—প্রতীকী চিত্র।
থামানো যাচ্ছে না সোনার দৌড়কে। ১ মার্চ কলকাতার বাজারে যে খুচরো পাকা সোনার (১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট) দাম ছিল ৬৩,২৫০ টাকা, সেটাই মাসের শেষে পৌঁছে গিয়েছে ৬৯,১০০ টাকায়। এর সঙ্গে জিএসটি যোগ করলে দর ৭১,১৭৩ টাকা। সোনার দরের এই ঊর্ধ্বগতি ক্রেতাদের তো বটেই, কপালে ভাঁজ ফেলছে সোনা ব্যবসায়ীদের। বরাত তলানিতে ঠেকার আশঙ্কায় রুজি-রোজগার নিয়ে চিন্তায় পড়ছেন গয়নার কারিগরেরাও। অবিলম্বে দাম না কমলে অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেই চিন্তাতেই দিন গুনছে সব মহল।
ওয়েস্ট বেঙ্গল বুলিয়ন মার্চেন্টস অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, শনিবার এক ধাক্কায় ১৩৫০ টাকা বেড়েছে সোনার দাম। খুচরো পাকা সোনা তো নজির গড়েইছে। পিছিয়ে নেই বাকিরাও। পাকা সোনার বাট দাঁড়িয়েছে ৬৮,৭৫০ টাকা। হলমার্ক সোনার গয়না হয়েছে ৬৫,৭০০ টাকায়। ৩% জিএসটি যোগ করলে এই দুই দরই দাঁড়াবে অনেকটা বেশি। পাশাপাশি, রুপোর বাটের দর এ দিন ১১০০ টাকা বেড়ে কেজিতে দাঁড়িয়েছে ৭৫,১৫০ টাকা। খুচরোর ক্ষেত্রে তা একই হারে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫,২৫০ টাকা।
স্বর্ণ শিল্প মহলের মতে, ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা তো ছিলই। এ বার আমেরিকায় সুদ কমার আশায় সেই অর্থ সরিয়ে সোনায় পুঁজি ঢালতে শুরু করেছেন লগ্নিকারীরা। অস্থির বিশ্ব অর্থনীতিতে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কও নিজেদের সোনার ভান্ডার বাড়ানোর উপরে জোর দিচ্ছে। সব মিলিয়ে বিশ্ব বাজারে হলুদ ধাতুটির দাম বাড়ছে। যা ভারতেও তার দরকে ঠেলে তুলেছে।
সোনার পাইকারি বিক্রেতা চিত্তরঞ্জন পাঁজা এ দিন বলেন, সোনার দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ লগ্নি হিসেবে পণ্য বাজারে (কমোডিটি এক্সচেঞ্জ) তার চাহিদা মাথা তোলা। গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে শেষ লেনদেন হয়েছে। ওই দিন আউন্সে সোনা পৌঁছেছিল ২২৩৪.৩৩ ডলারে। তিন দিনের ছুটির পরে সোমবার সেখানে বাজার খুললে বোঝা যাবে ছবিটা। তাঁর মতে, ভারতে চৈত্র মাস চলছে। তার উপরে শেষ হচ্ছে অর্থবর্ষ। ফলে সব মিলিয়ে গয়নার চাহিদা একদম তলানিতে। তবে চড়া দামের সুযোগ নিয়ে সোনায় লগ্নিকারীরা লাভের টাকা তুলতে শুরু করলে বিশ্ব বাজারে দর কিছুটা নামার সম্ভাবনা রয়েছে। যার প্রভাবে ভারতেও দামে সংশোধন আসতে পারে।
সোনার চাহিদা বৃদ্ধির আশায় বসে কারিগরেরাও। অঙ্কুরহাটি জুয়েলারি পার্কের সভাপতি অশোক বেঙ্গানির মতে, এপ্রিলের মাঝামাঝি বৈশাখ পড়লে গয়নার চাহিদা বাড়তে পারে বলে আশা। সেই সময়েই শুরু হবে বিয়ের মরসুম। রয়েছে অক্ষয় তৃতীয়াও। ফলে সব মিলিয়ে বিক্রি কিছুটা মাথা তুলতে পারে। সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, বাজারে চড়া দাম এড়াতে এবং লাভের খোঁজে বহু মানুষ ঘরের সোনা বিক্রির পথে হাঁটতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বাজারে সোনার জোগান বৃদ্ধির আশা করছেন তাঁরা।