—ফাইল চিত্র।
অশোধিত তেলের দাম ১৩ বছরে এই প্রথম ব্যারেলে ১৩৯ ডলার ছুঁতেই সোমবার সকালে বিশ্ব জুড়ে হুড়মুড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল শেয়ার বাজার। লগ্নিকারীদের শেয়ার বিক্রির হুড়োহুড়িতে ভারতে সেনসেক্স এক ধাক্কায় নেমে যায় প্রায় ২০০০ (১৯৬৬.৭১)। পরে সামলে দিন শেষ করে ১৪৯১ পয়েন্ট পতনে। দাঁড়ায় ৫২,৮৪২.৭৫ অঙ্কে। যা সাত মাসের মধ্যে সব থেকে কম। বহু দিন পরে নিফ্টিও থেমেছে ১৬,০০০-এর নীচে (১৫,৮৬৩.১৫)। শেয়ার বাজারের এই দুর্দিনে আরও চড়েছে সোনার দাম। সোমবার পাকা সোনা (১০ গ্রাম) জিএসটি না-ধরেই শনিবারের থেকে ১০৫০ টাকা বেড়ে পৌঁছেছে ৫৪,১৫০ টাকায়। কর ধরে ৫৫,৭৭৫ টাকা। ফলে গয়নার বাজারও আগুন।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের আবহে বহু দিন ধরেই পড়ছে সূচক। এই দফায় একটানা পতন চলছে বুধবার থেকে। মূল্যবৃদ্ধি মাথা তোলার এবং আর্থিক বৃদ্ধি পিছলে যাওয়ার ভয় এ দিন আরও চেপে ধরে ভারত-সহ গোটা বিশ্বের বাজারকে। টানা চার দিনে সেনসেক্স আড়াই হাজারেরও বেশি পড়েছে। লগ্নিকারীরা হারিয়েছেন প্রায় ১১.২৮ লক্ষ কোটি টাকা।
ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর বিনয় আগরওয়াল বলেন, “ভারতীয় অর্থনীতির গতিকে ক্রমশ রুদ্ধ করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সব থেকে বেশি সমস্যা তৈরি করবে তেলের দাম বৃদ্ধি। অনেকেই ভাবছেন, যুদ্ধ বন্ধ হলে বাজার ফের বাড়তে শুরু করবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই শেয়ার সম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কত দিনে পূরণ হবে বলা মুশকিল।’’ একই মত ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি কমল পারেখের। তিনি বলেন, “ভারতে আর্থিক ক্ষেত্রের মৌলিক উপাদানগুলি ভাল অবস্থায় ছিল। কিন্তু যুদ্ধ সেগুলিকে বিধ্বস্ত করছে। তেলের দাম মূল্যবৃদ্ধির হারকে কোথায় নিয়ে যাবে, তা কেউ আন্দাজই করতে পারছে না। এ দিকে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি প্রতি দিন মোটা অঙ্কের শেয়ার বিক্রি করছে এ দেশে। মিউচুয়াল ফান্ড-সহ ভারতীয় আর্থিক সংস্থাগুলির লগ্নি বাজারকে আরও বড় ধসের হাত থেকে রক্ষা করে চলেছে। কিন্তু এত লগ্নি মুছে যাওয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে অর্থনীতির।’’
বাজারে এখন ফাটকাবাজ বাড়বে, মন্তব্য বিশেষজ্ঞ অজিত দে-র। তিনি বলেন, “এমনিতে সূচক এতটা পড়ে যাওয়ায় কম দামে অনেক ভাল শেয়ার কেনার সুযোগ খুলেছে। সাধারণ ক্ষুদ্র লগ্নিকারীদের দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করার এটাই সময়। তবে অনিশ্চিত বাজারে ফাটকাবাজদের ভূমিকা বাড়ে। ফলে সতর্ক হয়ে পা ফেলতে হবে।’’ সকলেরই ধারণা, সংঘর্ষ বন্ধ না-হওয়া পর্যন্ত বাজার অনিশ্চিত থাকবে।