প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক সময়ে একশো দিনের কাজকে ‘গর্ত খোঁড়ার’ কাজ বলে কটাক্ষ করলেও, অতিমারির সময় থেকে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে তার উপরেই ভরসা রেখেছে তাঁর সরকার। সেই সঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে সমাজের সব স্তরে পৌঁছে দিতে এই প্রকল্পে আধারের মাধ্যমে সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার (ডিবিটি) প্রক্রিয়া নিয়েও ঢাক পিটিয়েছে তারা। এ বার সেই প্রকল্পেরই খামতি নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রকে আক্রমণ করলেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের দাবি, আদতে আধার এবং প্রযুক্তিকে ‘হাতিয়ার করে’ সমাজের সব চেয়ে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের কাছেই সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পটির সুবিধা পৌঁছতে দিচ্ছে না মোদী সরকার। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে এর প্রভাব যাতে না পড়ে সে জন্য ক্রমশই নতুন প্রযুক্তি ব্যবস্থা চালুর সময়সীমা বাড়াচ্ছে। আর সিপিএমের কটাক্ষ, এই প্রকল্পের প্রযুক্তি ব্যবস্থার সমস্যার জেরে বহু কর্মীই ন্যায্য মজুরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বুধবার নির্দেশিকায় কেন্দ্র বলেছে, একশো দিনের আধার-ভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেমের (এবিপিএস) অগ্রগতির পর্যালোচনা এবং মজুরি প্রদানের যৌথ ব্যবস্থা (নাচ এবং এবিপিএস রুট) ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ পর্যন্ত বা পরবর্তী নির্দেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। রাজ্যগুলিকে জানানো হয়েছে, কর্মীর আধার নম্বর পেশের জন্য অনুরোধ করা হবে, কিন্তু এ জন্য তাঁদের কাজ বাতিল করা যাবে না। এবিপিএস-এর জন্য উপযুক্ত নয়, এই কারণ দেখিয়ে বাতিল করা যাবে না কোনও শ্রমিকের জব কার্ডও। এই সময়সীমা ছিল ৩১ অগস্ট।
এক বিবৃতিতে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের যদিও অভিযোগ, চার বার সময়সীমা বাড়ানো হলেও মোট ২৬ কোটি জব কার্ড থাকা মানুষের ৪১.১ শতাংশই নতুন ব্যবস্থার যোগ্য নন। সরকারের দাবি ছিল, সেই সংখ্যা হবে ১৮.৩%। কেন্দ্রের তথ্যই বলছে, সময়সীমা না বাড়লে ২.৬ কোটি কর্মী ১ সেপ্টেম্বর থেকে মজুরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন। এর বাইরেও বহু মানুষের জব কার্ড বাতিল হয়েছে। আর এ বার আসন্ন ভোটের কারণেই প্রযুক্তি নিয়ে ‘গবেষণা’ করে সময়সীমা বাড়িয়ে আসল অবস্থা এড়িয়ে যেতে চাইছে মোদী সরকার।
প্রায় একই মত পেশ করে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন সিপিএমের বৃন্দা কারাটও। তাঁর দাবি, বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে যে ছবি তিনি দেখতে পেয়েছেন, তাতে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে সমস্যায় পড়ছেন মূলত মহিলারা। যাঁরা কি না এর একটা বড় অংশ। বহু ক্ষেত্রে প্রযুক্তি সমস্যায় দিনের হাজিরা খাতায় নাম না লেখাতে পারার ঘটনা ঘটছে। ফলে কাজ করলেও, মজুরি মিলছে না। কোথাও আবার দীর্ঘ সময় চলেছে সেই নাম লেখাতেই। দেশের গ্রামাঞ্চলেই যেখানে সাধারণত এর কাজ বেশি হয়, সেখানেই ঠিকমতো যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ইন্টারনেট না থাকার সমস্যায় ভুগছে প্রকল্পটি।
এই সমস্ত সমস্যার কারণে আদতে প্রকল্পের লক্ষ্যই ব্যর্থ হচ্ছে। আধার তথা প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে মোদী সরকার সমাজের নীচের স্তরে সামাজিক সুরক্ষা পৌঁছচ্ছে না বলেও অভিযোগ কংগ্রেসের।