লোকসভায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন শুক্রবার লোকসভায় বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার বেসরকারিকরণ তাঁদের লক্ষ্য নয়। শুধু নিজেদের অংশীদারির একাংশ বিক্রি করতে চায় সরকার। কিন্তু সেই লক্ষ্যে সাধারণ বিমা ব্যবসা (জাতীয়করণ) আইন সংশোধনের জন্য এ দিন লোকসভায় যে বিল পেশ করেছেন তিনি, তাতে দেখা গিয়েছে সংস্থায় কেন্দ্রের শেয়ার ৫১ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনার বন্দোবস্ত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, এ ভাবে কি আসলে বেসরকারিকরণের পথই খুলে রাখা হল? বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এই বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হলে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা সংস্থায় কেন্দ্রের কমপক্ষে ৫১% অংশীদারি রাখার বাধ্যবাধকতা আর থাকবে না। যার জোরে আগামী দিনে বেসরকারিকরণ অন্তত আইনি ভাবে হবে বাধাহীন।
অর্থমন্ত্রীর অবশ্য ব্যাখ্যা, সরকারের আইন বদলের উদ্দেশ্য সংস্থার বেসরকারিকরণ নয়। বরং এ ভাবে তাঁরা সেখানে অংশীদারি কেনার দরজা খুলে দিতে চান সাধারণ মানুষের সামনে। যাতে তাঁরা লগ্নিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন, আবার ব্যবসা বাড়াতে ওই সব সংস্থা শেয়ার বেচে মূলধন সংগ্রহ করতে পারে। তাঁর দাবি, ‘‘এর মাধ্যমে টাকার জোগান বাড়বে। আরও প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। ভারতে সাধারণ বিমা সংস্থাগুলির দ্রুত বৃদ্ধি হবে।’’
একাংশের যদিও প্রশ্ন, বাজেটেই সীতারামন বলেছেন দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা সংস্থার বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তের কথা। সেটা কার্যকর করতেই তো এই আইন বদল। তা হলে অর্থমন্ত্রীর কথার মানে কী?
বিমা বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ বিমা সংস্থা ন্যাশনাল ইনশিয়োরেন্সের প্রাক্তন ডিরেক্টর সিদ্ধার্থ প্রধান বলেন, ‘‘আইন যে ভাবে সংশোধন করা হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে কেন্দ্র কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা সংস্থা বেচতে চাইলে আইনগত বাধা থাকবে না। সায়ের জন্য লোকসভায় দৌড়তে হবে না।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিল ওই সংস্থাগুলিকে বেসরকারিকরণের দিকে নিয়ে যাবে। আইন সংশোধন হলেই ভারতীয় বিমা শিল্পে দখল বাড়াতে ঝাঁপাবে বিদেশি লগ্নিকারীরা।
তবে প্রধান-সহ সাধারণ বিমা বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ‘‘নিউ ইন্ডিয়া ইনশিয়োরেন্স ছাড়া বাকি তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার দায়ের বোঝার প্রেক্ষিতে মূলধনের অনুপাত যতটা থাকা উচিত তার থেকে অনেক কম আছে। দায়ের অন্তত ১.৫ গুণ মূলধন থাকা জরুরি। কিন্তু রয়েছে প্রায় ১%। তাই সংস্থাগুলির পুঁজি জোগাড়ের সহায়ক আইনের সংশোধনটি।’’
এ দিকে, কোনও ব্যাঙ্ক উঠে গেলে আমানতকারীরা যাতে বিমার মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফেরত পান, সেই প্রস্তাব সম্বলিত ডিপোজ়িট ইনশিয়োরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিলটিও এ দিন পেশ হয়েছে রাজ্যসভায়। অর্থ প্রতিমন্ত্রী ভগবত কারাড বলেন, বিলটি আইনে পরিণত হলে রক্ষা হবে দুর্বল ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের স্বার্থ।