প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
বিস্তর ঢাকঢোল পিটিয়ে যেখানে নাগাড়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র প্রচার করছে কেন্দ্র, সেখানে বিপুল অঙ্কের ইস্পাত পণ্য (মূলত ইস্পাতের রেল) কিনতে আন্তর্জাতিক টেন্ডার ডেকেছিল রেল মন্ত্রক। এখন তা নিয়ে দেশীয় সংস্থার আপত্তি এবং সেই সঙ্গে বিতর্ক মাথাচাড়া দেওয়ার কারণে সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরকে চিঠি দিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। আর্জি জানাল, সরকারি বরাতে দেশীয় পণ্যকেই অগ্রাধিকার দিতে। দেশে তৈরি পণ্যের কথাই আগে মাথায় রাখতে হবে যে কোনও সরকারি প্রকল্পে।
লাইন পাততে ৭ লক্ষ ১৭ হাজার টন ইস্পাতের রেল কেনার জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার ডেকেছিল রেল মন্ত্রক। কিন্তু তাতে আপত্তি তোলে রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত সংস্থা সেল এবং বেসরকারি সংস্থা জিন্দল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার। এ নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছিল রেল এবং ইস্পাত মন্ত্রকের মধ্যেও। ইস্পাত মন্ত্রকের ক্ষোভ, ওই দুই সংস্থা সময়ে সরবরাহের ব্যাপারে কথা দেওয়া সত্ত্বেও বিদেশি সংস্থার জন্য দরজা খুলে রাখছে রেল মন্ত্রক।
ইস্পাত মন্ত্রকের যুক্তি, এই টেন্ডার ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের মূল লক্ষ্যের বিরোধী। তাদের প্রশ্ন, মোদী সরকার যেখানে দেশে পণ্য উৎপাদনে জোর দিতে চাইছে, এত প্রচার করছে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের, সেখানে সরবরাহের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও ইস্পাতের রেল কিনতে আন্তর্জাতিক টেন্ডার ডাকার যুক্তি কী?
এর পরেই সব দফতরকে চিঠি পাঠায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর। তাতে বলা হয়েছে, ভারতীয় সংস্থার স্বার্থে যেন ঘা না-লাগে, বরাত দেওয়ার সময়ে তা খেয়াল রাখতে হবে প্রত্যেক দফতরকে। নরেন্দ্র মোদীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্রও চিঠিতে লিখেছেন, দেশীয় শিল্পকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রের বার্তা যে কিছু কিছু দফতর এখনও ধরতে পারছে না, সেই বিষয়টি আক্ষেপের।
ক্ষমতার অলিন্দের অনেকে বলছেন, মোদী সরকারের সাড়ে তিন বছর অতিক্রান্ত। ধীরে হলেও দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে ২০১৯ -এর লোকসভা নির্বাচন। অথচ দেশের অর্থনীতির হাল ফেরানোর যে-প্রতিশ্রুতি মোদী গত বার দিয়েছিলেন, তার ধারে-কাছেও এখনও পৌঁছনো যায়নি। বৃদ্ধি ধাক্কা খেয়েছে। গতি নেই শিল্পের চাকায়। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নিয়ে এত দিন ধরে এত প্রচারের পরেও সে ভাবে লগ্নির ঝুলি উপুড় করতে এগিয়ে আসেননি দেশের বিনিয়োগকারীরা।
অথচ মোদী বিলক্ষণ জানেন যে, ২০১৯ সালে তাঁর কাছে অর্থনীতির রিপোর্ট কার্ড দেখতে চাইবেন মানুষ। প্রশ্ন উঠবে আদৌ কতটা চাঙ্গা হয়েছে শিল্প? বিতর্ক হবে, নোটবন্দি এবং তড়িঘড়ি জিএসটি চালু শিল্পের দশা আরও খারাপ করল কি না। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সে কথা মাথায় রেখেই এখন বাকি সময়টুকুতে দেশীয় শিল্পের হাল মেরামতে তৎপর হতে চান মোদী। কেন্দ্র বিশেষত নজর দিতে চায় ইস্পাত, সিমেন্টের মতো শিল্পে। বিশ্ব জুড়ে চাহিদায় মন্দার কারণে যাদের হাল খারাপ আজ অনেক দিন থেকেই। এই পরিস্থিতিতে মোদীর দফতরের কাছ থেকে এ ধরনের চিঠি একেবারেই অপ্রত্যাশিত নয় বলে তাঁদের দাবি।