রাহুল গাঁধী ও অরুণ জেটলি।
ভোটের মুখে মন জিততে ৯৯% পণ্যেই ১৮% বা তার কম জিএসটি বসানোর কথা বুক ঠুকে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এ নিয়ে প্রশ্ন করতেই মুচকি হাসলেন অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা। বললেন, ৯৯%? তাতে আর বাকি কী? এখনই তো ৯৭% পণ্যে করের হার ১৮% বা তার কম!
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর কটাক্ষ, তাহলে শেষ পর্যন্ত কথা সেই গিলতেই হল মোদীকে। যে জিএসটি-কে এক সময়ে তিনি গব্বর সিংহ ট্যাক্স কিংবা ‘গ্রস স্টুপিড থট’-এর তকমা দিয়েছিলেন, এখন মানুষের মন পেতে তার হারই কমানোর কথা বলতে হচ্ছে তাঁকে। বিরোধীদের অনেকের আবার প্রশ্ন, অনেক পণ্যে কর ইতিমধ্যেই কমেছে। বাকিগুলিতে ছাড় দিলে রাজস্ব আদায় কমার ধাক্কা কেন্দ্র কী ভাবে সামাল দেবে, তা স্পষ্ট নয়। তাই মোদীর এই ঘোষণা ফের নতুন ‘জুমলা’ নয় তো?
প্রশ্ন তোলার কারণ, অর্থ মন্ত্রকের তথ্যই বলছে, ১২০০-র বেশি পণ্য ও পরিষেবার মধ্যে এখন মাত্র ৩৫টিতে ২৮% জিএসটি বসে। অর্থাৎ, ৯৭% পণ্যেই তা ১৮% বা তার কম। সুতরাং হাতে গোনা কয়েকটি পণ্যে কর কমিয়েই ৯৯ শতাংশের লক্ষ্য ছোঁয়ার কৃতিত্ব নিতে পারেন মোদী।
আরও পড়ুন: কবে গড়াবে রথ, বিভ্রান্তি রায়ের পরেও
সংশয় আর একটি কারণেও। তা হল, এমনিতেই জিএসটি থেকে আয় বাজেটের লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে। কোনও মাসেই ১.১২ লক্ষ কোটি টাকার লক্ষ্য ছোঁয়া যায়নি। অনেকের প্রশ্ন, এই অবস্থায় আরও পণ্যে কর কমানো সম্ভব হবে কতখানি? হলেও তা কোষাগারের পক্ষে কি ভাল?
৯৯% পণ্যকেই ২৮% জিএসটি-র বাইরে রাখলে রাজস্ব ক্ষতি কতখানি? অর্থ মন্ত্রকের এক সূত্রের জবাব, ‘‘আলোচনা হয়নি। কোন পণ্যগুলির কর কতখানি কমানো হবে, তার উপরে রাজস্ব ক্ষতি নির্ভর করছে।’’
জিএসটি চালুর সময়েই কংগ্রেসের দাবি ছিল, তার সর্বোচ্চ হার হোক ১৮%। বিলাসবহুল বা শরীরের পক্ষে খারাপ পণ্যের মতো ব্যতিক্রমে বসুক সেস। রাহুল গাঁধীর দলের সেই দাবিকে তখন অরুণ জেটলিরা ‘গ্র্যান্ড স্টুপিড থট’ আখ্যা দিয়েছিলেন। যুক্তি ছিল, বিলাসবহুল পণ্যে আরও বেশি হারে কর বসানো জরুরি। এখন সে কথা মনে করিয়েই মোদীকে বিঁধছেন রাহুল। পাল্টা হিসেবে ইউপিএ জমানার চড়া হারের কথা টুইট করেছেন জেটলিও।
২০১৪ সালের ভোটের আগে মোদী বিদেশ থেকে কালো টাকা ফিরিয়ে প্রত্যেকের অ্যকাউন্টে ১৫ লক্ষ করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। পরে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ নিজেই বলেন, তা ছিল ‘জুমলা’ বা ভোটের স্বার্থে কথার কথা। নতুন জিএসটি দাবিতেও সেই প্রসঙ্গ তাই টেনে আনছেন বিরোধীরা। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কটাক্ষ, ‘‘এনডিএর মন্ত্রই হল, না দেখে লাফানো। জিএসটি চালুর সময়েই ১৮ শতাংশের হারে তা করা উচিত ছিল।’’