ছবি: সংগৃহীত
গয়নার চাহিদা তলানিতে। কিন্তু থেমে নেই গয়না তৈরির কাঁচামাল সোনার দাম বৃদ্ধি। বরং তা বাড়ছে রকেটের গতিতেই। গত কয়েক দিন জিএসটি সমেত ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ছিল ৫০ হাজার টাকার উপরে। বৃহস্পতিবার এই প্রথম তা জিএসটি যোগ করার আগেই পেরিয়েছে ওই সীমা। স্বাভাবিক ভাবেই কর যোগ করে তার পা ৫১,৫৬১ টাকার নতুন শিখরে। ফলে চড়েছে গয়নার সোনাও। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দামের এই দৌড়ে লাগাম পড়ার কোনও সম্ভাবনা অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাচ্ছে না। যা চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর করছে সেই সব মানুষের কপালে, যাঁদের বিয়ে বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানের জন্য সোনা না-কিনলেই নয়। করোনার আবহে পুঁজির টানাটানিতে মাথায় হাত বহু পরিবারে। ব্যাঙ্ক, ডাকঘরে পড়তি সুদের জমানায় যে সমস্ত সাধারণ রোজগেরে সুরক্ষিত সঞ্চয়ের কারণে সোনায় ভরসা রাখেন, তাঁদের আক্ষেপ, এটা এখন নাগালের বাইরে। মুষ্টিমেয় বিত্তবানের সম্পত্তি।
স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলছেন, ‘‘চলতি বছরেই সোনা আরও ৫০০০ টাকা বাড়লে অবাক হব না।’’
ভারতে ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের এমডি সোমসুন্দরম পিআর জানান, ‘‘প্রথমত, করোনা আর্থিক অনিশ্চয়তা বাড়ানোয় নিরাপত্তার খোঁজে দ্রুত লগ্নি বাড়ছে সোনায়। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন দেশের সরকার গত আড়াই বছর ধরে বাজার থেকে সোনা কিনছে। যা বাজারে সোনার চাহিদা বাড়িয়ে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে তার দামে। তৃতীয়ত, ব্যাঙ্ক জমায় সুদ কমছে। ফলে অনেকে সোনাকেই আঁকড়ে ধরতে চাইছেন। যা দামে ইন্ধন জোগাচ্ছে।’’
পণ্য লেনদেনের গবেষণা সংস্থা টিকারপ্ল্যান্টের সিইও অরিন্দম সাহা জানান, ‘‘বিশেষত আমেরিকায় এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফের মাধ্যমে সোনায় লগ্নি গত সাত মাসে দ্রুত বেড়েছে। সারা বিশ্বে গত এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যেই ইটিএফ মারফত ৭৩৪ টন সোনা কিনেছেন লগ্নিকারীরা। চাহিদা বাড়ায় পণ্য লেনদেনের বাজারে সোনার দাম বেড়েছে হুহু করে। এই বাজারের সোনার দামের প্রভাব পড়ে দেশের পাকা সোনার বাজারেও।’’
লম্বা লাফ
• গত ৩ জানুয়ারি জিএসটি বাদে ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম ছিল ৪০,৫১০ টাকা। গয়নার সোনা (২২ ক্যারাট) ছিল ৩৮,৪৩৫।
• প্রায় ছ’মাস তফাতে ৯ জুলাই পাকা সোনা ৫০,০৬০। গয়নার সোনা ৪৭,৪৯০ টাকা।
• ৩% জিএসটি ধরলে পাকা সোনার দাম এখন ৫১,৫৬১ টাকা। গয়নার সোনা ৪৮,৯১৪ টাকা।
উদ্বেগ
• যে সব পরিবারে কারও বিয়ের জন্য গয়না কিনতে হবে, তাদের মাথায় হাত।
• সোনায় সঞ্চয় কমছে মধ্যবিত্তের। অনেকেরই খেদ, হলুদ ধাতু এখন বিত্তবানের সম্পত্তি।
• পরিসংখ্যান বলছে, দাম আরও বাড়ার আশায় এখনই বিক্রির বাড়-বাড়ন্ত না-হলেও, তা বন্ধক রাখার ঝোঁক বেড়েছে।
• করোনাজনিত অনিশ্চয়তা ও এত চড়া দাম, দুয়ের জেরে বিক্রি নিয়ে চিন্তিত সোনা ব্যবসায়ীরাও।