প্রতীকী ছবি।
দিনে ৩.৮৬ লক্ষ ছুঁয়ে ফেলা করোনা সংক্রমণ আর প্রায় ৩৫০০ মৃত্যু কাঁপুনি ধরাল শেয়ার বাজারেও। ফলে গত চার দিন ওঠার পরে শুক্রবার এক ধাক্কায় ৯৮৩.৫৮ পয়েন্ট পড়ল সেনসেক্স। ফের ৪৮ হাজারের ঘরে ফিরে থামল ৪৮,৭৮২.৩৬ অঙ্কে। নিফ্টিও প্রায় ২৮৪ নেমে দাঁড়িয়েছে ১৪,৬৩১.১০-এ। বিশেষজ্ঞদের একাংশের হুঁশিয়ারি, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কার্যত ভেঙে পড়া চেহারাটা অর্থনীতির পক্ষেও ভয়ানক। সংক্রমিতের সংখ্যায় রেকর্ড গড়ার পরেও অক্সিজেন, প্রতিষেধক, ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার অভাব, তার ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাধা হবে কি না সেই প্রশ্ন উঠছে। যে কারণে অস্থির বাজার।
তাঁদের অভিযোগ, ভোট নিয়ে ব্যস্ত না-থেকে গত বছরের সংক্রমণ পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত ছিল। কারণ, দ্বিতীয় ঢেউয়েই এই অবস্থা। তৃতীয় ঢেউ এলে? বাজার মহলের দাবি, আরও অনেক জায়গায় লকডাউন শুরু করতে হওয়ায় অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারে। যে কারণে ভীত লগ্নিকারীরা সামান্য লাভ হতেই শেয়ার বেচে তা তুলে নিচ্ছেন।
বাজার বিশেষজ্ঞ কমল পারেখেও বলছেন, ‘‘গত কয়েকদিনের উত্থানে বহু শেয়ারের দাম বেড়েছে। কিন্তু অনেক লগ্নিকারীই সেই মুনাফা ফেলে রাখতে চাননি।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, বাজার এখন কোনও নিয়ম মানছে না। এই অস্থিরতা চলবে। দেকো সিকিউরিটিজ়ের ডিরেক্টর আশিস নন্দীর মতে, ‘‘সংক্রমণ আরও খারাপ জায়গায় যাচ্ছে। মহারাষ্ট্রে লকডাউনের মেয়াদ বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ আরও কিছু জায়গায় নতুন করে আংশিক লকডাউন শুরু হয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন লগ্নিকারীরা। অনেকেই বলছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ফলে গত অর্থবর্ষের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বিভিন্ন সংস্থার ফল ভাল হলেও, আগামী দু’তিনটি ত্রৈমাসিকে তা ফের খারাপ হতে পারে। তাই এই ধস।’’
রিলায়্যান্স সিকিউরিটিজ়ের পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান বিনোদ মোদীর আশঙ্কা, সংক্রমণ না-কমা পর্যন্ত বাজার অস্থির থাকবে। কারণ, সংক্রমণ এবং মৃত্যু নাগাড়ে বাড়ায় কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি আর্থিক কর্মকাণ্ডে আরও রাশ টানতে পারে। তবে প্রায় সকলেরই প্রশ্ন, কেন্দ্রের নেতা-মন্ত্রীরা যতই ছন্দে ফেরা নিয়ে
আশ্বাস দিন, অর্থনীতি এমন অবস্থায় ভাল থাকে কি করে? আশিসের মতে, ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি অন্য অনেকের তুলনায় দ্রুত মাথা তুলবে ধরে নিয়ে যে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি একসময় নাগাড়ে লগ্নি করেছে, তাদেরও এখন মাঝে-মধ্যেই শেয়ার বেচতে দেখা যচ্ছে। শুক্রবারই তারা ৩৪৬৫.০৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, উঁচু বাজারে সংশোধন হওয়াটাই দস্তুর। তবে এটা সংক্রমণজিনত আশঙ্কায় পতন। ফলে প্রতিষেধক প্রয়োগের ব্যবস্থায় উন্নতি না-হলে আগামী দিনে অর্থনীতি এবং বাজার আরও ভুগতে পারে।
রিলায়্যান্সের মুনাফা: টেলিকম, রিটেল, পেট্রোকেম— তিন ব্যবসাই মাথা তোলায় জানুয়ারি-মার্চে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সার্বিক নিট মুনাফা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। দাঁড়িয়েছে ১৩,২২৭ কোটি টাকায়। আয়ও ১৩.৬% বেড়ে হয়েছে ১,৭২,০৯৫ কোটি। জিয়ো প্ল্যাটফর্মের নিট মুনাফা ৪৭.৫% বেড়ে হয়েছে ৩,৫০৮ কোটি।