অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।
চাল-গম-আনাজের মাত্রাছাড়া দরে বাড়ছে চিন্তা। পেট্রল-ডিজ়েল-রান্নার গ্যাসের দামে নাভিশ্বাস মানুষের। বারবার দামের ধাক্কা যে ঋণনীতি স্থির করার পক্ষেও সমস্যার, সেই বার্তা দিয়েছেন খোদ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। মূল্যবৃদ্ধি যে ছেঁকা দিচ্ছে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছে মোদী সরকারও। যা যুঝতে দীর্ঘ দিন ধরে চড়া সুদ থাকায় আর্থিক বৃদ্ধির গতি ধাক্কা খাবে বলে জানালেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। শুক্রবার বিশ্বের শিল্প মহলের সামনে দাবি করলেন, এই কারণে অর্থনীতিকে এগোতে পণ্যের দাম কমানোই কেন্দ্রের পাখির চোখ। সে জন্য তাঁদের নজর সরবরাহ ব্যবস্থাকে মসৃণ করার দিকে। সেই সঙ্গে জি-২০ গোষ্ঠীর বাণিজ্য সম্মেলনে (বি-২০) মন্ত্রীর আশা, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকেও ভাল বৃদ্ধির মুখ দেখবে ভারত। পরের সপ্তাহে এই পরিসংখ্যান প্রকাশ হবে।
পণ্যের দামকে বাগে আনতে গত বছর থেকে টানা ২৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়িয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। মাঝে কিছুটা কমলেও, তা ফের মাথা তুলছে। জুলাইয়ে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭.৪৪%। যা ১৫ মাসে সর্বাধিক। এই অবস্থায় গত দুই ঋণনীতিতে সুদে বদল করেনি আরবিআই। এ দিকে পরের বছর লোকসভা ভোটের আগে যে ভাবে
হোক দামে রাশ টানতে চাইছে মোদী সরকার। নজর দিতে চাইছে অর্থনীতির গতি বাড়ানোয়। যে কারণে চাল-গম রফতানিতে নানা নিষেধাজ্ঞা, পেঁয়াজে রফতানি শুল্ক চাপিয়েছে তারা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের আশঙ্কা, দীর্ঘ দিন ধরে চড়া সুদ থাকলে, তা চাহিদা তথা দেশের অগ্রগতিতে ধাক্কা দিতে পারে। এই প্রসঙ্গেই আজ নির্মলা ধারাবাহিক বৃদ্ধির জন্য মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘অর্থনীতির তত্ত্বই বলে সুদ বেশি থাকলে বৃদ্ধির গতি থমকায়।’’ সুদ বাড়ানোই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র পথ নয় জানিয়ে তাঁর বার্তা, ‘‘তা সাময়িক সুরাহা দিতে পারে। কিন্তু তার পরেই সরবরাহ ব্যবস্থার খামতি ফের মাথা তোলে। ...বর্তমানে শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলির উচিত মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের কথা মাথায় রেখে আর্থিক বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেওয়া।’’
পাশাপাশি এর মধ্যেও অর্থনীতি ভাল করার দাবি জানিয়েছেন মন্ত্রী। বলেছেন, দেশ সংস্কারের হাত ধরে এগোচ্ছে। বাজেটে মূলধনী লগ্নি বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। বাড়ছে বেসরকারি বিনিয়োগ। বিদেশি লগ্নি টানতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে ভাল করবে বৃদ্ধির হার।
উল্লেখ্য, অর্থ মন্ত্রক অর্থনীতি নিয়ে জুলাইয়ের রিপোর্টে দাবি করেছে, খাবারের চড়া দাম দীর্ঘস্থায়ী হবে না। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে ও বাজারে নতুন শস্য এলে তা নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে দেশ ও বহির্বিশ্বের কিছু সমস্যায় বেশ কিছু দিন মূল্যবৃদ্ধির চাপ থাকবে।