রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। —ফাইল চিত্র।
গত বছর গ্রীষ্মে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বহু গ্রাহক বিদ্যুতের বিল মাত্রাতিরিক্ত এসেছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। এসি, মাইক্রোওভেন বা ওয়াশিং মেশিনের মতো বৈদ্যুতিন পণ্য নেই, এমন অনেক বাড়িতেও বিলের অঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করেন একাংশ। তবে সংস্থা এবং রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর বলেছিল, গ্রাহকের ব্যবহৃত ইউনিট অনুসারেই ধার্য হয় মাসুল। যদিও তার পরেই গ্রাহক-সহ সংশ্লিষ্ট মহল ফের বণ্টন সংস্থার তিন মাসের বিল একসঙ্গে দেওয়ার নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হন। প্রশ্ন তোলেন, সিইএসই-র মতো প্রতি মাসে তা পাঠানো হবে না কেন? শুক্রবার সাঁওতালডিহি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে একই প্রশ্নের মুখে পড়লেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। এই প্রেক্ষিতে জানালেন, বণ্টন সংস্থার এলাকায় মাসে বিদ্যুতের বিল পাঠানো কঠিন। তাঁর এটাও দাবি, প্রায় সব গ্রাহকই তিন মাসে বিল দিতে আগ্রহী!
বণ্টন সংস্থার গ্রাহকদের একাংশের আশঙ্কা, তিন মাসের বিল একসঙ্গে দেওয়া হয় বলে বিদ্যুৎ খরচের ইউনিট বাড়ে। ফলে পরের উঁচু ধাপের মাসুল গুনতে হয়। প্রতি মাসে বিল দিলে এই আশঙ্কা থাকে না। তাই খরচের চাপও কমে। কোনও মাসে বেশি বিল এলে, পরের মাসে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন সাধারণ গৃহস্থ। বিরোধী দলগুলিও সিইএসসি-র মতো প্রতি মাসে বিল দেওয়ার দাবি তোলে। এ দিন অবশ্য বাড়তি ইউনিটের মাসুল চাপার আশঙ্কা অমূলক বলে দাবি মন্ত্রীর।
সিইএসসি এলাকা প্রতি মাসেই বিদ্যুতের বিল পান গ্রাহক। তবে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার গ্রাহক সংখ্যা তাদের তুলনায় ছ’গুণেরও বেশি। এর আগেও সংস্থা সূত্রের দাবি ছিল, তাদের এলাকা সিইএসসি-র চেয়ে অনেক বড় হওয়ায় প্রতি মাসে বিদ্যুতের হিসাব সংগ্রহ করে বিল দেওয়ার কর্মকাণ্ড সংস্থার আর্থিক চাপ বাড়াবে।
বিরোধী দল থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের নানা সংগঠনের তিন মাসের বদলে প্রতি মাসে বিদ্যুতের বিল দেওয়ার প্রসঙ্গে এ দিন বিদ্যুৎমন্ত্রী সাঁওতালডিহিতে বলেন, ‘‘এটা বলা খুব সহজ। কিন্তু কাজে করা কঠিন। কারণ অনেকবার এ নিয়ে সমীক্ষা করেছি। মাসে মাসে গ্রাহকেরা বিল মেটালে যে টাকাটা পাব তাতে হয়তো আমাদের আর্থিক বৃদ্ধি হবে। কিন্তু ২.২৫ কোটি গ্রাহকের অধিকাংশই গ্রামীণ এলাকার। কলকাতা-সহ হাওড়া, হুগলির একাংশে বিদ্যুৎ জোগান দেয় সিএসসিই। বাকি পুরোটা দিই আমরা। কিন্তু আমাদের ২.২৫ কোটি গ্রাহক চান তিন মাসে যেমন বিল দিচ্ছেন, সেই সুবিধাই পেতে।’’
একসঙ্গে বিল হলে ইউনিটের মাসুল বেশি হওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অরূপের দাবি, ‘‘এটা আদৌ হয় না। তিন মাসের বিলে ইউনিট প্রতি চার্জ বেশি পড়ে না। তিন মাসেও যা, তিন বছরেও তা-ই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই একমাত্র গোটা দেশে ৭.১২ টাকায় বিদ্যুৎ দেয়। কয়লার দাম বেড়েছে। কয়লার অভাব ছিল। অন্য অনেক রাজ্য তা আমদানি করেছে। কিন্তু আমরা তা-ও আমাদের কয়লাখনি থেকে উৎপাদন করে মাসুল ওই ৭.১২ টাকাই রেখেছি।’’