৩০টি দেশকে নিয়ে করা তাদের সমীক্ষা বলছে, দামের ছেঁকায় এতটাই বিধ্বস্ত সকলে যে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই চাইছেন তাঁদের দেশ পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথাগত জ্বালানি থেকে সরে আসুক।
প্রতীকী ছবি।
অতিমারির কামড়ে ক্ষতবিক্ষত অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তায় যে পাঁচিল তুলছে জ্বালানির দর, সেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল আইএমএফ। বুধবার ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামেরও (ডব্লিউইএফ) সতর্কবার্তা, এর জেরে বিশ্ব জুড়েই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। ৩০টি দেশকে নিয়ে করা তাদের সমীক্ষা বলছে, দামের ছেঁকায় এতটাই বিধ্বস্ত সকলে যে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই চাইছেন তাঁদের দেশ পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথাগত জ্বালানি থেকে সরে আসুক। ভারতেও ৯০% নাগরিক সেটাই চান। তবে সেই সরে আসা এত দ্রুত সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও, তেল-গ্যাসের দাম যে আর্থিক বৃদ্ধিকে টেনে নামাবে সে ব্যাপারে একমত বিশেষজ্ঞেরা। এ দিনই ইন্ডিয়া রেটিংস আগামী অর্থবর্ষে ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। বলেছে, আগামী তিন মাস জ্বালানির চড়া দর বহাল থাকলে ওই হার ৭.২ শতাংশে থমকাতে পারে, আর ছ’মাস থাকলে ৭ শতাংশে।
ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং চাহিদায় ধাক্কা লাগার কারণে এর আগে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছেঁটেছে ফিচ, ইক্রা, মর্গ্যান স্ট্যানলির মতো রেটিং ও উপদেষ্টা সংস্থাও। খোদ সরকার তা ৯.২% থেকে কমিয়ে করেছে ৮.৯%। আইএমএফ বলেছিল, গোটা বিশ্বই ঝুঁকির মুখে। তবে ভারতকে নিয়ে চিন্তা বেশি, কারণ বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের বিরাট বড় খদ্দের তারা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে যা এক সময়ে পৌঁছে গিয়েছিল ব্যারেল প্রতি ১৩৯ ডলারে। এখন ঘোরাফেরা করছে ১১৪ ডলারের আশেপাশে। ইতিমধ্যেই এ দেশে লাফিয়ে বাড়ছে পেট্রল, ডিজ়েল, রান্নার গ্যাস, এটিএফের মতো বিভিন্ন জ্বালানির দর।
ডব্লিউইএফের সমীক্ষায় প্রকাশ, বেশিরভাগ উত্তরদাতারই দাবি যাতায়াত, বাড়ি-ঘর গরম বা ঠান্ডা রাখা, রান্না, বিদ্যুতের মতো খাতে খরচ বাড়ছে। ৫৫ শতাংশের মতে, এর ফলে ক্রয়ক্ষমতা কমার আশঙ্কা। বেশি সন্ত্রস্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, তুরস্ক, ভারতের নাগরিকেরা। এ দেশে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৬৩% সেই চিন্তায় কাঁটা। এর কারণ হিসাবে বেশিরভাগ মানুষ জোগানের ঘাটতিকেই দায়ী করেছেন। তার পরে রয়েছে যথাক্রমে জলবায়ু নীতি, তেল-গ্যাসের দরে অস্থিরতা।
অর্থনীতিবিদ পিনাকী চক্রবর্তী অবশ্য বলছেন, অর্থনীতি ঠিক কতটা ধাক্কা খাবে এখনই বলা সম্ভব নয়। বরং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এড়ানোর ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন তিনি। যাতে অর্থনীতি চাপ কম পড়ে।