প্রতীকী ছবি।
অবসর নেওয়ার পরে কারও বছর পাঁচেক গড়িয়ে গিয়েছে, কারও প্রায় তিন। কেউ আবার গত বছর দাঁড়ি টেনেছেন চাকরি জীবনে। কিন্তু এখনও পেনশন পাননি কেউই। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁদের হকের পাওনা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলছেন সারা দেশের এমন কয়েক’শো অফিসার। শুধু পূর্ব ভারতে যাঁদের সংখ্যা ১৫৪। এঁদের বেশিরভাগই বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে (এটিসি) চাকরি করতেন।
ক্ষোভে ফেটে পড়তে পড়তে প্রাক্তন আধিকারিকেরা বলছেন, অবসরের তিন-চার মাসের মধ্যেই পেনশন পাওয়ার কথা। সেখানে অনেকের চার-পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। অবসরের সময়ে পাওয়া এককালীন টাকা ভাঙিয়ে কোনও রকমে চালাচ্ছেন কেউ কেউ। তবে প্রয়োজনীয় খরচ সামলাতে গিয়ে অনেকেই দিশাহারা। বিশেষত করোনা হানায় জীবনযাপন আরও অনিশ্চিত হয়ে ওঠার পরে। যে কারণে এ নিয়ে ক্ষোভের পারদ চড়ছে। গোটা ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহল আঙুল তুলছে সেই লাল ফিতের ফাঁসের দিকেই।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অবশ্য যুক্তি, বেতন বাড়ানো নিয়ে দু’টি মামলা চলছে। তার ফয়সালার জন্যই আটকে ছিল পেনশন। এখন অনেকেই তা পেতে শুরু করেছেন। বাকিরাও দ্রুত পাবেন।
এটিসি গিল্ডের পূর্ব ভারতের সম্পাদক কৈলাশপতি মণ্ডলের দাবি, এঁরা কেন্দ্রের অধীনে সিভিল এভিয়েশন ডিপার্টমেন্টে (ক্যাড) ছিলেন। ১৯৮৯ সালে সিদ্ধান্ত হয় ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট অথরিটি (এনএএ) এবং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (আইএএআই) নামে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হবে। ক্যাডের অফিসারদেরও দু’টি সংস্থায় ভাগ করে পাঠানো হয়। কৈলাশপতি জানান, যাঁরা ১০ বছরের বেশি ক্যাডে চাকরি করে ১৯৮৯ সালে এনএএ-তে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা পরবর্তীকালে বেতনের সঙ্গে পেনশনও পেতে শুরু করেন। কিন্তু বাকিরা তা পাননি। ফলে আন্দোলন শুরু হয়। ২৮ বছর ধরে সেই আন্দোলন চলার পরে তাঁদের দাবি মেনে নেয় কেন্দ্র। ২০১৭ সালে নির্দেশ দেয়, এককালীন থোক টাকা বা পেনশন, অবসরের সময় যে কোনও একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন তাঁরাও।
কৈলাশপতি-সহ সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, নির্দেশ সত্ত্বেও সেই পেনশন না-মেলার কারণ লাল ফিতের ফাঁস। যাঁদের দাবি নিয়ে আন্দোলন হল, তাঁরা ২০১৫ সালের পর থেকে যেই অবসর নিতে শুরু করলেন, পেনশন আটকে গেল। অনেকে এককালীন টাকা নিলেও, অফিসারদের বড় অংশ পেনশনের জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করেন। কিন্তু ফাঁস এখনও খোলেনি।
২০১৫ সালে অবসর নিয়েছিলেন বিভাস কর। এখনও আশায় আশায় বসে। বললেন, “শুনেছি কাজ নাকি অনেকটাই এগিয়েছে। লকডাউনের জন্য আটকে আছে। আশা করি লকডাউনের পরে পেয়ে যাব।”
গত বছর অবসর নেওয়ার পরে মেয়ের পড়াশোনার জন্য ভুবনেশ্বরে রয়েছেন কলকাতার সুনীতি রায়। তাঁর কথায়, “ছেলে-মেয়ে দুজনেই পড়ছে। পড়ানোর খরচ, সংসার চালানোর খরচ জমানো টাকা ভাঙিয়ে চলছে।”
কৈলাশপতির তোপ, ‘‘এই অবসর নেওয়া মানুষগুলোর অনেকেই অসুস্থ। চিকিৎসার খরচ, ছেলে-মেয়েদের পড়ানো বা বিয়ের মতো অনুষ্ঠানের খরচ চালাতে গিয়ে কার্যত নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় অনেকেরই। অথচ পেনশনের দেখা নেই।’’