অভিযোগের তির মিস্ত্রির ,টাটা কেমের ইজিএম ২৩ ডিসেম্বর

দম্ভেই কোরাস কেনেন টাটা

টাটা-মিস্ত্রি সংঘাতে নতুন পর্ব। ‘ব্যক্তি বনাম প্রতিষ্ঠান’ শিরোনামে লেখা চিঠিতে রতন টাটার দম্ভকেই গোষ্ঠীর বেশ কিছু ‘খারাপ’ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের জন্য মঙ্গলবার দায়ী করলেন সাইরাস মিস্ত্রি।

Advertisement

মুম্বই

সংবাদ সংস্থা  শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৪০
Share:

টাটা-মিস্ত্রি সংঘাতে নতুন পর্ব। ‘ব্যক্তি বনাম প্রতিষ্ঠান’ শিরোনামে লেখা চিঠিতে রতন টাটার দম্ভকেই গোষ্ঠীর বেশ কিছু ‘খারাপ’ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের জন্য মঙ্গলবার দায়ী করলেন সাইরাস মিস্ত্রি।

Advertisement

পাশাপাশি, মিস্ত্রিকে গোষ্ঠীর সব সংস্থায় ডিরেক্টর পদ থেকে সরাতে তৎপর টাটা সন্স। এ দিনই তারা টাটা পাওয়ারকে শেয়ারহোল্ডারদের বিশেষ সাধারণ সভা বা ইজিএম ডাকতে বলেছে। টাটা কেমিক্যালস ২৩ ডিসেম্বর তাদের ইজিএমের তারিখ ঘোষণাও করেছে। ওই দিন মিস্ত্রির সঙ্গেই স্বাধীন ডিরেক্টর শিল্পপতি নুসলি ওয়াদিয়াকে সরাতে ইজিএম ডেকেছে সংস্থা।

ইতিমধ্যেই মিস্ত্রিপন্থী বলে চিহ্নিত ওয়াদিয়া এই পরিপ্রেক্ষিতে মানহানির অভিযোগ এনে আজ ফের নোটিস পাঠিয়েছেন টাটা সন্সকে। তবে এ দিন আট পৃষ্ঠার নোটিসটিতে তিনি জানতে চেয়েছেন, কেন ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে তাঁর সম্মানহানি করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত কালও ওয়াদিয়া টাটা সন্সকে তাঁর পাঠানো নোটিসে বলেছেন, তাঁকে ইন্ডিয়ান হোটেলস, টাটা কেমিক্যালস, টাটা মোটরস, টাটা স্টিল থেকে স্বাধীন ডিরেক্টর হিসেবে সরানোর যে-চেষ্টা টাটারা শুরু করেছে, তা শিল্পমহলে ও ব্যক্তিগত স্তরে তাঁর ভাবমূর্তিতে কালি ছেটানোরই নামান্তর। টাটা সন্স যদি এর থেকে বিরত না-হয়, তা হলে ওয়াদিয়া আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। টাটাদের অভিযোগ, স্বাধীন ডিরেক্টর হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি ওয়াদিয়া।

Advertisement

পাঁচ পাতার চিঠিতে মঙ্গলবার মিস্ত্রি সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেললেন নিজের অহমিকা জাহির করার জন্য রতন টাটার ‘দ্বিগুণ’ দামে কোরাস কেনার সিদ্ধান্তকে। পাশাপাশি, এক সময়ে আইবিএমের কাছে টাটা কনসালট্যান্সি সার্ভিসেস (টিসিএস) বিক্রি করে দেওয়ার মতো ‘খারাপ’ সিদ্ধান্তও রতন টাটা নিতে চেয়েছিলেন বলে এ দিন ওই চিঠিতে অভিযোগ এনেছেন টাটা সন্স থেকে সরে যেতে বাধ্য হওয়া সাইরাস মিস্ত্রি। টিসিএস ও জাগুয়ার-ল্যান্ডরোভারের মতো সংস্থার সাফল্যে তাঁর অবদান নেই বলে এর আগে টাটাদের আনা অভিযোগকেও এ দিন উড়িয়ে দিয়েছেন মিস্ত্রি। তাঁর সম্পর্কে ‘ভুল ধারণা’ তৈরি করাই এ ধরনের অভিযোগ আনার লক্ষ্য বলে মিস্ত্রির দফতর ওই চিঠিতে অভিযোগ এনেছে। প্রসঙ্গত, গত ২৪ অক্টোবর মিস্ত্রিকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে ১০ নভেম্বর লেখা ন’পাতার চিঠিতে টাটা সন্স এই অভিযোগ এনেছিল।

