ফাইল চিত্র।
ঝড়ের অভিঘাত সব থেকে বেশি বেসামাল করে ক্ষুদ্র বা ছোটদেরই। অতিমারিতে সেই আঘাত সইতে হয়েছে ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পকে (এমএসএমই)। একে কার্যকরী মূলধনে টান পড়েছে, উপরন্তু কাঁচামালের আগুন দরের ছেঁকায় নাভিশ্বাস উঠেছে সংস্থাগুলির। অনেকেই যে ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে, সে কথা সংসদে জানিয়েছে খোদ মোদী সরকারই। করোনা পর্বে এর আগে ঋণ ভিত্তিক কিছু সুবিধা ছাড়া সরাসরি ত্রাণ না-মেলায় তাই বাজেটে বাড়তি প্রত্যাশা ছিল এই শিল্প মহলে। মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট প্রস্তাব দেখে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তাদের। ছোট-মাঝারি শিল্পের অন্তত দু’টি সংগঠনের দাবি, একটি মাত্র ঋণ প্রকল্পের সময়সীমা বৃদ্ধি ছাড়া অতিমারির অভিঘাত এড়িয়ে দ্রুত ছন্দে ফেরার জন্য যথেষ্ট দাওয়াই বাজেটে নেই। অন্য অংশের অবশ্য দাবি, এমএসএমই-র জন্য দিশা রয়েছে। যা এগিয়ে চলার রাস্তা তৈরি করবে।
অতিমারিতে দফায় দফায় পূর্ণ ও আংশিক লকডাউনের জেরে আর পাঁচটা ব্যবসা মতোই হোঁচট খেয়েছে এমএসএমই ক্ষেত্র। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা আরও প্রকট হয় আগের বিক্রি হওয়া পণ্যের বকেয়া প্রাপ্যও না মেলায়। বহু ক্ষুদ্র ও ছোট সংস্থারই আবার ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা না-থাকায় বকেয়া প্রাপ্য আটকে থাকলে কার্যকরী মূলধনে টানাটানি বাড়ে। থমকে যায় পণ্য উৎপাদন। সম্প্রতি সংসদে কেন্দ্র জানায়, লকডাউনের পরে ‘ন্যাশনাল স্মল ইন্ড্রাস্ট্রিজ় কর্পোরেশন’-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৯% এমএসএমই-র ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, এর অর্থ দেশে প্রায় ৬.৬৩ কোটি ছোট সংস্থার মধ্যে বন্ধ হয়েছে ৫৭ লক্ষ।
বাজেটে এ দিন নির্মলা সরকারি গ্যারান্টি যুক্ত বিশেষ ঋণ প্রকল্পের মেয়াদ ও পরিমাণ বৃদ্ধি-সহ এই ক্ষেত্রের জন্য কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। সেগুলিকে স্বাগত জানালেও এই শিল্পের সংগঠন ফসমির প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য ও ফ্যাকসির প্রেসিডেন্ট হিতাংশু গুহের দাবি, আরও অনেক কিছু করার জায়গা ছিল ক্ষেত্রটির জন্য। বিশেষ করে প্রাক-বাজেট পর্বে কাঁচামালের অস্বাভাবিক দাম রোখার জন্য কিছু ব্যবস্থার আর্জি জানিয়েছিলেন তাঁরা। নির্মলার প্রস্তাবে আমদানি করা ইস্পাতের কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানো ছাড়া কার্যত সেই সংক্রান্ত তেমন কোনও দাওয়াই না দেখে হতাশ তাঁরা।
কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, বাজারের পণ্যের দাম কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব? হিতাংশুবাবুর দাবি, অন্তত সরকারি ইস্পাত সংস্থাকে এমএসএমই-র জন্য কাঁচামালের দরে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ চাপানো যেত। তাতে বাজারেও কিছুটা স্থিরতা আসত। আরও কিছু আর্থিক সুবিধাও দেওয়া যেত বলে মনে
করেন বিশ্বনাথবাবু।
ইস্পাত ছাড়া তামা, অ্যালুমিনিয়াম, পলিমারের মতো কাঁচামালে চড়া শুল্ক এবং অন্যান্য সমস্যার দাওয়াই বাজেটে না-থাকার কথা বলেছেন এই শিল্পের আর এক সংগঠন ফিসমে-র অনিমেষ সাক্সেনাও। তবে তার বাইরে অর্থমন্ত্রীর এ দিনের বাজেট প্রস্তাবের প্রশংসাই করেছেন তিনি।