প্রতীকী ছবি।
দেউলিয়া আইন ঠিক মতো কার্যকর হলে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে, বলেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন থেকে শুরু করে অনেকেই। যে আইনের আওতায় জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইবুনাল (এনসিএলটি) খতিয়ে দেখে যে সংস্থা ধার শোধ করতে পারেনি বলে অভিযোগ, তাকে গুটিয়ে বকেয়া আদায় করতে হবে, নাকি সেটিকে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব। এ বার কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের দাবি, সেই পথে এগিয়েই এ বছর ট্রাইবুনালের সাহায্যে ৮০,০০০ কোটি টাকার বেশি ধার উদ্ধার হয়েছে। আশা, ২০১৯ সালে আদায় ছাড়াতে পারে ১ লক্ষ কোটি।
যদিও বিরোধী ও বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, শুধু অঙ্কের হিসেবকে বড় করে দেখলে হবে না। বেশ কিছু সমস্যাও রয়েছে ট্রাইবুনালের। যেমন, অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে মামলা মেটাতে গিয়ে আইনের ফাঁক গলে ঋণের অনেকটাই আর ফিরছে না ব্যাঙ্ক বা ঋণদাতা সংস্থার ঘরে। কেন্দ্রের পাল্টা যুক্তি, আগে তো অনাদায়ি ঋণের কিছুই পাওয়া যেত না। এখন তো তা-ও কিছুটা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে। হিসেবের খাতা থেকে দেনা মুছে যাওয়ায় ঋণদাতা সংস্থাকে আর্থিক সংস্থানের চাপও বইতে হচ্ছে না। সেটাই বা কম কী?
বিরোধীরা আঙুল তুলছেন বিচারের অপ্রতুল পরিকাঠামোর দিকেও। উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়া আইনি প্রতিষ্ঠান বানিয়ে তাকে পঙ্গু করে রাখার যৌক্তিকতা কোথায়, প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তাঁর দাবি, ‘‘সেখানে সদস্য সংখ্যা অন্তত দ্বিগুণ হওয়া জরুরি। কর্মী প্রয়োজনের চেয়ে খুব কম।’’
এক ঝলকে
• এ বছর উদ্ধার প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার ঋণ।
• ২০১৬-র ডিসেম্বরে দেউলিয়া আইন চালুর পরে এখনও পর্যন্ত আদায় ৩ লক্ষ কোটি।
• আশা, সামনের বছর ফেরত মিলবে ১ লক্ষ কোটিরও বেশি।
সমালোচকদের তির
• বকেয়া পেতে গচ্চা ঋণের বড় অংশ।
• এনসিএলটিতে এখনও বিচারের পরিকাঠামো অপ্রতুল।
• মোট ২৭০ দিনে মামলা নিষ্পত্তির কথা। বহু ক্ষেত্রে লাগছে বেশি।
• প্রয়োজনের তুলনায় সদস্য কম।
‘‘কর্মী কম ট্রাইবুনালে। আরও বেশি বিচারক নিয়োগ করা উচিত। মারাত্মক পরিকাঠামো সমস্যা নিয়ে এত কাজের চাপ সামলানো কঠিন।...একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির পরে সেটিকে পঙ্গু করে রাখার মানে হয় না। ’’
অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, কংগ্রেস নেতা
কেন্দ্রের দাবি
• এনসিএলটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানোয় জোর দেওয়া হচ্ছে।
• প্রয়োজনে খোলা হবে বেঞ্চ।
• নিয়োগ করা হবে প্রশিক্ষিত কর্মী।
• জোর দেওয়া হচ্ছে তরুণ পেশাদার ও সহযোগী নিয়োগে।
সে সমস্যা অবশ্য কার্যত মেনেছেন কর্পোরেট মন্ত্রকের সচিব ইনজেতি শ্রীনিবাস। স্বীকার করছেন এনসিএলটি ও এনসিএলএটিতে (এনসিএলটির আপিল আদালত) বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার অভিযোগ জমা থাকার কথা। তাঁর দাবি, ‘‘জোর দেওয়া হচ্ছে ট্রাইবুনালের ক্ষমতা ও দক্ষতা আরও বাড়ানোয়।’’