স্বল্প সঞ্চয়ে বড় কোপ, পিপিএফে সুদের হার কমলো অনেকটাই

স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ যে এ বার বাজারের (মূলত সরকারি ঋণপত্র) রিটার্নের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ঠিক করা হবে, গত মাসেই তা জানিয়েছিল কেন্দ্র। বলেছিল, তিন মাস অন্তর সুদ ফিরে দেখার কথা। কিন্তু তা করতে গিয়ে প্রথম বারেই যে স্বল্প সঞ্চয়ের সুদে এতখানি কোপ পড়বে, তা সম্ভবত আঁচ করতে পারেনি আমজনতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ যে এ বার বাজারের (মূলত সরকারি ঋণপত্র) রিটার্নের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ঠিক করা হবে, গত মাসেই তা জানিয়েছিল কেন্দ্র। বলেছিল, তিন মাস অন্তর সুদ ফিরে দেখার কথা। কিন্তু তা করতে গিয়ে প্রথম বারেই যে স্বল্প সঞ্চয়ের সুদে এতখানি কোপ পড়বে, তা সম্ভবত আঁচ করতে পারেনি আমজনতা। যে কারণে শুক্রবার পিপিএফ, কিষাণ বিকাশ পত্র (কেভিপি), এনএসসি থেকে শুরু করে ডাকঘরের প্রায় সমস্ত স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে এক ধাক্কায় এতখানি সুদ কমতে দেখে তাঁদের মাথায় হাত। বিশেষত অবসরপ্রাপ্তদের।

Advertisement

এ দিন কেন্দ্রের ঘোষণা অনুযায়ী, পিপিএফে সুদ ৮.৭% থেকে কমে হচ্ছে ৮.১%। কেভিপি-তে তা ৮.৭% থেকে নেমে আসছে ৭.৮ শতাংশে। কম সুদ মিলবে পাঁচ বছরের এনএসসি থেকে শুরু করে ডাকঘরের সমস্ত মেয়াদি আমানতে। এক বছরের মেয়াদি জমায় তা ৮.৪% থেকে কমে দাঁড়াচ্ছে ৭.১%। এক ধাক্কায় নেমে যাচ্ছে ১৩০ বেসিস পয়েন্ট (বিস্তারিত সঙ্গের সারণিতে)।

গত মাসে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ ছাঁটাইয়ের ইঙ্গিত দেওয়ার সময় কেন্দ্রের দাবি ছিল, তার আওতায় রাখা হবে না শিশুকন্যা এবং প্রবীণদের প্রকল্পগুলিকে। কিন্তু এ দিন দেখা গেল, রেয়াত করা হয়নি সেগুলিকেও। হাত পড়েছে শিশুকন্যাদের জন্য চালু সুকন্যা সমৃদ্ধি, প্রবীণ নাগরিক প্রকল্প, এমনকী পাঁচ বছরের মাসিক আয় প্রকল্পের সুদেও। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আক্রমণ শানাতে শুরু করেছে বিরোধী দলগুলি। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সঙ্ঘ পরিবারের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-ও।

Advertisement

কেন্দ্রের অবশ্য যুক্তি, স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ ছাঁটাইয়ের এই সিদ্ধান্ত আসলে সংস্কারেরই অঙ্গ। ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতির চাকায় গতি ফেরাতে কয়েক দফায় ১২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ (রেপো রেট) ছাঁটাই করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু ওই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি সুদ কমিয়েছে ৭০ বেসিস পয়েন্ট মতো। অর্থাৎ, শীর্ষ ব্যাঙ্কের সুদ ছাঁটাইয়ের সুফল পুরোপুরি পৌঁছয়নি সাধারণ মানুষের দরজায়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির যুক্তি ছিল, স্বল্প সঞ্চয়ে সুদের হার চড়া। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমানতে সুদ গুনতে হচ্ছে তাদের। কমানো যাচ্ছে না তহবিল সংগ্রহের খরচ। ফলে ছাঁটাই করা সম্ভব হচ্ছে না ঋণে সুদের হারও। এ বিষয়ে এমনকী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনও বলেছিলেন, স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ নামলে, তবেই তহবিল সংগ্রহের খরচ কমবে ব্যাঙ্কগুলির। সে ক্ষেত্রে ঋণে সুদ কমলে, কিছুটা হাল্কা হবে বাড়িঋণ, গাড়িঋণের মাসিক কিস্তি। ধারের বোঝা কমবে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলিরও। দেখা যাচ্ছে, এ দিন ছাঁটাইয়ের পরে ডাকঘরে অনেক প্রকল্পের সুদই এসে গিয়েছে ব্যাঙ্কের হারের কাছাকাছি। কেন্দ্রের দ্বিতীয় যুক্তি হল, সরকারি ঋণপত্রের রিটার্নের তুলনায় বেশি হারে স্বল্প সঞ্চয়ে যে সুদ দেওয়া হত, তা আসলে ঘুরপথে ভর্তুকি। ফলে সুদ ছাঁটাই করে আদপে ভর্তুকির বোঝাই কমাতে চেয়েছে তারা।

কিন্তু এ দিন সন্ধ্যেয় স্পষ্ট যে, ইপিএফে কর বসানোর মতো এই সুদ ছাঁটাই নিয়েও ঘরে-বাইরে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে কেন্দ্রকে। বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায় আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘এ হল সরকারের ভুল আর্থিক নীতির কুফল। মানুষকে চিরাচরিত সঞ্চয়ে নিরুৎসাহ করে শেয়ার বাজারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আর্থিক নীতির আমূল বদল দরকার।’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মতে, দেশে সামাজিক সুরক্ষা বাড়ন্ত। তার উপর এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষকে স্বল্প সঞ্চয়ে নিরুৎসাহ করবে। আমজনতার উপর কোপের অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সূর্যেওয়ালা। এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে মোদী সরকারের গায়ে ‘স্যুট-বুট কি সরকারের’ তকমা সেঁটে দিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মতে, এতে চিট ফান্ড-ক্যাসিনো ধনতন্ত্রেরই বাড়বাড়ন্ত হবে। তবে তৃণমূলের অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে আগ্রহী অনেকেই। কারণ, এক দিকে রাজনীতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অন্য দিকে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমলে যে পশ্চিমবঙ্গকে অনেকটাই কম সুদ দিতে হবে, সে কথা মনে করাচ্ছেন অনেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement