অনাদায়ী ঋণের ভারে নুয়ে পড়া সরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নতুন করে ২.১১ লক্ষ কোটি টাকা মূলধন জোগানোর প্রতিশ্রুতি অগ্নিসংযোগ করেছিল বাজারের বারুদে। সেই আগুনে গত সপ্তাহে ঘি ঢেলেছে মূল পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন এক ধাক্কায় অনেকটা বৃদ্ধির খবর।
সেপ্টেম্বরে পরিকাঠামো শিল্পে বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৫.২ শতাংশ, যা এই আর্থিক বছরে সর্বাধিক। অগস্টে বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৪ শতাংশ। উৎপাদন বেশি বেড়েছে তেল শোধন, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ইস্পাত শিল্পে। এই পরিসংখ্যান সার্বিক ভাবে শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। অন্য দিকে ভাল বর্ষার সুবাদে কৃষি উৎপাদনও বাড়বে বলে আশা। পণ্য-পরিষেবা করের ব্যাপারে নতুন করে ছাড় দেওয়া হচ্ছে ছোট ও মাঝারি শিল্পকে। এই করের ব্যাপারে আরও কিছু সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষিত হতে পারে ১০ নভেম্বর জিএসটি পরিষদের বৈঠকের পরে।
এখনও পর্যন্ত যা কোম্পানি ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে, তা প্রত্যাশার তুলনায় ভালই বলতে হবে। ফলে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে শেয়ার বাজারে। সব মিলিয়ে বাজার এখন বেশ চাঙ্গা। শুক্রবার সেনসেক্স যখন পৌঁছেছে ৩৩,৬৮৬ অঙ্কে, তখন নিফ্টি ছিল ১০,৫০০-এর দোরগোড়ায় (১০,৪৫২ পয়েন্টে)। এই পরিস্থিতিতে সাময়িক সংশোধন হলেও বড় পতনের আশঙ্কা নেই।
আর সপ্তাহখানেকের মধ্যে বেরিয়ে যাবে সব কোম্পানি ফলাফল। ইঙ্গিত পাওয়া যাবে বছরের শেষ ছয় মাসের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে।
শেয়ার বাজার একনাগাড়ে বাড়তে থাকায় গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন ইকুইটি ফান্ডের ন্যাভ-ও বেড়েছে বেশ ভাল রকম। পাশাপাশি, এখনই তেমন সুদ কমার সম্ভাবনা না-থাকায় বন্ড ফান্ডের ন্যাভ যেন একটু ঝিমিয়ে পড়েছে। এই কারণে এখন বেশি লগ্নি আসছে ইক্যুইটি এবং ব্যালান্সড ফান্ডে। বাজার একটু বেশি উঁচুতে উঠে যাওয়ায় অনেকে ঝুঁকছেন ডায়নামিক অ্যাসেট অ্যালোকেশন ফান্ডের প্রতি। এই ধরনের ফান্ডে সস্তার বাজারে ইকুইটিতে লগ্নি বাড়ানো হয়। বাজার তেতে গেলে ইকুইটিতে লগ্নি কমিয়ে, ঋণপত্রে সরে আসা হয়। এতে ঝুঁকি কমে ও আয়/বৃদ্ধির নিশ্চয়তা বাড়ে।
গত সপ্তাহে এলআইসি-র সহায়তায় কোনও রকমে উতরেছে নিউ ইন্ডিয়ার আইপিও। বিমা শিল্প থেকে পরপর ইস্যু আসতে থাকায় এবং শেয়ারের দাম বেশ উপরের দিকে হওয়ায় তেমন সাড়া মেলেনি ৯৬০০ কোটি টাকার নিউ ইন্ডিয়া ইস্যুতে।
এই ইস্যুতে শেয়ারের দাম রাখা হয়েছিল ৭৭০-৮০০ টাকা। আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ১.১৯ গুণ, তাও এল আই সি থেকে বড় মাপের সমর্থন পাওয়ার পরে। খুচরো লগ্নিকারী এবং সংস্থার কর্মীরা ৩০ টাকা ডিসকাউন্ট পাওয়া সত্ত্বেও তাঁদের তরফে আবেদন জমা পড়েছে যথাক্রমে মাত্র ০.১ এবং ০.২ শতাংশ। শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ হওয়ার পরে জি আই সি শেয়ারের অবস্থা দেখে সাধারণ মানুষ এত চড়া দামে নিউ ইন্ডিয়া ইস্যুতে আবেদন করে ঝুঁকি নিতে চাননি। আশঙ্কা, নথিবদ্ধ হলে এই শেয়ারও হয়তো বিকোবে ইস্যুর দামের তুলনায় কিছুটা কমেই। এত চড়া বাজারেও জীবন বিমা সংস্থা এসবিআই লাইফ-এর অবস্থা আদৌ সুবিধার নয়। এ পরিস্থিতিতে বাজারে আসতে চলেছে এইচ ডি এফ সি লাইফ। ইস্যুর আকার ৮,৭০০ কোটি টাকার আশেপাশে। এর ঠিক পর পরই বাজারে আসবে ‘ভারত ২২ ইটিএফ ইস্যু’। আকার ৮,০০০ কোটি টাকার আশেপাশে। এতগুলি মেগা নতুন ইস্যুর চাপ বাজার নিতে পারবে তো? কোনটিতে আবেদন করা উচিত এবং কোনটিতে নয়, তা নিয়ে খুচরো লগ্নিকারীরা বেশ ধন্দে।