মন্ত্রমুগ্ধ: চোখ আটকে টিভির পর্দায়। বাজারের বিদ্যুৎ গতির দৌড়ে। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের ভিতরে বড় পর্দায় সূচকের উত্থান। এপি
ভোটের ফল এখনও বেরোয়নি। ত্রিশঙ্কু সংসদের আশঙ্কা কমিয়ে শুধু স্থায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের ইঙ্গিত দিয়েছে অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষা। আর তাতেই সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে রেকর্ড লাফ দিল শেয়ার বাজার। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্স উঠল প্রায় ১,৪২২ পয়েন্ট। এক লাফে ৪২১ অঙ্ক বাড়ল ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফ্টিও। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী পাঁচ বছর কেন্দ্রে স্থায়ী সরকারের আশাতেই এমন বিপুল উত্থানের মুখ দেখল দুই সূচক।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, কোনও নির্দিষ্ট দল বা জোটের থেকেও বাজার এবং শিল্পমহল বেশি জোর দেয় সরকারের স্থায়িত্বে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে যার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, তাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। বজায় থাকে সংস্কারের গতি। সমীক্ষায় সেই আশার ছবি ফুটে ওঠাই বাজারের উত্থানের কারণ বলে তাঁদের দাবি।
দেকো সিকিউরিটিজের কর্ণধার অজিত দে বলেন, ‘‘আর্থিক উন্নতির অন্যতম শর্ত সরকারের স্থায়িত্ব। বাজার মনে করছে, বুথফেরত সমীক্ষা সত্যি হলে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে তেমন স্থায়ী সরকার গড়তে অসুবিধা হবে না।’’ শেয়ার ব্রোকিং সংস্থা আইআইএফএল সিকিউরিটিজের ডিরেক্টর চিন্তন মোদী বলেন, ‘‘আমাদের আশা, এনডিএ সরকার আর্থিক, শ্রম এবং ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে যে সমস্ত সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছিল, তা চালু থাকবে।’’ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও মোদী সরকারের দক্ষতার উপরে বাজারের আস্থা রয়েছে বলে তাঁর দাবি। অজিত-সহ অনেকে বলছেন, এনডিএ সরকার যে ভাবে জনমোহিনী নীতিতে আটকে না থেকে সংস্কারের কড়া সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হয় না, তা-ও স্বস্তি দেয় বাজারকে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এক ঝলকে
• সেনসেক্স উঠল ১,৪২১.৯০ অঙ্ক। দিনের শেষে থামল ৩৯,৩৫২.৬৭ পয়েন্টে।
প্রায় ৩.৭৫%।
• গত ছ’বছরে এক দিনে এতটা ওঠেনি বিএসই-র এই সূচক।
• ৪২১.১০ পয়েন্ট উঠল নিফ্টিও (৩.৬৯%)। দিনের শেষে থিতু হল ১১,৮২৮.২৫ অঙ্কে।
• এক দিনের উত্থানের নিরিখে প্রায় এক দশকে তা সর্বোচ্চ।
• স্রেফ এক দিনের এই উত্থানে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে (বিএসই) নথিভুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ার সম্পদ মোট বাড়ল ৫ লক্ষ ৩৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি!
• এই নিয়ে শেষ তিন লেনদেনের দিনে ওই সংস্থাগুলির মোট শেয়ার সম্পদ বেড়ে গিয়েছে ৭ লক্ষ ৪৮ হাজার কোটি টাকা।
• ডলারের সাপেক্ষে চড়ল টাকার দামও। সোমবার মার্কিন মুদ্রাটির দর পড়েছে ৪৯ পয়সা।
• সেনসেক্সের অন্তর্গত ৩০টি শেয়ারের মধ্যে ২৮টিই এ দিন ঊর্ধ্বমুখী। আর নিফ্টির ৫০টির মধ্যে ৪৫টি।
মূল কারণ
• প্রায় সমস্ত বুথফেরত সমীক্ষায় কেন্দ্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ (এবং সেই দরুন স্থায়ী) সরকার তৈরি হওয়ার আশা।
• কোনও দল বা জোটই নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পেলে, ত্রিশঙ্কু সংসদ তৈরির আশঙ্কা ক্রমশ চেপে বসছিল বাজারে। বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল তার উল্টো বলায় উৎসাহিত শেয়ার বাজার।
• লগ্নিকারীদের আশা, কেন্দ্রে স্থায়ী, মজবুত সরকার এলে জারি থাকবে সংস্কারের গতি। সম্ভব হবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়াও। যা সাহায্য করবে অর্থনীতির চাকা ঘোরাতে।
সামনে সাবধান
• বুথফেরত সমীক্ষা অনেক সময়েই মেলে না। এ বারেও তেমনটা হলে এবং ত্রিশঙ্কু সংসদের ছবি ফুটে উঠলে, বিপুল পতন হতে পারে বাজারে।
• সংখ্যাগরিষ্ঠ, স্থায়ী সরকার তৈরির দরুন সম্ভাব্য উত্থানের অনেকটাই তিন দিনে দেখে ফেলেছে বাজার। এর পরে ভোটের ফলে সেই ছবি ফুটে উঠলে তাই নতুন করে আর বিপুল উত্থানের সম্ভাবনা কম। বরং মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদে স্বাভাবিক নিয়মেই কিছুটা সংশোধনের সম্ভাবনা।
• স্থায়ী সরকারের আনন্দ ইতিমধ্যেই অনেকখানি সেরে ফেলেছে বাজার। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের দৌড় কিন্তু নির্ভর করবে বৃদ্ধির হার, কাজের সুযোগ তৈরির মতো অর্থনীতির হাল-হকিকতের উপরে।
তবে চিন্তনের মতে, ‘‘আরও দিন তিনেক বাজার ওঠার পরে শেয়ারের দামে সংশোধন হবে। স্থায়ী সরকারের উচ্ছ্বাস ভুলে বাজার ধীরে ধীরে তাকাবে অর্থনীতির ভিতের দিকে।’’ স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখের আর্জি, ‘‘দেশে নগদের ঘাটতি মেটাক নতুন সরকার। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থার সমস্যা সমাধানেও।