গুজরাতি অসুখে মধ্যপ্রদেশের দাওয়াই।
এ বার সারা দেশে নতুন ফসলের দামে ভর্তুকি চালুর পরিকল্পনা নিচ্ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কূটনীতিকদের মতে রাহুল গাঁধীর তির থেকে বাঁচতেই এই পথে হাঁটতে চায় কেন্দ্র। গুজরাত ভোটের থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের মূল লক্ষ্য হল, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে চাষিদের মন জয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সরকার ঘেষিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি-র থেকেও বাজারে ফসলের দাম পড়ে গেলে, সেই ফারাকটুকু ভর্তুকি দিয়ে পুষিয়ে দেবে সরকার। মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সিংহ চহ্বাণের সরকার সেপ্টেম্বর থেকে এই ভর্তুকি ব্যবস্থা চালু করেছে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, নীতি আয়োগের সদস্য, কৃষি বিশেষজ্ঞ রমেশ চাঁদের পরামর্শেই এই ‘মুখ্যমন্ত্রী ভাবান্তর ভুগতান যোজনা’ চালু হয়। সেখানে সাফল্য মেলায় মোদী সরকার এ বার গোটা দেশেই এই ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবছে।
পাশাপাশি, আগামী বছরের গোড়াতেই সারের ভর্তুকিও কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করে দিতে চাইছে কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ১৪টি রাজ্যের ১৭টি জেলায় তা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। সাফল্যও মিলেছে। এ বার গোটা দেশেই এই ব্যবস্থা চালু হবে। কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার সংযুক্তি, জমির তথ্য সংগ্রহের কাজ প্রায় শেষ। ফলে সারে ভর্তুকি চুরি বন্ধ হবে ও কৃষকরা উপকার পাবেন বলে মনে করছে কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, কাপাস, বাদামের দাম মিলছে না— গুজরাতের গ্রামে গ্রামে চাষিরা এই রাগেই ফুঁসছিলেন। ভোটের প্রচারে গিয়ে সেই ক্ষোভ উসকে দিতেই, কাপাস-বাদামের দাম আগে কত মিলত, এখন কত মিলছে বলে প্রশ্ন ছুড়েছেন রাহুল গাঁধী। গুজরাতের গ্রামে বিজেপিকে ধাক্কা দিয়ে তার সুফলও কুড়িয়েছেন তিনি। এমনিতেই দেশের একটা বড় অংশে ফসলের উচিত দাম হাতে পাওয়া ও ঋণ মকুবের দাবিতে কৃষক আন্দোলন চলছে। গুজরাতের মতো অন্য রাজ্যেও কংগ্রেস তার ফায়দা তুলুক, নরেন্দ্র মোদী স্বাভাবিক ভাবেই তা চান না। সেই কারণেই বাজেটে এই ভর্তুকি ব্যবস্থা চালুর সম্ভাবনা অর্থ মন্ত্রককে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে বলে ইঙ্গিত সংশ্লিষ্ট মহলের।
তবে কৃষি বিশেষজ্ঞদের পাল্টা যুক্তি, এই ব্যবস্থা চালু হলে তার অপব্যবহারও হতে পারে। ব্যবসায়ীরা জোট বেঁধে চাষিদের কাছ থেকে কম দামে খাদ্যশস্য কিনে নেবেন। চাষিরাও ভর্তুকি পাবেন ভেবে কম দামে ফসল বেচবেন। কিছুটা ভর্তুকি মিলবে। কিন্তু লাভের গুড় খেয়ে যাবেন ব্যবসায়ীরা।
নীতি আয়োগের এক কর্তার পাল্টা যুক্তি, দু’মাস একটি রাজ্যে ফসলের দামের হিসেব ছাড়াও পাশের রাজ্যেও ওই ফসলের দাম খতিয়ে দেখা হবে। ফলে ব্যবসায়ীদের চালাকি ধরা পড়ে যাবে। ধান বা গমের তুলনায় সরকার চাষিদের থেকে অনেক কম পরিমাণে তৈলবীজ বা ডাল কেনে। সেখানেই এই ভর্তুকি নীতি বেশি কার্যকর হবে। ভর্তুকির টাকা সরাসরি চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে।
মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে কৃষকদের আন্দোলনে গুলি চালিয়েছিল শিবরাজ-সরকারের পুলিশ। তা থেকে গোটা দেশে ক্ষোভ ছড়ায়। শিবরাজ তারপরেই এই ভর্তুকি চালু করেন। কৃষকদের ক্ষোভ শান্ত করার ফলও মিলেছে। নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশে এর ফল পাবেন কি না, সেটাই
এখন দেখার।
জোড়া কৌশল
• সহায়ক মূল্যের থেকে বাজার দর কমে এলে তার ফারাক কৃষককে ভর্তুকি দিয়ে মেটানো।
• নতুন বছরের গোড়াতেই সারের ভর্তুকি সরাসরি চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। লক্ষ্য এই খাতে ভর্তুকি চুরি বন্ধ করা।
দামে ভর্তুকি কী ভাবে?
• ধরা যাক, কোনও শস্যের এমএসপি কুইন্টল প্রতি ১২০০ টাকা। কিন্তু তার বাজার দর ১০০০ টাকায় নেমে এসেছে। সে ক্ষেত্রে দু’মাসের গড় দামের ওঠাপড়া দেখে একটি মাপকাঠি ঠিক করবে সরকার। তার সঙ্গে এমএসপি-র সর্বাধিক ব্যবধান, ২০০ টাকা হলে সেটাই হবে ভর্তুকি। চাষিকে এমএসপি-র থেকে ৫০০ টাকা কমে বেচতে হলেও ২০০ টাকাই ভর্তুকি মিলবে। চাষি যদি বাজার দরের থেকে বেশি বা ১১০০ টাকায় ফসল বেচেন, তা হলে ১০০ টাকা ভর্তুকি পাবেন।