—প্রতীকী চিত্র।
বাতিল করা হয়েছে ৭০ লক্ষ মোবাইল সংযোগ। প্রায় ৯০০ কোটি টাকা অনলাইনে প্রতারকদের হাত থেকে বাঁচানো গিয়েছে। স্বস্তি পেয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ। কিন্তু তার পরেও ডিজিটাল জালিয়াতি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক থেকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
এক দিকে মোদী সরকার অনলাইনে টাকা মেটানো, ডিজিটাল লেনদেন বাড়াতে চাইছে। অন্য দিকে অনলাইন প্রতারণার ফলে সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে হাজার হাজার টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে আজ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার কর্তারা জরুরি বৈঠকে বসেন।
প্রাথমিক ভাবে পরিকল্পনা ছিল, অনলাইন লেনদেনে প্রতারণা ঠেকাতে দুই ব্যক্তির মধ্যে প্রথমবার ২০০০ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থের ডিজিটাল হস্তান্তর হলে তাতে চার ঘণ্টার ব্যবধান রাখা হবে। অর্থাৎ, ধরা যাক— একজনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা অন্য কারও অ্যাকাউন্টে চলে গেল। কিন্তু তিনি ব্যাঙ্কের এসএমএস পেয়ে টের পেলেন, তিনি এই লেনদেন করেননি। সবটাই জালিয়াতি। সে ক্ষেত্রে চার ঘণ্টা সময় থাকবে ওই লেনদেন বাতিল করার জন্য। কিন্তু আজকের বৈঠকে এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এই বিষয়ে আরও ভাবনাচিন্তা হবে।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট, ২০২২-২৩ সালে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে ১৫,৫৩০ কোটি টাকার প্রতারণা হয়েছে। এর অর্ধেকই ডিজিটাল লেনদেন সংক্রান্ত জালিয়াতি। সম্প্রতি প্রযুক্তিগত গণ্ডগোলের জেরে ইউকো ব্যাঙ্কের কিছু অ্যাকাউন্টে ভুল করে ৮২০ কোটি টাকা চলে যায়। তা নিয়েও ব্যাঙ্কের লেনদেন ব্যবস্থা ঘিরে প্রশ্ন ওঠে।
আজ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ব্যাঙ্ক পরিষেবা দফতরের সচিব বিবেক জোশী সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে তিনি জানান, ৭০ লক্ষ মোবাইল সংযোগ বাতিল করা হয়েছে। অনলাইন প্রতারণার শিকার সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বাঁচানো গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও পুলিশ, ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য সংস্থার নিরবচ্ছিন্ন সমন্বয় দরকার। যাতে প্রতারণার চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে বা ‘রিয়েল টাইম’-এ তা আটকানো যায় এবং কোথা থেকে কোথায় টাকা যাচ্ছে তা চিহ্নিত করা যায়। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ‘সিটিজ়েন ফিনান্সিয়াল সাইবার ফ্রড রিপোর্টিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর আওতায় সমস্ত আর্থিক সংস্থা, ব্যাঙ্ক, সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে নিয়ে আসা হবে।
আজকের বৈঠকে প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়লে ব্যাঙ্কগুলিকে দ্রুত সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রক মনে করছে, ব্যাঙ্কগুলিকে সক্রিয় হওয়ার সময় কমাতে হবে। সাইবার প্রতারণা নিয়ে পুলিশ ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য রাজ্য ও আঞ্চলিক স্তরে ব্যাঙ্কগুলির নোডাল অফিসার নিয়োগ করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থাগুলি আরও বেশি জন-সচেতনতার কর্মসূচি নেবে।