রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। —ফাইল চিত্র।
এখনই যে বাজারে আনাজের আগুন দাম থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তার ইঙ্গিত মিলল বৃহস্পতিবার।
এ দিন শেষ ঋণনীতি বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রকাশ করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। তাতেই দেখা গিয়েছে খাদ্যপণ্যের দাম স্বল্প মেয়াদে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে তাদের সুদ নির্ধারণকারী ছয় সদস্যের ঋণনীতি কমিটি। যার কারণ দেশে অনিয়মিত এবং অসমান বৃষ্টির জেরে জোগান সঙ্কট। আবহাওয়ায় এল নিনোর প্রভাব এবং ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার দরুন বিশ্ব বাজারে খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামও ঝুঁকির। কমিটির আশঙ্কা, এর ধাক্কায় জুলাই-অগস্টে মূল্যবৃদ্ধি চড়তে পারে। ইতিমধ্যেই গত মাসে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি পৌঁছেছে ৭.৪৪ শতাংশে, ১৫ মাসে সর্বোচ্চ। শুধু খাদ্যপণ্যেরই ১১.৫১%। আনাজের ৩৭.৩৪%। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, উদ্বেগ তাই বাড়তে পারে।
তাদের মতে, এমনিতেই বহু বাজারে টোম্যাটো-সহ বেশ কিছু আনাজের দর এখনও অনেক মানুষের নাগালের বাইরে। চাল, ডাল, শ্যাম্পু, সাবান সমেত নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম চড়েছে। হাজার টাকার বেশি লাগছে রান্নার গ্যাসে। ওষুধ, চিকিৎসা, যাতায়াতের খরচ বেড়েছে। এই অবস্থায় দৈনন্দিন, বিশেষত খাবারের খরচ না কমলে আসন্ন পুজোর মরসুমটাই মাটি হবে কি না, উঠছে প্রশ্ন। একাংশের হাতে বাড়তি টাকা না থাকায় পুজোর বিক্রি নিয়ে প্রমাদ গুনছেন ব্যবসায়ীরাও।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রক জুলাইয়ের রিপোর্টে দাবি করে, খাবারের চড়া দাম দীর্ঘস্থায়ী হবে না। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে এবং বাজারে নতুন শস্য এলে তা নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে দেশ এবং বহির্বিশ্বের কিছু সমস্যায় বেশ কিছু দিন মূল্যবৃদ্ধির চাপ বজায় থাকবে। একই সুর ঋণনীতি কমিটির আলোচনায়। কার্যবিবরণীতে প্রকাশ, তারা নজরদারি এবং প্রয়োজনে দ্রুত পদক্ষেপের কথা বলেছে।
এ মাসের ৮ তারিখ শুরু হয়েছিল আরবিআইয়ের তিন দিনব্যাপী ঋণনীতি বৈঠক। ১০ অগস্ট ঋণনীতি ঘোষণা করেন আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। সতর্ক থাকতে সুদ ৬.৫ শতাংশে (রেপো রেট, যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় আরবিআই) স্থির রাখা হয়। চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাসও অপরিবর্তিত থাকে ৬.৫ শতাংশে। তবে মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.১% থেকে বাড়িয়ে ৫.৪% করে তারা। শক্তিকান্তের মত ছিল, স্বল্প মেয়াদে আনাজের দাম চড়া থাকতে পারে, এই আশঙ্কা মাথায় রেখে ঋণনীতি স্থির হয়েছে। তবে সেটা ছিল প্রথম দফার প্রভাব। খাদ্যপণ্যের দ্বিতীয় দফার দাম বৃদ্ধির প্রভাব ঠেকাতেও আগাম তৈরি থাকা প্রয়োজন। এই দ্বিতীয় দফাই চিন্তা বাড়াচ্ছে গোটা দেশের।