ছবি: এএফপি
তেরো বছর আগে এই সেপ্টেম্বরেরই এক সোমবারে ধস নেমেছিল আমেরিকার শেয়ার বাজারে। জানা গিয়েছিল, তার আগের রাতেই নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক লেম্যান ব্রাদার্স। সেই শুরু। তার পরের ক’বছরে যার ধাক্কা লাগে বিশ্ব অর্থনীতিতে। মন্দায় তলিয়ে যায় একের পর এক দেশ। সেই স্মৃতিই যেন ফিরে এল এ সপ্তাহে। যখন জানা গেল, বিপুল বকেয়ার বোঝা কাঁধে নিয়ে দেউলিয়া হওয়ার মুখে চিনের অন্যতম বৃহৎ আবাসন সংস্থা এভারগ্রান্ড। যা সত্যি হলে, করোনার জেরে ধুঁকতে থাকা বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা। এই অবস্থায় সংস্থার হাল ধরতে চিনের সরকার মাঠে নামে কি না, সে দিকেই নজর সব মহলের।
১৯৯৬ সালে শু জিয়াইনের হাতে তৈরি এভারগ্রান্ড ব্যবসা করে নির্মাণ, বৈদ্যুতিক গাড়ি, মিনারেল ওয়াটার, থিম পার্ক, স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে। কর্মী ২ লক্ষের বেশি। পরোক্ষে জড়িত আরও ৩৮ লক্ষ। হাতে ২৮০টি শহরে ১৩০০টি প্রকল্প। মোট সম্পত্তি প্রায় ৩৫,০০০ কোটি ডলার। ২০১৭ সালে চিনের ধনীতম উদ্যোগপতির তকমাও পান শু। সেই সংস্থার অবস্থা এখন এতটাই সঙ্গীন যে, গত জুনের হিসেবে বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩১,০০০ কোটি ডলার। এক বছরের মধ্যে মেটাতে হবে ৩৭৩০ কোটি। এই বৃহস্পতিবারই দিতে হবে ৮.৩ কোটি ডলারের সুদ। অথচ সংস্থার হাতে নগদ রয়েছে প্রায় ১৩৫০ কোটি ডলার। তার উপরে গত ক’মাসে কমেছে বিক্রি, প্রায় ৮৫% পড়েছে শেয়ারদর। ফলে বৃহস্পতিবার সুদও হয়তো মেটাতে পারবে না তারা।
আর সেই কারণেই চিন্তা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, গত ক’বছরে ঋণের রাশ টানতে উদ্যোগী হয়েছে চিন।সংস্থাগুলির যথেচ্ছ ঋণেও রাশ টানছে তারা। নতুন ঋণে চাপছে কড়াকড়ি। এমনকি ধারে জর্জরিত বেশ কিছু সংস্থাকে ‘শিক্ষা দিতে’ সাহায্য না-করে দেউলিয়া হওয়ার জন্যও ছেড়ে দিয়েছে চিন। এই অবস্থায় এভারগ্রান্ডেও তারা সরাসরি টাকা ঢালবে বলে মনে হয় না। ফলে সংস্থা তো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই, সঙ্গে বিশ্ব বাজারও।
অন্য অংশের যদিও মতে, লেম্যান ব্রাদার্সের সঙ্গে এভারগ্রান্ডের তুলনা ঠিক নয়। লেম্যানের লগ্নি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক প্রকল্পে। কিন্তু এভারগ্রান্ডের প্রায় ২১,৫০০ কোটি ডলারের জমি ও প্রকল্প আছে। চিনের বাড়ি-বাজারও বেশি নিয়ন্ত্রিত। ফলে সংস্থা ধাক্কা খেলেও তার জের অন্য দেশে পড়ার সম্ভাবনা কম। যে আশায় আজ উঠেছে ভিন্ন দেশের শেয়ার বাজার। তা ছাড়া বেজিং টাকা না-ঢাললেও, ঋণ পুনর্গঠন করতে পারে। ফলে চিন্তার কিছু নেই।
সংবাদ সংস্থা