নজর ইনফোসিস শেয়ারের দিকেই

বাজার নম্বর দিতে পারে নিলেকানিকে

আসলে শেয়ার বাজার এমনই সংবেদনশীল এবং চঞ্চল। তবে এই ধরনের পরিস্থিতি দীর্ঘ দিন স্থায়ী হয় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। আর এটাই সুযোগ-সন্ধানীদের রাস্তা দেখায় হঠাৎ পড়ে যাওয়া দামে ভাল শেয়ার সওদা করার। নন্দন নিলেকানি একজন সফল ব্যক্তিত্ব।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৩৭
Share:

নন্দন নিলেকানি। ছবি: সংগৃহীত

একটি সংস্থার কর্তার প্রস্থান এবং অন্য একজনের ফিরে আসাকে ঘিরে বাজার কতটা আন্দোলিত হতে পারে, তা দেখা গেল গত দশ দিন ধরে। ইনফোসিস থেকে সিক্কার পদত্যাগে বাজারে ধস, আবার সেই বাজারই দ্রুত ঘুরে দাঁড়াল সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নন্দন নিলেকানির দায়িত্বে ফেরার খবরে।

Advertisement

আসলে শেয়ার বাজার এমনই সংবেদনশীল এবং চঞ্চল। তবে এই ধরনের পরিস্থিতি দীর্ঘ দিন স্থায়ী হয় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। আর এটাই সুযোগ-সন্ধানীদের রাস্তা দেখায় হঠাৎ পড়ে যাওয়া দামে ভাল শেয়ার সওদা করার। নন্দন নিলেকানি একজন সফল ব্যক্তিত্ব। ইনফোসিসকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পরে এঁরই হাত ধরে ১০০ কোটি মানুষের হাতে পৌঁছয় আধার কার্ড। আর এই রকম একজন কৃতী মানুষ, যাঁর কাছে ইনফোসিস হাতের তালুর মতো চেনা, তাঁর প্রত্যাগমনে স্বভাবতই লগ্নিকারীরা অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছেন। এর জেরেই ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ার বাজার।

২৬ বছর বয়সে নন্দন নিলেকানি যোগ দিয়েছিলেন যে-ইনফোসিসের গোড়াপত্তনে, ৬২ বছর বয়সে তিনি ফিরে এলেন সেই ইনফোসিসকে পতন থেকে উদ্ধারে। তাঁর এ বারের ভূমিকা নন-এগ্‌জিকিউটিভ চেয়ারম্যানের। নিলেকানি ফিরে আসায় অবসরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠাতা গোষ্ঠীর হাত শক্ত হল বলে মনে করা হচ্ছে। এতে যদি সংস্থার ভাল হয়, তবে বাজার অবশ্যই ভবিষ্যতে তাঁকে স্বাগত জানাবে।

Advertisement

জিএসটি রূপায়ণের কিছুটা আঁচ লাগা সত্ত্বেও বছরের প্রথম তিন মাসে অর্থনীতি এগিয়েছে ৬.৫ শতাংশ হারে। কৃষি উৎপাদন এবং সাধারণ ভাবে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আগের তিন মাসে বৃদ্ধির হার ছিল ৬.১ শতাংশ। জি এস টি-র প্রাথমিক ধাক্কা পরের তিন মাসেও থাকবে। তবে তা কাটিয়ে উঠলে আর্থিক বৃদ্ধি আরও গতি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বর্ষায় এখনও পর্যন্ত তেমন বড় রকমের কোনও ঘাটতি না-থাকলেও, পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারত বাদ দিলে দেশের বাকি অংশে শুক্রবার পর্যন্ত স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কমই বর্ষণ হয়েছে। আশা, আগামী দিনে তা পুষিয়ে যাবে।

বিভিন্ন ব্যাঙ্ক মিশিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে ব্যাঙ্ককর্মী ও অফিসাররা দেশ জুড়ে ব্যাঙ্ক ধর্মঘট করলেন। তবে তার মাত্র দু’দিনের মধ্যে সরকার এই ধরনের সংযুক্তি ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত নিল। সরকারের এই সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলিকে আবার কিছুটা উঠতে দেখা গেল গত সপ্তাহে। দুর্বল ব্যাঙ্কগুলিকে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়াই এই একত্রীকরণের লক্ষ্য।

এতে যেমন বড় ব্যাঙ্কগুলি আরও শক্তিশালী হবে, তেমনই মোকাবিলা করা সহজ হবে পাহাড়-পরিমাণ অনুৎপাদক সম্পদ বা এনপিএ সমস্যার। খেলাপি ঋণ ও মোট ঋণের অনুপাত হিসেবেই এনপিএ মাপা হয়। সঙ্গের তালিকায় দেওয়া হল শতাংশের হিসেবে কোন ব্যাঙ্কগুলি অনুৎপাদক সম্পদের তালিকায় শীর্ষে এবং কাদের এনপিএ সব থেকে কম।

এমনিতে শতাংশের হিসেবে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার অনুৎপাদক সম্পদের অনুপাত ৯.৯৭ শতাংশ হলেও পরিমাণের দিক থেকে এই ব্যাঙ্ক তালিকার একদম শীর্ষে। গত জুনের শেষে ভারতের বৃহত্তম এই ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ ছিল ১,৮৮,০৬৮ কোটি টাকা। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (৫৭,৭২১ কোটি) ও ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (৫১,০১৯ কোটি) টাকা। জুনের শেষ দিনে দেশের সব ব্যাঙ্ক মিলিয়ে অনুৎপাদক সম্পদের অঙ্ক ছিল ৮,২৯,৩৩৮ কোটি টাকা।

শেয়ার বাজার এবং দেশের অর্থনীতির কাছে এই বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপ একটি বড় চিন্তার কারণ। এই সমস্যার মোকাবিলাতেই দুর্বল ব্যাঙ্কগুলিকে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে আমানতকারীদের চিন্তার কারণ নেই।

তবে সরাসরি ব্যাঙ্কের শেয়ারে টাকা ঢালতে গেলে লগ্নিকারীদের নজর রাখতে হবে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার উপর। ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলিতে মিউচুয়াল ফান্ডের বিপুল লগ্নি আছে। ব্যাঙ্কগুলির স্বাস্থ্য উদ্ধারে সরকারকে ঢালতেও হবে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা। এই সব পদক্ষেপের ফল সদর্থক হলে তা হবে সকলের জন্যই ভাল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement