বছর ঘুরে গিয়েছে। হয়েছে মাত্র একটি বৈঠক। তা-ও পারস্পরিক পরিচিতির। ফলে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি রাজ্যে চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী ২৯ সদস্যের এই কমিটি তৈরি করেন। শ্রম সচিব যার চেয়ারম্যান। আছেন শ্রম কমিশনার ও বিভিন্ন দফতরের আট প্রতিনিধি। রয়েছেন বাগান মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলির আট জন করে প্রতিনিধিও।
গত অগস্টে তৎকালীন শ্রম সচিব অনুপ অগ্রবালের নেতৃত্বে কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। শ্রম দফতর সূত্রে খবর, মূলত পারস্পরিক পরিচিতির জন্যই তা ডাকা হয়েছিল। সেখানে ইউনিয়নগুলির প্রতিনিধিরা প্রস্তাব দেন, শ্রমিকের মজুরির ন্যূনতম স্তর কী হতে পারে তা নিয়ে সরকারই খসড়া তৈরি করে কমিটির প্রতিনিধিদের দিক। সেই অনুযায়ী আলোচনা ও সুপারিশ গ্রহণ করা হোক। শ্রম দফতরের এক সূত্রের দাবি, ‘‘গত অগস্টেই খসড়া তৈরি করে শ্রমিক ও মালিকদের সংগঠনগুলিকে দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও কারও থেকে জবাব আসেনি।’’
এত দিন পরে এখন ফের স্থির হয়েছে অগস্টে এই কমিটি আগের খসড়া নিয়ে বৈঠক ডাকবে। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি।’’ তিনি আরও জানান, কমিটি তার সুপারিশ জানাবে শ্রম দফতরের ন্যূনতম মজুরি বোর্ডকে। সেই অনুযায়ী বিচার-বিবেচনা করে ন্যূনতম মজুরির বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।
মালিকপক্ষ এ নিয়ে মন্তব্যে নারাজ। তবে তাঁরা ২০১৪ সালে তিন বছরের জন্য ত্রিপাক্ষিক চুক্তির প্রসঙ্গ তুলছেন। তাঁদের অন্যতম সংগঠন ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিৎ রাহা বলেন, ‘‘ওই চুক্তি ২০১৭ পর্যন্ত বৈধ। ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে তাতে সম্মত হয়েছিল সব ইউনিয়নও। তাই সেটাকেই ন্যূনতম মজুরি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।’’
ওই চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৪-এর ১ এপ্রিল থেকে বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ছিল ১১২.৫০ টাকা। পরের বছর তা বেড়ে হয় ১২২.৫০ টাকা। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ১৩২.৫০ টাকা।
মজুরি নিয়ে আরও একটি বিষয় তুলছে মালিকপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, শুধু নগদ মজুরিকে ধরা ঠিক নয়। তার সঙ্গে নানা সুবিধাও দেওয়া হয়। যেমন বিনামূল্যে জ্বালানি কাঠ, শুকনো চা পাতা, কম দামে রেশন, চিকিৎসা, শিশুদের শিক্ষা ইত্যাদি। নির্দিষ্ট ওজনের চেয়ে বেশি পাতা তুললে এবং কারখানায় কাজ করার জন্য দেওয়া হয় বাড়তি অর্থও। মজুরির সঙ্গে এই সব কিছু টাকার হিসেবে ধরে সার্বিক ভাবে হিসেব করা উচিত।
চা শিল্পের দাবি, এই মুহূর্তে ডুয়ার্সের বাগানগুলির অবস্থা ভালো নয়। প্রায় অর্ধেক বাগানই লোকসানে চলছে। মালিকপক্ষের দাবি, চা উৎপাদনের মোট খরচের অর্ধেকেরও বেশি মজুরির খরচ। গত দশ বছরে ডুয়ার্সের চায়ের দাম গড়ে ৬-৭ শতাংশের বেশি বাড়েনি। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। ফলে এমনিতেই সার্বিক ভাবে লোকসানের চক্র থেকে বেরোতে পারছে না অধিকাংশ বাগান।