সর্পিল: নোট বাতিলের পরে টাকা জমার দীর্ঘ লাইন ব্যাঙ্কে। ফাইল চিত্র।
অর্থনীতি ঝিমিয়ে। তাই ভাটার টান ঋণের চাহিদায়। অথচ উল্টো দিকে, ব্যাঙ্কের ঘরে উপচে পড়ছে নগদের সরবরাহ। নোট বাতিলের জেরে ব্যাঙ্কের কাছে জমা পড়েছে বিপুল টাকা। যার একটা মোটা অংশ এখনও তোলেননি গ্রাহকরা। চাহিদা-জোগানের এই ফারাকই এখন অন্যতম কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে স্টেট ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ কমানোর ক্ষেত্রে।
সেভিংস অ্যাকাউন্টে এক কোটি টাকার কম জমায় সুদ ৪% থেকে কমিয়ে ৩.৫% করার কথা সোমবারই ঘোষণা করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক। দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক কার্যত মেনে নিচ্ছে যে, দেশে অনেক দিন ধরেই ঋণের (বিশেষত শিল্প-ঋণ) চাহিদা তলানিতে। তার উপর নোট নাকচের সময়ে তাদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। যার ৪০% এখনও রয়ে গিয়েছে ব্যাঙ্কের ঘরেই। এই পরিস্থিতিতে তহবিল সংগ্রহের খরচ কমাতে সুদ কমানোর পথই বেছেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁরা উল্লেখ করেছেন মূল্যবৃদ্ধির হার কমা-সহ অন্যান্য কারণও।
স্বল্প সঞ্চয়ে ইতিমধ্যেই সুদ কমেছে। তার উপর এ বার সেভিংস অ্যাকাউন্টেও তা কমায় আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, আগামী দিনে সুদ নামতে পারে মেয়াদি আমানতেও। যদিও এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে স্টেট ব্যাঙ্কের কর্ণধার অরুন্ধতী ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘এখনই মেয়াদি আমানতে সুদ কমানোর পরিকল্পনা নেই।’’
প্রায় ছ’বছর পরে সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ কমাল কোনও ব্যাঙ্ক। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে সেভিংসে সুদ ঠিক করায় স্বাধীনতা দেওয়ার পরে ২০১১ সালে স্টেট ব্যাঙ্কই তা ৩.৫% থেকে বাড়িয়ে ৪% করেছিল। স্টেট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের মতে, হয় এই সুদ কমাতে হত। নইলে বিকল্প হিসেবে বাড়াতে হত তহবিল সংগ্রহের বাড়তি খরচের ভিত্তিতে নির্ধারিত সুদ (এমসিএলআর)। কিন্তু সে ক্ষেত্রে গৃহ, কৃষি, শিল্প-সহ প্রায় সব ক্ষেত্রে ঋণে সুদ বাড়ত। তা তাঁরা চাননি। এ ছাড়াও তাঁদের যুক্তি, মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে। তাই তা বাদ দিয়ে যে প্রকৃত সুদের হার হিসেব করা হয়, তা বেড়েছিল অনেকখানি। এই সিদ্ধান্ত সেই কারণেও।
ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, ‘‘হালে মেয়াদি জমায় সুদ কমলেও, সেভিংস অ্যাকাউন্টে তা দীর্ঘ দিন কমেনি। তাই সেটি করে স্বল্প সঞ্চয়-সহ সমস্ত সুদের সঙ্গে সামঞ্জস্য আনা হল।’’
ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত আবার মনে করেন, আগামী দিনে ঋণের চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা দেখেই এই পদক্ষেপ করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক। যে- কারণে এর পরে মেয়াদি জমায় সুদ ছাঁটার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। তবে সুদ কমতে থাকলে বিশেষ ভাবে সমস্যায় পড়বেন প্রবীণ নাগরিক-সহ সেই সব ব্যক্তি যাঁরা সুদ থেকে আয়েই সংসার চালান। ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘২০০৪-’০৫ সালে সুদের হার অনেকটাই কমে যাওয়ার ফলে প্রবীণ নাগরিকরা সমস্যার মুখে পড়েছিলেন। এই সমস্যা মোকবিলা করার জন্যই প্রবীণদের জন্য বেশি সুদের বিশেষ জমা প্রকল্প চালু হয়।’’ ব্যাঙ্কে সুদ এ ভাবে কমতে থাকলে, ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার রমরমা ফের বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকের। ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি দেবব্রত সরকারের কথায়, ‘‘এ জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রের নজরদারি জরুরি।’’