একত্রে: মুকেশ (বাঁ দিকে) ও অনিল অম্বানী। ফাইল চিত্র
জল্পনা চলছিলই। অবশেষে তা সত্যি করে ভাইয়ের সংস্থার বিপুল ধার কমাতে এগিয়ে এলেন দাদা।
বৃহস্পতিবার মুকেশ অম্বানীর টেলিকম সংস্থা রিলায়্যান্স জিও জানাল, অনিল অম্বানীর রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্সের (আর-কম) মোবাইল পরিষেবা ব্যবসার সম্পত্তি কিনছে তারাই। বিবৃতি দিয়েছে আর-কমও। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এক দশকেরও বেশি পুরনো মনোমালিন্যের কাঁটা উপড়ে ফের হাত ধরতে এই দিনটিকে বেছে নেওয়া দুই ভাইয়ের পরিকল্পিত পদক্ষেপ। কারণ, বৃহস্পতিবারই ছিল বাবা ধীরুভাই অম্বানীর ৮৫তম জন্মদিন।
দুই সংস্থার চুক্তি অনুযায়ী, আর-কমের মোবাইল টাওয়ার, অপটিক্যাল ফাইবার, প্রায় অর্ধেক স্পেকট্রামের মতো সম্পদ কিনছে জিও। লেনদেন হবে নগদে। জানুয়ারি-মার্চের মধ্যেই প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য তাদের। সম্পত্তি বেচে পাওয়া তহবিল দিয়ে ধার চোকাবে আর-কম।
অনেকে অবশ্য বলছেন, শুধু যে ভাইকে বাঁচালেন মুকেশ, তা নয়। সম্পত্তিগুলি কিনে মোবাইলের পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড পরিষেবার পরিকাঠামো উন্নত করতে পারবে জিও। বাড়বে গ্রাহক পরিষেবার মান।
উলটপুরাণ
•২০০২: টেলিকম ব্যবসায় পা অবিভক্ত রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর। সংস্থার নাম রিলায়্যান্স ইনফোকম
•২০০৫: বাবা ধীরুভাই অম্বানীর মৃত্যুর পরে মা কোকিলাবেনের মধ্যস্থতায় ভাগ রিলায়্যান্স গোষ্ঠী। টেলি ব্যবসা অনিলের হাতে। নাম পাল্টে রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্স (আর-কম)
•২০১০: ইনফোটেল ব্রডব্যান্ডকে কিনে ফের টেলিকমে পা মুকেশের। সংস্থার নাম রিলায়্যান্স জিও ইনফোকম
•২০১৬: আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিষেবা চালু জিও-র
•২০১৭: টুজি, থ্রিজি পরিষেবা বন্ধ আর-কমের
•২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭: ধীরুভাই অম্বানীর জন্মদিনে আর-কমের মোবাইল ব্যবসার সম্পদ কিনতে চুক্তি জিও-র
জিও-র হাতে
•রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্সের ৪৩,০০০ মোবাইল টাওয়ার
•১২২.৪ মেগাহার্ৎজ ফোরজি স্পেকট্রাম (৮০০/৯০০/
১,৮০০/ ২,১০০ মেগাহার্ৎজ ব্যান্ডের)
•সারা দেশে ১.৭৮ লক্ষ কিমি অপটিক ফাইবার কেব্ল
•২৪৮ মিডিয়া কনভার্জেন্স নোডস (৫০ লক্ষ বর্গ ফুট জায়গা জুড়ে তৈরি টেলি পরিকাঠামো)
টেলি শিল্পে সংযুক্তি
•টাটা টেলি-এয়ারটেল
•টেলিনর ইন্ডিয়া-এয়ারটেল
•আইডিয়া-ভোডাফোন
•এমটিএস-রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্স
এই পাশে দাঁড়ানো যে দাদা-ভাইয়ের ‘টান’বশত কোনও সমঝোতা নয়, তা-ও ইঙ্গিতে বুঝিয়েছে আর-কম। সংস্থার দাবি, ওই সম্পত্তি কিনতে সবচেয়ে বেশি দর দেওয়াতেই এই সুযোগ পেয়েছে জিও। হাতবদলের অঙ্ক জানানো হয়নি। তবে দু’দিন আগে অনিলের সম্পত্তি বেচে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ মেটানোর বার্তা থেকে দু’য়ে-দু’য়ে চার করছেন অনেকে। বলছেন, মুকেশই আসলে তা দেবেন। বিশেষত ওই দিন ঋণ শোধের নতুন কৌশল ঘোষণায় অনিলের ‘নাম না-করা’ লগ্নিকারীও যে সম্ভবত মুকেশ, সেই জল্পনা যেখানে এ দিন মিলে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রেও খবর, লেনদেনের অঙ্ক হবে প্রায় ২৫ হাজার কোটি।
১৫ বছর আগে মুকেশের হাত ধরেই টেলি ব্যবসায় পা রেখেছিল রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ (আরআইএল)। কিন্তু পরে অম্বানী সাম্রাজ্য ভাগাভাগির পরে তেল-গ্যাস নিয়ে আরআইএলের রাশ পান মুকেশ। টেলিকম ও বিদ্যুৎ যায় অনিলের হাতে। বছর সাতেক আগে কেউ কারও ব্যবসার ক্ষেত্রে পা রাখতে না-পারার চুক্তি বাতিলের পরে অবশ্য ফের টেলিকম ব্যবসায় ফেরেন মুকেশ। এর পরে তাঁর জিও বাজারে এসেই আলোড়ন তোলে।
উল্টো দিকে, সময়ের সঙ্গে ফিকে হয়েছে আর-কমের ব্যবসা। জিও অন্যদের মতো ধাক্কা দিয়েছে তাদেরও। ধার ছুঁয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি। এয়ারসেলের সঙ্গে জোট বেঁধে বা সম্পদ বেচে বা ঋণদাতা সংস্থাকে অংশীদারি দিয়ে তা কমানোর চেষ্টা সফল হয়নি। জিও অবশ্য ইতিমধ্যে আর-কমের স্পেকট্রাম ব্যবহার করছিল। এ বার যার সিংহভাগই ঝুলিতে পুরল তারা। তবে ৪জি-র নেট ব্যবসা চালু রেখেছে আর-কম।
সম্পদের সংযুক্তি যে পরিকাঠামো পোক্ত করে, সে ব্যাপারে একমত প্রতিদ্বন্দ্বীরাও। টেলি শিল্পের সংগঠন সিওএআই-এর ডিজি রাজন এস ম্যাথুজ আমেরিকা থেকে ফোনে জানান, শিল্প ও গ্রাহক, অনিল-মুকেশ চুক্তি লাভজনক হবে সকলের জন্যই।