Power Cut

বাড়ছে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা

বিভিন্ন পরিসংখ্যানের জেরে বাজারে জোর জল্পনা, চাহিদা বাড়লেও নতুন তাপ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে দেরি হয়েছে ভারতে। ফলে আগামী এপ্রিল-মে মাসে রাতের দিকে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হতে পারে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি, বেঙ্গালুরু ও সিঙ্গাপুর শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ০৮:৩৬
Share:

তাপ ও জলবিদ্যুতের সরবরাহ বৃদ্ধির হার প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই দুশ্চিন্তা বাড়ছে। প্রতীকী ছবি।

গত গ্রীষ্মের দুঃস্বপ্ন কি ফিরবে এ বছরেও?

Advertisement

বিভিন্ন পরিসংখ্যানের জেরে বাজারে জোর জল্পনা, চাহিদা বাড়লেও নতুন তাপ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে দেরি হয়েছে ভারতে। ফলে আগামী এপ্রিল-মে মাসে রাতের দিকে বিদ্যুৎ পরিষেবা বিঘ্নিত হতে পারে। সৌর বিদ্যুতের জোগান আগের থেকে বেড়েছে। তবে রাতে তা পাওয়া যায় না। তাপ ও জলবিদ্যুতের সরবরাহ বৃদ্ধির হার প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই দুশ্চিন্তা বাড়ছে। যদিও আশঙ্কা উড়িয়ে কেন্দ্রের দাবি, লোডশেডিং রুখতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আগাম ও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সংস্থাগুলিকে নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবার নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মন্ত্রী।

গ্রিড কন্ট্রোলার অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক নোটে ইঙ্গিত, পরিস্থিতি ঘোরালো। এপ্রিলে রাতের দিকে বিদ্যুতের জোগান চাহিদার চেয়ে ১.৭% কম থাকতে পারে। তখন সর্বোচ্চ চাহিদা ২১৭ গিগাওয়াট হতে পারে, যা গত বছরের এপ্রিলের (যখন চাহিদা নজির গড়েছিল) চেয়েও ৬.৪% বেশি। কারণ, এ বার গ্রীষ্মে দাবদাহ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার (এসি) ব্যবহার বাড়তে পারে। ফলে বিদ্যুৎ লাগবে বেশি। কিন্তু চাহিদা মেটানো সম্ভব না হলে লোডশেডিংয়ে গৃহস্থের কাবু হওয়ার আশঙ্কা তো থাকছেই। সারা দিন-রাত যে সব শিল্প (গাড়ি, বৈদ্যুতিন, ইস্পাতের বার, সার ইত্যাদি) চালু থাকে, রাতে লোডশেডিং হলে ঝুঁকি বাড়বে তাদেরও। কাগজ শিল্পের প্রাক্তন কর্তা পি জি মুকুন্দন নায়ারের দাবি, এক মিনিট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে এই শিল্পে উৎপাদন ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হয়ে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট মহলের খবর, কয়লা, পারমাণবিক এবং গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র মিলিয়ে রাতের সর্বোচ্চ চাহিদার প্রায় ৮৩% পূরণ করা সম্ভব। বাকিটার জন্য জলবিদ্যুৎ শুধু দূষণহীন বিকল্প নয়, এটি তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের থেকে দ্রুত পরিস্থিতি অনুযায়ী জোগান দিতে পারে। কিন্তু গ্রিড ইন্ডিয়ার পূর্বাভাস বলছে, এপ্রিলে সর্বোচ্চ চাহিদার সময়ে তার জোগান ১৮% কম হতে পারে।

গত পাঁচ বছরে দেশে সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা চার গুণ বেড়েছে। গত এপ্রিলে দিনের চাহিদার ১৮% মিটিয়েছে। কিন্তু সূর্যাস্তের পরে মূল ভরসা যে তাপ বিদ্যুৎ, পাঁচ বছরে তার উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে মাত্র ৯%। প্রায় ২৬টি কেন্দ্রের (মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৬.৮ গিগাওয়াট) নির্মাণকাজ এক বছরেরও বেশি দেরি হয়েছে। কয়েকটির ক্ষেত্রে দেরি ১০ বছরের বেশি। পরিবেশ সংক্রান্ত বিরোধিতা, জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ নিয়ে আইনি জটিলতা-সহ নানা কারণে প্রকল্প থমকেছে। প্রস্তাবিত জল ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রেও এমন নানা প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি বিদেশি লগ্নির অভাব দেখা গিয়েছে।

যদিও বিদ্যুৎ সচিব অলোক কুমারের দাবি, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা এড়াতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সব রাজ্যেই জোগান ঠিক রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎমন্ত্রী আর কে সিংহ বিদ্যুৎ, কয়লা, রেল মন্ত্রকের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। আগাম ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন।

বিদ্যুৎ মন্ত্রক এ জন্য বহুমুখী কৌশল নিয়েছে। তাদের দাবি, ভরা গ্রীষ্মের অনেক আগেই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সারতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে। যথেষ্ট কয়লা মজুত রাখা হবে প্রতিটিতে। এ জন্য আপাতত ৪১৮টি রেক এবং পরে প্রয়োজন মতো জোগানের আশ্বাস দিয়েছে রেল। আমদানিকৃত কয়লা নির্ভর কেন্দ্রগুলিকে ১৬ মার্চ থেকে পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন চালাতে বলা হয়েছে। গ্যাস ভিত্তিক কেন্দ্রগুলিকেও তৈরি রাখা হচ্ছে। জলের সর্বোচ্চ ব্যবহার করার জন্য পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে। মার্চের শেষে নতুন কয়েকটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ৩০০০ মেগাওয়াট জোগানও শুরু হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement