—ফাইল চিত্র
করোনার দাপট বহাল থাকলেও, দেশে আর্থিক কর্মকাণ্ডের চাকা গড়াতে শুরু করেছে। হারিয়ে যাওয়া আয় ও সঞ্চয়ের কিছুটা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা চলছে। তার মধ্যেই পকেটে ফের ছেঁকা ঊর্ধ্বমুখী পেট্রল-ডিজেলের দরের। মাস দুয়েক দাম স্থির থাকলেও, তার আগে বেশ কিছু দিন টানা বাড়ায় যেগুলি এই মুহূর্তে যথেষ্ট দামি। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির দাবি, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল এবং ওই দুই জ্বালানির দর বাড়ছে বলে দেশে তার প্রভাব পড়ছে। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে শিল্প থেকে সাধারণ মানুষ।
সকলেরই প্রশ্ন, অশোধিত তেল ৪১- ৪২ ডলারে থাকতেই প্রায় রেকর্ডের কাছাকাছি পৌঁছেছিল পেট্রল-ডিজেল। এখন ব্রেন্ট ক্রুড ৪৪ ডলার। তা হলে এ বার তা কোথায় পৌঁছবে?
আজ, শনিবার কলকাতায় ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্পে লিটারে পেট্রল, ডিজেল মিলবে যথাক্রমে ৮২.৯৫ ও ৭৪.৪৫ টাকায়।
লকডাউনে টানা ৮২ দিন থমকে থাকার পরে (মাঝে ১ এপ্রিল রাজ্য কর ছাড় তোলায় দুই জ্বালানির দরই লিটারে এক টাকা করে বেড়েছিল) ৭ জুন দাম বাড়ায় তেল সংস্থাগুলি। তার পর কিছু দিন দাম টানা বেড়েছে। পরে কখনও একটু কমে, কখনও থেমে থাকে।
দাম বৃত্তান্ত
• শুক্র, শনি দু’দিনে লিটারে পেট্রল বাড়ল ৩৬ পয়সা, ডিজেল ৪৬ পয়সা।
• এর আগে করোনাকালেই দেশে টানা অনেকটা বেড়ে পেট্রলের দর স্থির ছিল ৫৮ দিন। ৮২ টাকার (দিল্লিতে) কাছাকাছি গিয়ে ডিজেলও থেমে থাকে ৪৮ দিন।
• তেল সংস্থার দাবি,
বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর তেমন হেরফের হয়নি, তাই কিছু দিন দেশে দাম বদলায়নি।
• শিল্প, পরিবহণ ও
সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, বিশ্ব বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড ব্যারলে ৪১ ডলারের আশেপাশে থাকতেই দেশে দাম চড়ছিল তেলের। এখন অশোধিত তেল ৪৪ ডলার। তা হলে পেট্রল, ডিজেল কোথায় পৌঁছবে?
• সকলেরই প্রশ্ন, করোনার আবহে সকলকে সুরাহা দিতে তেলের দাম বাড়ানো রুখতে কেন্দ্র উৎপাদন শুল্ক কমাচ্ছে না কেন?
তারিখ ব্রেন্ট ক্রুড* পেট্রল** ডিজেল**
• ২১ সেপ্টেম্বর ৪১.৬৯ ৮২.৬৭ ৭৪.৯৪
• ২২ সেপ্টেম্বর ৪১.৮০ ৮২.৫৯ ৭৭.৮০
• ১ অক্টোবর ৪০.৭০ ৮২.৫৯ ৭৪.০৫
• ২ অক্টোবর ৩৮.৯০ ৮২.৫৯ ৭৩.৯৯
• ১৯ নভেম্বর ৪৪.৫১ ৮২.৫৯ ৭৩.৯৯
• ২০ নভেম্বর ৪৪.৫৪ ৮২.৭৯ ৭৪.২৪
• ২১ নভেম্বর — ৮২.৯৫ ৭৪.৪৫
*বিশ্ব বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড অশোধিত তেলের দর ব্যারেল পিছু ডলারে
**কলকাতায় ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্পে পেট্রল, ডিজেলের দাম লিটার পিছু টাকায়
একাংশের অভিযোগ, বিশ্ব বাজারের দোহাই দিয়ে দাম যে হারে বাড়ে, সেই হারে কমায় না তেল সংস্থাগুলি।
সম্প্রতি আইওসির কর্তা শ্রীকান্ত মাধব বৈদ্যের ইঙ্গিত ছিল, অশোধিত তেল প্রায় একই (ব্যারেলে ৩৯-৪২ ডলার) থাকায় দেশে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। প্রশ্ন ওঠে, অশোধিত তেলের দাম সামান্য বাড়তেই কেন তবে তড়িঘড়ি পেট্রল-ডিজেল এতটা বাড়াল সংস্থাগুলি? বিরোধীদের অভিযোগ, তা হলে মার্চ নাগাদ সময়ে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম শূন্যের নীচে নামার পরে মানুষ তার সুবিধা পেলেন না কেন? উল্টে কেন্দ্র তেলে বাড়তি শুল্ক চাপিয়ে আয় বাড়ায়। ফলে তেল সংস্থার আয়ে কোপ পড়ে। সংস্থাগুলিও বলেছে, দাম বাড়াতে হয় সেই ঘাটতি পোষাতেই। এই দফায় ফের দাম বৃদ্ধি শুরু হতেই তাই শুল্ক না-কমানো নিয়ে অসন্তোষ দানা বাঁধছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, জ্বালানি খরচ বাড়লে পরিবহণ খরচ বাড়বে।
তাতে করোনা সঙ্কট ও কোমরভাঙা অর্থনীতিতে জিনিসের দাম বাড়লে বিপাকে পড়বেন মানুষ। কারণ, এমনিতেই খাদ্যপণ্যের দাম আগুন।