বিপুল আসনে জয় এসেছে ঠিকই, কিন্তু গ্রামে চাষিদের যে সমস্যা রয়েছে, তা বিলক্ষণ জানেন নরেন্দ্র মোদী। সম্ভবত সেই কারণেই শপথের ১০০ দিনের মধ্যেই চাষিদের সুরাহা দিতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করতে চলেছে তাঁর সরকার।
মোদী সরকারের প্রথম দফায় চাষিদের ক্ষোভের প্রধান কারণ ছিল ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া। চাপের মুখে চাষিদের দাবি মেনে চাষের খরচের দেড় গুণ এমএসপি বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তা নিয়ে চাষিদের দু’টি আপত্তি ছিল। এক, সরকারি হিসেবে সব খরচ ধরা নেই। দুই, সরকার এমএসপি ঘোষণা করলেও বাজারে তা মেলে না। বাধ্য হয়ে এমএসপি-র তুলনায় কম দামেই ফসল বেচতে হয়।
এই সমস্যার সমাধানে গ্রামে গ্রামে ফসল মজুতের জন্য হিমঘর তৈরির প্রকল্প নিতে চলেছে মোদী সরকার। কৃষি মন্ত্রক সূত্রের খবর, এতে কম খরচে চাষিরা তাঁদের ফসল গ্রামের হিমঘরেই মজুত রাখতে পারবেন। ফলে ফসল ওঠার পরেই জলের দরে তা বিক্রি করতে হবে না। যখন বাজারে চাহিদা উঁচুতে উঠবে, ফসলের দাম বাড়বে, সেই সময় তাঁরা বাজারে বেচতে পারবেন। এখন ফসল মজুতের ব্যবস্থা না থাকায়, তা ওঠার পরেই আড়তদারের কাছে বেচে দিতে হয়।
সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই নীতি আয়োগে এ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। গ্রামে গ্রামে গুদাম বা হিমঘর তৈরি করতে হলে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ জন্য সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও যৌথ উদ্যোগ দরকার। কৃষি মন্ত্রকের পাশাপাশি অন্যান্য মন্ত্রকের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করে এই প্রকল্প রূপায়ণ করতে হবে। শুরুতে সরকারি ভর্তুকি থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসায়িক ভাবেই এই হিমঘরগুলি চালাতে হবে। নীতি আয়োগের বক্তব্য, ১,০০০ টন ফসল মজুতের ক্ষমতা সম্পন্ন হিমঘর তৈরি করতে হবে। তবেই তা ব্যবসায়িক ভাবে চালানো সম্ভব।
লোকসভা ভোটের ঠিক আগে মোদী সরকার প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি প্রকল্পের মাধ্যমে ছোট চাষিদের বছরে ৬,০০০ টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছিল। এ বার সেই প্রকল্পেরও পরিধি বাড়তে পারে। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই ২০২২ সালের মধ্যে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করার কথা বলেছে। কৃষি মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, শুধু ব্যাঙ্কে টাকা দিয়ে আয় বাড়ানো যাবে না। আর সে কথা বুঝেই ফসলের নায্য দাম চাষিদের পাওয়ার বন্দোবস্ত করতে পরিকাঠামো তৈরির এই পরিকল্পনা। কিসান নিধির লক্ষ্য, চাষের মরসুমের শুরুতে কৃষকদের সার, বীজ ইত্যাদির কিছুটা খরচ জোগানো। তার সঙ্গে এ বার পরিকল্পনা ফসলের ভাল দাম পাওয়ার ব্যবস্থা করার।