কলকাতা হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরে কেব্ল টিভি ও ডিটিএইচের নতুন নিয়ম চালু নিয়ে তৈরি হয়েছিল সংশয়। আদালতে সেই জট কাটল বৃহস্পতিবার। ফলে আজ থেকে নতুন মাসুলে গ্রাহকের পছন্দের চ্যানেল দেখার ব্যবস্থায় আর কোনও বাধা রইল না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রাই স্পষ্ট জানাল, গ্রাহক যে সমস্ত চ্যানেল দেখতে চান তার তালিকা স্থানীয় কেব্ল অপারেটরের (এলসিও) মাধ্যমে মাল্টি সিস্টেম অপারেটরের (এমএসও) কাছে জমা দিয়ে থাকলে, শুক্রবার থেকেই সেগুলি দেখতে পাবেন। অবশ্যই নতুন মাসুল হার অনুযায়ী।
সম্প্রতি এলসিওদের একাংশ চ্যানেল সংস্থা ও এমএসওদের সঙ্গে চ্যানেলের দাম ভাগাভাগির পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি তুলে মামলা করেছিলেন। তাতে মঙ্গলবার বিচারপতি অরিন্দম সিংহ ২০১৭ সালের ৩ মার্চ জারি হওয়া ট্রাইয়ের নির্দেশিকার উপর ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেন। তার পরেই সময়ে নতুন কেব্ল বিধি চালু হবে কিনা, সে প্রশ্ন তোলে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে বৃহস্পতিবার সেই স্থগিতাদেশ পরিমার্জন করেছেন সিংহ। জানিয়েছেন, ট্রাইয়ের নির্দেশিকা মেনে যে সব এলসিও এবং এমএসও মাসুল ভাগাভাগি নিয়ে চুক্তি করেননি, তাঁদের ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা সারতে হবে।
পরে দিল্লিতে চ্যানেল সংস্থা, এমএসও, এলসিও, ডিটিএইচ ও হিটস অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠকের শেষে ট্রাই জানায়, ওই রায়ের ফলে আজ থেকে সমস্ত পরিষেবাতেই নতুন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে।
আজ থেকে
• কেব্ল ও ডিটিএইচ পরিষেবায় নয়া মাসুলে গ্রাহকের পছন্দের চ্যানেল দেখার জন্য ট্রাইয়ের আনা নতুন ব্যবস্থা চালু।
• বাছাই চ্যানেলের তালিকা স্থানীয় কেব্ল অপারেটরদের কাছে জমা দিয়ে থাকলে, সেগুলি পাওয়ার কথা।
• তালিকা জমা দেওয়া সত্ত্বেও সেই অনুযায়ী চ্যানেল দেখতে না পেলে, আপাতত পুরনো কেব্ল বিধিই বহাল থাকবে কয়েক দিন।
ট্রাই জানাল
• যাঁরা চ্যানেলের তালিকা এখনও জমা দেননি, তাঁরাও আপাতত কিছু দিন টিভি দেখবেন পুরনো কেব্ল বিধি অনুযায়ী। অর্থাৎ
আগে যে সব চ্যানেল দেখতেন, সেগুলিই।
• তালিকা জমা না দিয়ে
বেশি দিন বসে থাকা চলবে না। দ্রুত কেব্ল অপারেটরের কাছে সেটি জমা দেওয়া জরুরি।
• নতুন নিয়মে গ্রাহকের পছন্দের চ্যানেল দেখানোর কথা থাকলেও, অভিযোগ আসছে অনেককেই বোকে বা প্যাকেজ নিতে বাধ্য
করা হচ্ছে।
• চাইলে এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন গ্রাহক।
অভিযোগ কোথায়
• ট্রাইয়ের কল সেন্টারের নম্বর: ০১২০-৬৮৯৮৬৮৯
• ই-মেল: das@trai.gov.in
ট্রাইয়ের উপদেষ্টা অরবিন্দ কুমার এ দিন কলকাতায় জানান, গ্রাহক পরিষেবায় যাতে সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করা হবে। যাঁরা পছন্দের চ্যানেলের তালিকা জমা দিয়েছেন, তাঁরা সেগুলি দেখবেন। কেউ তা না পেলে অথবা কারও তালিকা জমা না দেওয়া হলে, তাঁদের জন্য কিছু দিন পুরনো ব্যবস্থা চালু থাকবে। তবে তা কত দিন, সেটা নতুন ব্যবস্থা চালুর পরে সব কিছু খতিয়ে দেখে জানানো হবে। অন্যতম এমএসও, সিটি কেব্লের কর্তা সুরেশ শেঠিয়ারও দাবি, যাঁরা তালিকা দিয়েছেন, তাঁরা আজ থেকেই সেগুলি দেখতে পাবেন।
মামলাকারীদের এলসিওদের দাবি ছিল, ট্রাইয়ের নির্দেশিকা অনুযায়ী, চ্যানেলের দাম ভাগাভাগির সাধারণ মাপকাঠি মানলে তাঁদের রোজগার বন্ধ হবে। যে মাপকাঠিতে ৫৫% এমএসওদের এবং ৪৫% এলসিওদের পাওয়ার কথা। তবে স্থগিতাদেশ খারিজের আবেদন শুনতে গিয়ে বিচারপতি সিংহ তাঁদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে ভাগাভাগির চুক্তি করা যায় কিনা জানতে চেয়েছিলেন। এ দিন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কৌশিক চন্দ আদালতে জানান, ট্রাইয়ের নির্দেশিকায় সেই চুক্তির ব্যবস্থা আছে।
চুক্তিতে আপত্তি নেই, জানান এক এমএসওর আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য ও কৌস্তভ বাগচীও। তবে এলসিওদের আইনজীবী দেবব্রত সাহা রায়ের অভিযোগ, নতুন নির্দেশিকা তৈরির সময় ট্রাই তাঁদের মতামত নেয়নি। এ দিন ট্রাইকে বিচারপতি সিংহে নির্দেশ, এলসিওদের অভিযোগ সম্পর্কে তাদের বক্তব্য ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। পরবর্তী শুনানি ৬ মার্চ।