প্রতীকি ছবি
অর্থনীতির আকাশে নতুন করে ওমিক্রনের কালো মেঘ ঘনাতে পারে বলে আশঙ্কায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বসেছে অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু সেখানেই দেশের আর্থিক অবস্থার দুই ছবি দেখছেন মন্ত্রকের কর্তারা। যেখানে এক দিকে, আয় কমা, চাকরি থেকে ছাঁটাই, বেকারত্বর ধাক্কায় সাধারণ মানুষ এখনও খরচ করতে দোনামনা করছেন। ক্ষমতার তুলনায় কম উৎপাদন হচ্ছে কারখানায়। ফলে টান পড়ছে নতুন লগ্নিতে। চোখ রাঙাচ্ছে বাজারদর, বিশেষত জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বাদে অন্যান্য জিনিসের দরের বৃদ্ধি (কোর ইনফ্লেশন)। অন্য দিকে, কর বাবদ আয় ভালই হচ্ছে। বাড়ছে ব্যাঙ্ক ঋণের অঙ্ক। আশার আলো রফতানিতেও।
কর্তারা বলছেন, ইতিবাচক ও নেতিবাচক, একই সঙ্গে এই দুই ইঙ্গিতেই স্পষ্ট যে অর্থনীতি করোনার ধাক্কা যথেষ্ট মাত্রায় কাটিয়ে উঠলেও, তার সুবিধা সকলে পাচ্ছেন না। সংগঠিত কর্পোরেট ক্ষেত্র অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অসংগঠিত ক্ষেত্র এখনও কোভিডের জাঁতাকলে আটকে। তাঁদের আশঙ্কা, একেই উৎসবের মরসুমে কেনাকাটা বা চাহিদা সরকারের প্রত্যাশা মাফিক বাড়েনি। গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধছে মূল্যবৃদ্ধি। ক্রয়ক্ষমতা কমছে নিম্নবিত্তদের। এ বার ওমিক্রনের জেরে ফের রাতের কার্ফু বা যাতায়াতের নিয়ন্ত্রণ জারি হলে চাহিদা আরও ধাক্কা খেতে পারে।
সরকারি ভাবে অর্থ মন্ত্রক নভেম্বরের রিপোর্টে বলেছিল, টিকাকরণের গতি বাড়ছে। ফলে ওমিক্রনের প্রভাব ভারতে তেমন পড়বে না। কিন্তু সরকারি সূত্র বলছে, খাতায়-কলমে যা-ই বলা হোক, আশঙ্কা থাকছেই। মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘ঋণনীতি স্থির করার সময়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস ও অন্যেরা যে পরিমাণে ওমিক্রন নিয়ে আলোচনা করেছেন, তাতে পরিষ্কার যে ঝুঁকি থাকছেই।’’
গত অর্থবর্ষে দেশের জিডিপি সঙ্কোচনের তুলনায় চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৯.৫% ছোঁবে বলে পূর্বাভাস করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, আসল প্রশ্ন হল, পরের বছর (২০২২-২৩) বৃদ্ধি কতটা হবে? তা ৭%-৭.৫% না-হলে চিন্তা রয়েছে।
দুই ছবি অর্থনীতির
সরকারি সূত্র বলছে, বেসরকারি ক্ষেত্রে কারখানা, যন্ত্রপাতি, পরিকাঠামোয় বড় লগ্নি আসছে না। কারখানায় ক্ষমতার ৭০ শতাংশেরও কম উৎপাদন হচ্ছে। তবে আশার কথা হল, শ্লথ গতিতে হলেও উৎপাদনের হার ও পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং খরচ কমানোর হাত ধরে অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে বাজারে নথিভুক্ত সংস্থাগুলির মুনাফা বেড়েছে। কিন্তু যত দিন না উৎপাদন স্বাভাবিক হচ্ছে, তত দিন বেকারত্ব নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছেই। সিএমআইই-র পরিসংখ্যান বলছে, ডিসেম্বেরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষে বেকারত্ব দাঁড়িয়েছে ৮.৫ শতাংশের বেশি। গত চার মাসে সর্বোচ্চ। শহরে সেই হার ১০ শতাংশেরও বেশি। মন্ত্রকের এক আমলা বলেন, ‘‘রফতানি বাড়বে বলে আশা। তা হলে কারখানার উৎপাদন ক্ষমতাও আরও বেশি কাজে লাগবে। কাজের সুযোগও তৈরি হবে।’’
এই পরিস্থিতিতে বাজেটের প্রস্তুতি পর্বে বুধবারই সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এ বার অর্থ মন্ত্রকের অন্দরমহলে তার কাজ শুরু হবে। বাজেটে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কী দাওয়াই দেওয়া হবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে শিল্প মহলে।