অভিযোগের জবাব এ দিনের চিঠিতে দিয়েছেন ও প্রশ্ন তুলেছেন রতন টাটার নেতৃত্ব নিয়ে। সেই তালিকায় আছে:

কোরাস কেনা। গত ২০০৭ সালে ১২০০ কোটি ডলারেরও বেশি খরচ করে ব্রিটিশ ইস্পাত সংস্থা কোরাস কেনা প্রসঙ্গে মিস্ত্রি বলেছেন, তার ঠিক এক বছর আগে অর্ধেক দামে সংস্থাটি হাতে নিতে পারতেন রতন টাটা। পরিচালন পর্ষদ ও সংস্থার প্রথম সারির কয়েক জন কর্তা বিষয়টি নিয়ে আপত্তিও তোলেন। কিন্তু নিজের অহঙ্কার চরিতার্থ করতেই অন্যদের মত উপেক্ষা করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন রতন টাটা, অভিযোগ মিস্ত্রির। কোরাস কিনতে বিপুল লগ্নির জেরেই আটকে যায় বাদবাকি বিনিয়োগ, অনেকের চাকরিও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

প্রসঙ্গ টিসিএস। চিঠিতে সাইরাস মিস্ত্রির দাবি, রতন টাটার আমলেই প্রায় ‘মৃত্যুর মুখ’ থেকে ফিরে এসেছিল টিসিএস। আর তা সম্ভব হয়েছিল জেআরডি-র হস্তক্ষেপে। এক সময়ে আইবিএম-কে রতন টাটা টিসিএস বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন, যাতে বাদ সাধেন জে আরডি টাটা। সে সময়ে টিসিএসের রাশ ছিল এফ সি কোহলির হাতে। মিস্ত্রি লিখেছেন, ভারতে সফটওয়্যার শিল্পের নামী ব্যক্তিত্ব কোহলি সে সময়ে অসুস্থ ছিলেন বলেই বিষয়টি নিয়ে এগোতে চাননি জেআরডি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘টিসিএসের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সংস্থাকে বিক্রি করা অনুচিত।’’ প্রসঙ্গত, টাটাদের সঙ্গে আইবিএমের সমান অংশীদারির ভিত্তিতে যৌথ উদ্যোগ গড়ে ওঠে ১৯৯২ সালে, যার দায়িত্বে ছিলেন রতন টাটা। যৌথ উদ্যোগটি ভেঙেও যায় ১৯৯৯ সালে। জেআরডি-র হাতেই টিসিএস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৮ সালে।

অবদান নিয়ে দাবি। টাটা গোষ্ঠীর প্রথম সারির দুই সংস্থা টিসিএস-জেএলআরের সাফল্যে চেয়ারম্যান হিসেবে অবদান নেই মিস্ত্রির, এমন অভিযোগই এনেছিল টাটা সন্স। এই দোষারোপের বিরুদ্ধে এ দিন যুক্তি দিয়েছেন মিস্ত্রি। তিনি বলেছেন টিসিএসের সাফল্যের পিছনে মূলত অবদান রয়েছে কোহলি ও এন চন্দ্রশেখরনের। জেএলআরে র‌্যাল্‌ফ স্পেথ এবং রবি কান্তের। তবে টাটা সন্স ও টিসিএসের চেয়ারম্যান থাকার সুবাদে মিস্ত্রি বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বহু গুরুত্বপূর্ণ আদান-প্রদান করেন।

এই চাপান-উতোরের মধ্যেই টাটা কেমিক্যালস ডিরেক্টর পদ থেকে মিস্ত্রিকে সরাতে এ দিন শেয়ারহোল্ডারদের ইজিএম ডাকল ২৩ ডিসেম্বর। মিস্ত্রি ওই সংস্থার চেয়ারম্যান পদে এখনও বহাল রয়েছেন। ইতিমধ্যেই টিসিএস ও ইন্ডিয়ান হোটেলস ডিরেক্টর পদ থেকে মিস্ত্রিকে সরাতে ইজিএম ডেকেছে যথাক্রমে ১৩ ও ২০ ডিসেম্বর। ওয়াদিয়াকেও সরাতে চায় টাটা সন্স, যে-প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর মন্তব্য: ‘‘জেআরডি টাটা আমার পাশে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় ৭০-এর দশকে। রতন টাটার সঙ্গে আরও দশ বছর বাদে। দুঃখ হচ্ছে এই ভেবে যে, রতন টাটা অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান পদে ফেরার পরেই আমাকে অপদস্থ করা হল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement