মোদীর ফসল-প্রতিশ্রুতি ঘিরে বিতর্ক

মন ভোলাতে মিষ্টি কথা, টান টাকাতেই

‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মোদী বলেছেন, তাঁর সরকার চাষের খরচের দেড় গুণ দাম দেবে। খরচের মধ্যে ধরা হবে সব কিছুই। এত দিন সরকার চাষের উপকরণের খরচ ও পরিবারের সদস্যদের শ্রমের আনুমানিক মজুরি যোগ করে মোট খরচ হিসেব করত।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৬
Share:

চিন্তিত: ঘুম কেড়েছে মধ্যরাতে চাষিদের ‘মুম্বই দখল’ও। ছবি: রয়টার্স

প্রথমে গ্রামে ব্যালটে ধাক্কা খোদ মোদীর গুজরাতে। তারপরে মহারাষ্ট্রে চাষিদের ‘লং মার্চ’। মধ্যরাতে ‘মুম্বই দখল’। লোকসভা ভোটের মুখে পরিস্থিতি সুবিধার নয় বুঝেই চাষিদের মন পেতে সব খরচ ধরে ফসলের ন্যূনতম দাম হিসেবের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাই মানছেন, তার জন্য টাকা জোগাড় করা শক্ত। বিরোধীরা বলছেন, ওই কথা দেওয়া স্রেফ মন ভেজাতে। তাই সব মিলিয়ে, ফসলের দর নিয়ে নাভিশ্বাস কেন্দ্রের।

Advertisement

‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মোদী বলেছেন, তাঁর সরকার চাষের খরচের দেড় গুণ দাম দেবে। খরচের মধ্যে ধরা হবে সব কিছুই। এত দিন সরকার চাষের উপকরণের খরচ ও পরিবারের সদস্যদের শ্রমের আনুমানিক মজুরি যোগ করে মোট খরচ হিসেব করত। কিন্তু চাষিরা চান, তার সঙ্গে জমি বা যন্ত্র ভাড়া দেওয়া হলে যে আনুমানিক আয় হত, তা-ও যোগ করা হোক।

অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার যুক্তি, ‘‘জেটলি যা বলেছিলেন, তাতেই ৮০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি খরচ হবে। এখন খরচের হিসেবই যদি আরও বড় করে কষতে হয়, তা হলে তো ফাঁকা হয়ে যাবে কোষাগারই।’’ বরাদ্দের থেকে ৩০-৪০% লাগবে।

Advertisement

গুজরাত-মহারাষ্ট্রে অভিযোগ ছিল, ন্যূনতম দরের থেকে বাজারে ফসলের দাম কম মিলছে। মধ্যপ্রদেশে বিজেপি সরকার সেই ব্যবধান ভর্তুকি হিসেবে মিটিয়ে দিচ্ছিল। মোদী ভেবেছিলেন, সারা দেশে তেমন প্রকল্প চালু করবেন। কিন্তু ওই প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে মধ্যপ্রদেশই। কারণ, মুসুর-ছোলার ডালের বাজার দর এত পড়েছে যে, ভর্তুকি টানা যাচ্ছে না।

কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লার অভিযোগ, ‘‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এখনই খরচের দেড় গুণ দাম দেওয়া হচ্ছে। স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ মানা হল বলছেন। অথচ সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে কেন্দ্র বলেছে, ওই সুপারিশ মানতে গেলে, ফসলের বাজারে সমস্যা তৈরি হবে!’’

কংগ্রেসের অভিযোগ, চাষিদের ক্ষতি করে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিচ্ছে কেন্দ্র। তাই ২০১৬-’১৭ সালে রেকর্ড গম-ডাল উৎপাদন হলেও বিপুল আমদানিতে সায় দেওয়া হয়েছে। কমছে রফতানি। দর পাচ্ছেন না চাষিরা।

খরচ হিসেব

চাষের খরচ হিসেব হয় তিন ভাবে:

• শুধু উপকরণের খরচ ধরে

• উপকরণের খরচের সঙ্গে আনুমানিক পারিবারিক শ্রমের মজুরি যোগ করে

• চাষের যাবতীয় খরচ ধরে। যার মধ্যে পড়ে জমি লিজ, ধার নেওয়ার খরচ ইত্যাদিও

সুপারিশ ও প্রশ্ন

• এম এস স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ ছিল, ফসলের ন্যূনতম দাম হওয়া উচিত সার্বিক খরচের তিন গুণ। অর্থাৎ, তিন নম্বর উপায়ে হিসেব করে

• জেটলি জানিয়েছিলেন, দর হিসেবের কথা ভাবা হচ্ছে দ্বিতীয় পদ্ধতিতে

• মোদীর দাবি, ন্যূনতম দাম হবে চাষের মোট খরচের দেড় গুণ। খরচে ধরা থাকবে সব কিছুই

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement