সূচনা: উদ্বোধনে মহীন্দ্রা গোষ্ঠীর প্রধান আনন্দ মহীন্দ্রা ও মিশিগানের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ব্রায়ান ক্যালি (বাঁ দিক থেকে)। ছবি: এপি।
এক সময়ে বিশ্বের ‘গাড়ি-রাজধানী’ হিসেবে যে শহরের পরিচিতি ছিল, তাকে কার্যত শ্মশান করেছিল ২০০৮ সালের ভয়াল মন্দা। জৌলুস হারানো অবশ্য শুরু হয়েছিল আরও আগেই। মার্কিন মুলুকের সেই ‘গাড়ি-শহর’ ডেট্রয়েটে গত ২৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনও নতুন কারখানার দরজা খুলল একটি ভারতীয় সংস্থারই হাত ধরে। পিচ রাস্তার পাশাপাশি পাহাড়ি বা এবড়োখেবড়ো পথে চলার উপযুক্ত গাড়ি তৈরির কারখানা গড়তে সেখানে ২৩ কোটি ডলার (প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা) ঢেলেছে মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা। আগামী দিনে এখানে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
মঙ্গলবার উদ্বোধন হওয়া ওই কারখানায় আপাতত কাজ পাচ্ছেন ২৫০ জন। তাতেই মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ডেভ ট্রট বলছেন, ‘‘আমার জেলা ও প্রদেশের কাছে দারুণ দিন। সিকি শতাব্দীতে এখানে এটিই প্রথম গাড়ি কারখানা। এই ফিরে আসা সত্যি এবং উত্তেজনায় ঠাসা।’’
ডেট্রয়েটই সেই শহর, যেখানে গাড়ি শিল্পের প্রথম ‘অ্যাসেম্বলি লাইন’ পাতেন হেনরি ফোর্ড। গাড়ির দুনিয়ায় কিংবদন্তি তাঁর সংস্থা ফোর্ডও। ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জিএম আবার টানা তিন দশকেরও বেশি সময় ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা। ১৯৫০-এর দশকে আমেরিকার রাস্তায় প্রায় অর্ধেক গাড়ি ছিল এই সংস্থারই। ১৯২৫ সালে ওয়াল্টার পি ক্রাইসলারের হাতে গাড়ি সংস্থা ক্রাইসলারের প্রতিষ্ঠা। আট দশকেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর অন্যতম পরিচিত ব্র্যান্ড হয়ে ওঠে তারা। বিশেষত বড় গাড়ির বাজারে। মার্কিন গাড়ি শিল্পের এই প্রধান তিন গর্বের শিকড় ও সদরই ডেট্রয়েট-মিশিগানে।
এই সেই শহর, যেখানে কারখানায় কাজ খুঁজতে আসতেন হাজার-হাজার মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এখানে তৈরি বিমান-ট্যাঙ্ক-অস্ত্রেই লড়েছিল আমেরিকা। গত শতকের বড় সময় ধরে তার পরিচিতি ছিল বিশ্বের ‘গাড়ি-রাজধানী’ হিসেবে।
কিন্তু জাপানি গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে না-পেরে পিছু হটতে শুরু করে মার্কিন সংস্থাগুলি। শেষমেশ ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে ক্রাইসলার। এক মাসের মাথায় (১ জুন) একই রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হয় জিএম-ও। ফোর্ডও তখন বেহাল। আক্ষরিক অর্থেই তখন শ্মশানের চেহারা নেয় ওই শিল্পাঞ্চল। যে-জায়গা এক সময় গমগমে ছিল, সেখানে বন্ধ হয়ে যায় নতুন কাজের সুযোগ। মাইলের পরে মাইল পড়ে থাকত কর্মীদের ছেড়ে যাওয়া ফাঁকা বাড়ি। জেগে থাকত অনুসারী শিল্পের ভুতুড়ে সব কারখানা।
গাড়ি শিল্প মুখ থুবড়ে পড়ায় শুকিয়ে যায় ডেট্রয়েটের রাজস্ব। বেকারত্ব বাড়ে। চেপে বসে পাহাড়-প্রমাণ ঋণের বোঝা। শেষে দেউলিয়া ঘোষণা করে শহর ডেট্রয়েট-ও।
মাঝে গাড়ি শিল্পকে চাঙ্গা করতে ত্রাণ জুগিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। ইঙ্গিত মিলছিল বিক্রিবাটা বাড়িয়ে ‘তিন দৈত্যের’ ঘুম ভাঙার। কিন্তু সিকি শতাব্দী পরে গাড়ি শিল্পের আঁতুড়ে প্রথম কারখানা ভারতীয় সংস্থারই। যারা কাজে লাগাতে চায় সেখানকার ইঞ্জিনিয়ার, কর্মীদের দক্ষতাকে। তাতে অবশ্য অনেকের চিমটি, ‘‘মেক ইন ইন্ডিয়ার প্রচার আর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও লগ্নি তাহলে আমেরিকামুখী!’’