যোগ্য ক্রেতা অমিল, সঙ্কট কাটেনি ডানকানের ৫ বাগানে

মাস চারেক আগে উত্তরবঙ্গে ডানকান গোষ্ঠীর সাতটি ‘সঙ্কটজনক’ বাগানের পরিচালনভার অন্য সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০৩:১৯
Share:

মাস চারেক আগে উত্তরবঙ্গে ডানকান গোষ্ঠীর সাতটি ‘সঙ্কটজনক’ বাগানের পরিচালনভার অন্য সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে মাত্র দু’টি বাগান ছাড়া বাকিগুলির জন্য কোনও ‘যোগ্য’ সংস্থাই এখনও মেলেনি। চা শিল্পের অভিযোগ, বাগান পরিচালনা হস্তান্তরের শর্তগুলি ব্যবসায়িক ভাবে যথেষ্ট আকর্ষণীয় নয়। তাই সে ভাবে কেউ আগ্রহী হচ্ছে না। সব মিলিয়ে ডানকান গোষ্ঠীর ওই বাগানগুলির সঙ্কট কবে কাটবে, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে বই কমছে না।

Advertisement

উত্তরবঙ্গে ডানকান-সহ বিভিন্ন চা বাগানে বহু শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনাহারে শ্রমিকদের মৃত্যুর অভিযোগ উঠলেও অবশ্য বাগান মালিকেরা তা মানতে নারাজ। রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে গোটা বিষয়টিতে রাজনীতির চাপান-উতোরের মধ্যে কেন্দ্র ডানকান গোষ্ঠীর সাতটি বাগানের পরিচালন ভার অধিগ্রহণ ও পরে অন্য সংস্থাকে তা হস্তান্তের দায়িত্ব দেয় টি বোর্ডকে। যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয় ডানকান গোষ্ঠী। সিঙ্গল বেঞ্চের পরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চে এখন মামলাটি রয়েছে। তবে আগ্রহী সংস্থার কাছ থেকে টি বোর্ডের দরপত্র চাওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখেনি আদালত।

ডিমডিমা ছাড়া ডানকান গোষ্ঠীর বাকি ছ’টি বাগান বিআইএফআর-এ ছিল। তাই গোড়ায় ডিমডিমা বাগানটির জন্য দরপত্র চেয়েছিল টি বোর্ড। কিন্তু যারা দরপত্র দিয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে ‘যোগ্য’ কাউকে না-পাওয়ায় দ্বিতীয় বার নতুন করে দরপত্র চায় তারা। কিন্তু বোর্ড সূত্রের খবর, সেই দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন পেরিয়ে গেলেও কেউই দরপত্র জমা দেয়নি।

Advertisement

অন্য দিকে, বাকি ছ’টি— বীরপাড়া, গরগণ্ডা, লঙ্কাপাড়া, তুলসীপাড়া, হান্টাপাড়া ও ধুমচিপাড়ার জন্যও আলাদা আলাদা ভাবে আগ্রহপত্র চায় তারা। একগুচ্ছ দরপত্র ঝাড়াই বাছাই করে মূল্যায়নের পরে শুধুমাত্র বীরপাড়া ও গরগণ্ডার জন্য চারটি সংস্থা প্রাথমিক শর্তের যোগ্যতামান পেরিয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে সেগুলির মধ্য থেকেই একটি করে সংস্থা চূড়ান্ত করা হতে পারে। কিন্তু বাকিগুলির জন্য কোনও যোগ্য সংস্থাই মেলেনি।

তা হলে ডিমডিমা-সহ বাকি পাঁচটি বাগানের ভবিষ্যৎ কী? টি বোর্ড সূত্রের খবর, বাগানের পরিচালন ভার হস্তান্তরের জন্য ফের দরপত্র চাওয়া হতে পারে। কারণ বাগানের ভার নতুন কারও হাতে তুলে দিতে হলে এ ছাড়া অন্য কোনও পথ আপাতত খোলা নেই।

কিন্তু কেন কেউ আগ্রহী হচ্ছে না? চা শিল্পমহলের একাংশের দাবি, যে-শর্তে বাগানের পরিচালনভার অধিগ্রহণ ও হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে, তাতেই আসল গেরো। নতুন সংস্থা দায়িত্ব পেলেও তার কার্যকালের মেয়াদ ঘিরে রয়েছে অনিশ্চয়তার পরত। কারণ আইন অনুযায়ী, গোড়ায় মাত্র পাঁচ বছরের জন্য নতুন সংস্থার হাতে বাগানের পরিচালনভার তুলে দেওয়ার কথা। কিন্তু চা বাগানের ব্যবসার হিসেব বলছে, যে-সংস্থা বাগানের পরিচালনভার নেবে, প্রথম কয়েক বছর তাদের কার্যত কোনও মুনাফা হবে না। তারপর যখন লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা তৈরি হয়, তার আবার কয়েক বছরে মধ্যেই পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এর পর সংস্থাটির কাজের দক্ষতা দেখে আরও এক বছর করে মোট ছ’বছর পর্যন্ত সেই সংস্থাকেই বাগান পরিচালনার ভার দেওয়া যেতে পারে বলে শর্তে জানানো হয়েছে। কিন্তু চা শিল্পের বক্তব্য, সেটা যে হবেই, সেই নিশ্চয়তা কোথাও নেই। এর উপর আবার ডানকানের বাগানগুলির অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। ফলে সেই বাগানের পরিচালনভার হাতে নিয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে কতটা চাকা ঘোরানো সম্ভব, তা নিয়েই সংশয়ী সংশ্লিষ্ট মহল।

টি বোর্ড সূত্রের খবর, চা শিল্পের এই আশঙ্কার বার্তা বাণিজ্য মন্ত্রকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বীরপাড়া ও গরগণ্ডা বাগান দু’টির জন্য দু’টি করে যে চারটি সংস্থা প্রাথমিক যোগ্যতামান পেরিয়েছে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তাদের তালিকাও বাণিজ্য মন্ত্রকে পাঠানো হয়েছে।

আপাতত দু’টি বাগানের নতুন পরিচালক মেলে কি না, সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement