Insurance Premium Hike

আশঙ্কা সত্যি করে প্রিমিয়াম বাড়ছে এলআইসির, কোপ ‘ক্রিটিক্যাল ইলনেস রাইডারেও’

সকলকে বিমার অধীনে আনতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, চড়া মূল্যবৃদ্ধির জমানায় বেশি প্রিমিয়াম দিতে না পেরে বিমা প্রকল্প ছাড়ছেন আমজনতার একাংশ।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৬:৪৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

জীবন বিমা পলিসি বন্ধ (সারেন্ডার) করলে যাতে গ্রাহক আগের থেকে বেশি টাকা পান, তা নিশ্চিত করতে এসেছে নতুন নিয়ম। কিন্তু এর ফলে ঘাড়ে চাপা বাড়তি বোঝা হালকা করতে প্রিমিয়াম বৃদ্ধি-সহ নানা পদক্ষেপ করছে বিমা সংস্থাগুলি। যেমন, জীবন বিমা নিগমের (এলআইসি) সিদ্ধান্ত অনুসারে, বিভিন্ন প্রকল্পে প্রিমিয়াম তো বাড়ছেই। সেই সঙ্গে এনডাওমেন্ট পলিসিতে থাকছে না দুরারোগ্য রোগের সুরক্ষা বাবদ বাড়তি বিমা করানোর সুবিধা বা ক্রিটিক্যাল ইলনেস রাইডার। কমেছে সংস্থার এজেন্টদের কমিশনও। বলা হয়েছে, এনডাওমেন্টে ন্যূনতম বিমামূল্য হচ্ছে দ্বিগুণ। ১ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে ২ লক্ষ। আগে ৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত বিমা কেনা যেত, সেটাও কমে হয়েছে ৫০ বছর।

Advertisement

সকলকে বিমার অধীনে আনতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, চড়া মূল্যবৃদ্ধির জমানায় বেশি প্রিমিয়াম দিতে না পেরে বিমা প্রকল্প ছাড়ছেন আমজনতার একাংশ। খোদ মোদী সরকারের অন্দরমহলেই প্রিমিয়ামে কর তোলার দাবি উঠেছে, যা নিয়ে কথা বলেছে জিএসটি পরিষদ। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, এই অবস্থায় নতুন নিয়মে কম গ্রাহককে অতিরিক্ত সুবিধা দিতে গিয়ে বৃহত্তর অংশের উপরে বাড়তি আর্থিক বোঝা চাপানো হচ্ছে না তো? তাদের মতে, আগামী দিনে এলআইসি-র দেখানো পথে হাঁটতে পারে বাদবাকি জীন বিমা সংস্থা। ফলে প্রিমিয়াম বাড়ায় ও প্রকল্পের নানা সুবিধা কমায় বিমার আওতায় বেশি মানুষকে আনার প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।

এলআইসি-র পদক্ষেপে জীবন বিমা বিক্রি ধাক্কা খাবে বলে অভিযোগ সংস্থার এজেন্টদের সর্বভারতীয় সংগঠন এলআইসি এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি শ্যামল চক্রবর্তীর। তিনি বলেন, “ন্যূনতম বিমার অঙ্ক ২ লক্ষ টাকা করায় গ্রাহকদের প্রায় দ্বিগুণ প্রিমিয়াম দিতে হবে। এতে মূলত ক্ষতি হবে গ্রামের মানুষের। আমরা ১ লক্ষের ছোট ছোট পলিসি করিয়ে তাঁদের বিমার আওতায় আনতাম। এখন অনেকেই প্রকল্প কিনতে পারবেন না। এতে কেন্দ্রের সব মানুষকে বিমার আওতায় আনার লক্ষ্য পূরণ ব্যাহত হবে। পাশাপাশি, কমিশন ছাঁটায় প্রকল্প বিক্রিতে উৎসাহ হারাবেন এলআইসি-র এজেন্টরা। বিভিন্ন সুবিধা কমায় প্রকল্প সারেন্ডারের প্রবণতা বৃদ্ধিরও আশঙ্কা থাকছে।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, এনডাওমেন্ট পলিসিতে ক্যানসার, কিডনি বিকল, হৃদযন্ত্র খারাপের মতো কিছু রোগে বিমাকারী মারা গেলেও বিমার টাকা পাওয়া যায়। এ জন্য বাড়তি প্রিমিয়াম দিয়ে মূল প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে ‘রাইডার’ কিনতে হয়। নতুন ব্যবস্থায় এই সুবিধা তুলে দিয়েছে এলআইসি।

ন্যূনতম বিমা দ্বিগুণ হওয়ায় প্রকল্প বিক্রিতে অসুবিধা হবে বলে মত এলআইসি-র বিপণন বিভাগের প্রাক্তন আঞ্চলিক অধিকর্তা অরূপ দাশগুপ্তেরও। তবে তিনি বলেন, “বেশি অঙ্কের পলিসি কেনার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই কম অঙ্কের বিমা করান। নতুন ব্যবস্থায় বেশি অঙ্কেরই কিনতে হবে। এতে জীবনের সুরক্ষার বিষয়টি আরও পোক্ত হবে।’’ যদিও সারেন্ডারে বিমাকারীকে উৎসাহিত করা ঠিক নয় বলে জানাচ্ছেন তিনিও।

তবে নতুন ব্যবস্থায় বিমা বন্ধের প্রবণতা বাড়বে বলে মনে করেন না এসবিআই লাইফের প্রাক্তন এমডি অতনু সেন। তাঁর যুক্তি, “অনেক সময়ে শর্তগুলি না বুঝিয়েই পলিসি বিক্রি করা হয়। বিমা সারেন্ডারের যা অন্যতম কারণ। আশা করব, সংস্থাগুলি সতর্ক হবে। তবে মোট পলিসির ১৫%-২০% সারেন্ডার হয়। তাই অল্প গ্রাহককে বাড়তি সুবিধা দিতে গিয়ে সকলের প্রিমিয়াম না বাড়ালেই ভাল হত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement