অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।
গত এক দশকে মোদী সরকার কেন্দ্রীয় বাজেটের ধারণাই বদলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাঁর দাবি, অতীতে বাজেট ছিল স্রেফ আয়-ব্যয়ের হিসাব। এখন সরকারের আয় কী ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঢালা হচ্ছে, তার একটা স্পষ্ট দিশা ফুটিয়ে তোলা হয়। আর বাজেটে স্বচ্ছতা বাড়লে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ) এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতো আর্থিক সংস্থাগুলির কাছেও ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে। বিরোধীরা অবশ্য অর্থনীতির বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ক্রমাগত কেন্দ্রের উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়ে চলেছে। সংশ্লিষ্ট মহলও বলছে, নির্মলা আর্থিক নিয়মানুবর্তিতার দাবি করলেও গত কয়েক বছরে মূল্যায়ন সংস্থাগুলি ভারতের ঋণযোগ্যতা (মূল্যায়ন) বাড়ায়নি। তাতে কেন্দ্রও একাধিক বার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
সোমবার এক্স-এ একগুচ্ছ পোস্ট করে নির্মলার দাবি, অতীতে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার রাজকোষ ঘাটতিকে বিভিন্ন ভাবে ঢেকে রাখার চেষ্টা করত। তার মধ্যে বাজেট বহির্ভুত ধার এবং অয়েল বন্ড ছিল অন্যতম। আর মোদী সরকার গুরুত্ব দিয়েছে বাজেটের বিশ্বাসযোগ্যতায়। তিনি লিখেছেন, ‘‘সাধারণ মানুষের থেকে সংগ্রহ করা প্রতিটি টাকার ন্যায্য এবং কার্যকরী খরচ করেছি আমরা। তার স্বচ্ছ হিসাবও পেশ করেছি।’’
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সাকেত গোখলে অবশ্য এক্স-এই ভারতের সাম্প্রতিক বাণিজ্য ঘাটতি সংক্রান্ত সংবাদমাধ্যমের খবর তুলে ধরে মোদী সরকারকে বিঁধেছেন। যেখানে বলা হয়েছে, গত (২০২৩-২৪) অর্থবর্ষে ১০টি বৃহত্তম বাণিজ্যিক সহযোগীর (চিন, রাশিয়া, ইরাক, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, হংকং, সিঙ্গাপুর এবং আমেরিকা) মধ্যে ন’টির সঙ্গেই ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। চিনের সঙ্গে তা পৌঁছেছে ৮৫০ কোটি ডলারে। ওয়াশিংটনকে পিছনে ফেলে বেজিং হয়ে দাঁড়িয়েছে দিল্লির বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী। তাদের সঙ্গে বাণিজ্যের অঙ্ক ১১,৮৪০ কোটি ডলার ছুঁয়েছে। ভারতের একমাত্র বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আমেরিকার সঙ্গে। এই প্রসঙ্গে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘গালওয়ানের সংঘর্ষের পরেও চিন থেকে আমদানির বহর এত বাড়ল কী ভাবে? তা হলে ঢাকঢোল পিটিয়ে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের প্রচারের অর্থ কী? মোদী সরকারের কি সত্যিই চিন থেকে আমদানি কমানোর সদিচ্ছা আছে?’’ ভারতের বাণিজ্য পরামর্শদাতা সংস্থা জিটিআরআইয়ের শীর্ষ কর্তা অজয় শ্রীবাস্তব বলছেন, ‘‘বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লে ভারতীয় মুদ্রা দুর্বল হবে। কারণ, আমদানির খরচ মেটাতে বেশি দিতে হবে বৈদেশিক মুদ্রা।’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তোপ দেগেছেন, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি এসেছিল ২৭৯৮ কোটি ডলার। গত অর্থবর্ষে তা-ও ৬২.১৭% কমে ১০৫৮ কোটি ডলার কমেছে।