিস্থিতিতে সুদ বাড়ানোটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পণ্যের দাম কমলে সুদ কমানো হয়, কিন্তু বাড়লে সব সময়ে তা বাড়ানো হয় না। ঠিক যে অভিযোগ রয়েছে জ্বালানি তেলের দামের ক্ষেত্রে। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর বাড়লে যে ভাবে দেশে তেলের দাম বাড়ে, কমলে তার উল্টোটা তত তাড়াতাড়ি হয় না।

আদতে সরকারের লক্ষ্য সুদ আরও কমানো। সেটা মালুম হয়েছিল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে গত ৩১ মার্চ সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে। সেখানে স্বল্প সঞ্চয়ে এক ধাক্কায় অনেকটা সুদ ছাঁটার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা প্রত্যাহার করা হয়। সম্ভবত পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের কারণেই। ৩০ সেপ্টেম্বর অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকের সুদ ঘোষণা। মানুষ আশঙ্কায় রয়েছেন, ফের সুদ কমানো হবে না তো!

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement