রাজকোষের অর্থে টান, কোপ তাই গ্রামোন্নয়নে

বাজেটের অঙ্ক কষতে বসে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আশঙ্কা, ঘাটতি লাগামে রাখতে হলে গ্রামোন্নয়নের খরচেই কাটছাঁট করতে হবে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৫২
Share:

প্রতীকী ছবি।

অর্থনীতিতে ঝিমুনি ধরেছে। কারণ, গ্রামের মানুষের হাতে টাকা নেই বলে বাজারে কেনাকাটা কম। প্রয়োজন ছিল, তাঁদের হাতে আরও টাকা তুলে দেওয়া। কিন্তু মোদী সরকারের রাজকোষে টানাটানি বলে সেই গ্রামের উন্নয়নের খরচেই কোপ পড়তে চলেছে।

Advertisement

বাজেটের অঙ্ক কষতে বসে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আশঙ্কা, ঘাটতি লাগামে রাখতে হলে গ্রামোন্নয়নের খরচেই কাটছাঁট করতে হবে। কারণ, অর্থনীতির ঝিমুনির ফলে আয়কর বা জিএসটি থেকেও সরকারের আয় কমছে। এমনিতেই ১০০ দিনের কাজ বা মনরেগা ও প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা প্রকল্পে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে কম অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু মনরেগা-য় গ্রামে যে পরিমাণ কাজের চাহিদা তৈরি হচ্ছে, তাতে আরও অর্থ দরকার। অথচ কী ভাবে খরচে রাশ টানা যায়, অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা সে পথ খুঁজছেন।

লোকসভা ভোটের আগে চাষিদের বছরে ৬ হাজার টাকা করে দেওয়ার ‘পিএম-কিসান’ প্রকল্প ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। ক্ষমতায় ফেরার পরে সেই খরচেও রাশ টানা হচ্ছে। চলতি অর্থ বছরে দুই কিস্তিতে মাথা পিছু ৪ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় কিস্তির টাকা দেওয়ার কথা ছিল ডিসেম্বরে। এখনও সে টাকা মেলেনি।

Advertisement

কোথায় রাশ?

১০০ দিনের কাজ
প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা
পিএম কিসান

• ১০০ দিনের কাজ: গত বছর ১০০টি পরিবার
কাজ চাইলে ৮৪টি পরিবারকে কাজ দেওয়া গিয়েছে। এ বার তা আরও কমতে পারে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক বাড়তি ২০ হাজার কোটি টাকা চাইলেও অর্থ মন্ত্রক চুপ।
• প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা: গত বছরের তুলনায় বরাদ্দ কম। গত বছর ৪৭ লক্ষের বেশি বাড়ি তৈরি হয়েছিল, এ বছর এখনও ৭.২ লক্ষ বাড়ি তৈরি হয়েছে।
• পিএম কিসান: ৮ কোটির বেশি চাষির হাতে ২ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হয়েছিল, এখন তা ৬ কোটিতে নেমেছে।
অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে কী দরকার ছিল?
• গ্রামের মানুষের হাতে বেশি টাকা জোগানো, যাতে বাজারে কেনাকাটা বাড়ে। অথচ করা হচ্ছে উল্টোটা।

কবে মিলবে? সরকারি সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার কর্নাটকে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর টুমকুরে অনুষ্ঠান থেকে ৬ কোটি চাষির অ্যাকাউন্টে ২ হাজার টাকা করে পাঠানো হবে। খরচ হবে ১২ হাজার কোটি টাকা।

প্রশ্ন কিন্তু থাকছে। কারণ, ভোটের আগে এই খাতে প্রথম টাকা পান ৮ কোটি ৫ লক্ষ চাষি। এই অর্থ বর্ষের এপ্রিলে তা পেয়েছেন ৭.৪৩ কোটি চাষি। পরের কিস্তিতে ৫.৯১ কোটি চাষি। এ বার ৬ কোটি চাষি। তাহলে বাকিরা কোথায় গেলেন? সরকারের যুক্তি, চাষের জমির রেকর্ড, আধার-ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংযুক্তিকরণের সমস্যা হচ্ছে। তবে চাষিদের মাথায় হাত পড়লেও অর্থ মন্ত্রকের স্বস্তির কারণ হল, ৭৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ বেঁচে যাবে।

একই ছবি ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পেও। গত অর্থ বছরে এই খাতে ৬১,০৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এ বছর বরাদ্দ হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গ্রামে গ্রামে কাজের চাহিদা বাড়ছে। তাই গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক অর্থ মন্ত্রকের কাছে আরও ২০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। কিন্তু সাড়া নেই। অর্থ মন্ত্রক চাইছে, আপাতত রাজ্যগুলি টাকা মিটিয়ে দিক। পরে ধার শোধ করে দেওয়া যাবে।

গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘মোদী সরকারের প্রথম তিন বছরে ১০০টি পরিবার কাজ চাইতে এলে ৮৯-৯০টি পরিবারকে মনরেগা-য় কাজ দেওয়া গিয়েছে। কিন্তু গত দু’বছরে তা ৮৪ শতাংশে নেমেছে। এ বছর বোধহয় আরও কম পরিবারকে কাজ দেওয়া সম্ভব হবে।’’

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষ বলেন, ‘‘মনরেগা, পিএম কিসান, যে প্রকল্পেই হোক, মানুষের হাতে আরও টাকা জোগানো প্রয়োজন। যাতে বাজারে চাহিদা বাড়ে। কিন্তু এই সরকার কোন পথে হাঁটছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। মনরেগা-য় কাজ পাওয়া আইনি অধিকার। কিন্তু মানুষ কাজ চাইলেও মিলছে না।’’

প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনায় গত অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ২১ হাজার কোটি। খরচ হয় ১৯,৯০০ কোটি টাকা। এ বার বরাদ্দ ১৯ হাজার কোটি টাকা। গত তিন বছরে এই প্রকল্পে ৩২ থেকে ৪৭ লক্ষ বাড়ি তৈরি হয়েছে। এ বছর তৈরি হয়েছে মাত্র ৭.২ লক্ষ বাড়ি। অথচ অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার মাত্র তিন মাস বাকি। সরকারের অবশ্য দাবি, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অনেক বেশি সংখ্যক বাড়ি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মতে, কাজের গতি দেখে মনে হচ্ছে, বরাদ্দের এই খাতেও বিরাট অংশের টাকা খরচ হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement