নাজেহাল। এটিএম থেকে টাকা তোলার লাইন। — ফাইল চিত্র
চাহিদা তলানিতে। থমকে নতুন বরাত। ঝিমিয়ে উৎপাদন। নোট নাকচের পরে ডিসেম্বরে কল-কারখানার এই ছবিই তুলে ধরেছে নিক্কেই-মার্কিটের বেসরকারি সমীক্ষা। ফলে শিল্পের চাকা উল্টো দিকে ঘুরে উৎপাদনকে টেনে নামাবে বলেই সোমবার ইঙ্গিত দিয়েছে তারা।
শিল্পোৎপাদনের সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশিত হলে, তাতেও একই প্রবণতা ধরা পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি, এ দিনই পরিকাঠামো শিল্পে উৎপাদন নভেম্বরে ঢিমেতালে বাড়ার পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রক। এটাও শিল্পোৎপাদন বাড়ার পথে বাধা হতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। কারণ, শিল্পোৎপাদন হিসেবে ৮টি পরিকাঠামোর গুরুত্ব ৩৮%।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, পিএমআই হিসাবের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রায় ৪০০টি শিল্পের উপর প্রতি মাসে সমীক্ষা চালায় নিক্কেই-মার্কিট। তাঁদের থেকে বরাতের পরিমাণ, ক্রেতার চাহিদা ইত্যাদি তথ্যের ভিত্তিতে হিসাব করা হয় এই সূচক। গত ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আচমকাই নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করার পর এ দিনই প্রকাশিত হল নিক্কেই মার্কিট ইন্ডিয়া ম্যানুফ্যাকচারিং পার্চেজিং ম্যানেজার্স ইন্ডেক্স বা পিএমআই। কল-কারখানার উৎপাদন সম্পর্কে আগাম কিছুটা আঁচ দেওয়ার জন্যই দুনিয়া জুড়ে সমীক্ষা চালিয়ে এই সূচক হিসাব করে তারা। তারা জানিয়েছে, সেই সূচক ডিসেম্বরে কমে হয়েছে ৪৯.৬। নভেম্বরে তা ছিল ৫২.৩। এই সূচক ৫০-এর উপরে থাকা মানেই কারখানার উৎপাদন বাড়ার ইঙ্গিত। তার নীচে নামলে সেটা শিল্পোৎপাদন সরাসরি কমার লক্ষণ। তা ছাড়া, এক মাসে এত বেশি হারে গত আট বছরে কমেনি এই সূচক। গত ২০০৮ সালে বিশ্ব জুড়ে মন্দার মেঘ ঘনিয়ে আসার পরে এক ধাক্কায় অনেকটা পড়ে যায় পিএমআই। কিন্তু গত এক বছরে এই প্রথম কমলো পিএমআই, যা নগদে টান পড়ারই জের বলে সাফ জানান মার্কিটের অর্থনীতিবিদ পলিআন্না দ্য লিমা। সমীক্ষা রিপোর্টটি লিখেছেনও তিনি। লিমা বলেন, ‘‘আচমকা বড় নোট তুলে নেওয়ার জেরে মন্দার কবলে চলে গিয়েছে ভারতে কল-কারখানার উৎপাদন। নগদে টান পড়ায় কমেছে কেনাকাটা, প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে।’’
এ দিকে, পরিকাঠামো শিল্পে নভেম্বরে উৎপাদন ৪.৯% হারে বেড়েছে ঠিকই, তবে আগের মাসের ৬.৬ শতাংশের তুলনায় তা অনেকটাই কম। অশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন যথাক্রমে ৫.৪% ও ১.৭ % হারে কমার কারণেই পরিকাঠামো শিল্পের চাকা এগিয়েছে ঢিমেতালে। প্রসঙ্গত, কয়লা, অশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল শোধনাগারের পণ্য, সার, ইস্পাত, সিমেন্ট, বিদ্যুৎ এই ৮টি মূল শিল্পই পরিকাঠামোর আওতায় রয়েছে। কয়লা, ইস্পাত ও বিদ্যুৎ উৎপাদন অবশ্য নভেম্বরে বেড়েছে ৬.৪%,
৫.৬% ও ১০.২%।