রাজ্যের আশ্বাসে ধর্মঘট স্থগিত রেখেছিল চা শ্রমিকদের সংগঠনগুলি। কিন্তু সোমবার সেই রাজ্যই দৈনিক ন্যূনতম মজুরি মাত্র ৩ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ায় ভেস্তে গেল ত্রিপাক্ষিক বৈঠক। তার পরেই আজ, মঙ্গলবার থেকে দার্জিলিং বাদে উত্তরবঙ্গের চা বাগানে তিন দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ২৯টি চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরাম। রাতে যুগ্ম শ্রম কমিশনার (উত্তরবঙ্গ) চন্দন দাশগুপ্ত জানান, মঙ্গলবার ন্যূনতম মজুরি নিয়ে উত্তরকন্যাতেই ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে। তবে ধর্মঘটের ডাক রাত পর্যন্ত ফেরায়নি ফোরাম। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন অবশ্য এই ফোরামে নেই। শাসক মহলের মতে, ন্যূনতম মজুরির কথাই শুধু বলা হয়েছে। মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বেশি মজুরি আদায় করতে পারলে তো আর কারও আপত্তি নেই।
গত বছর মোর্চার ডাকা ধর্মঘটে দার্জিলিঙের চা শিল্পে বড় ক্ষতি হয়েছিল। তাই সেখানকার বাগানে সরাসরি ধর্মঘটের কথা বলা হয়নি। কিন্তু একই সঙ্গে বলা হয়েছে, সেখানেও কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ফলে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা।
শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় এ দিন চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি স্থির করতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছিল রাজ্য। রাজ্যের শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতার ১৭২ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেন। ফোরামের নেতাদের দাবি ছিল ২৩৯ টাকা ৯২ পয়সা মজুরি। শুরু হয় বিতণ্ডা। কিছুক্ষণের মধ্যে বৈঠক সমাপ্ত ঘোষণা করে বেরিয়ে যান শ্রম দফতরের আধিকারিকেরা। ঘণ্টা খানেক পরে ফোরামের নেতারা উত্তরকন্যার মূল গেটে বিক্ষোভ শুরু করেন। সেখান থেকেই ধর্মঘটের কথা ঘোষণা করা হয়।
শ্রম কমিশনার বলেন, ‘‘দু’পক্ষই প্রস্তাব দিয়েছে। কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। তাই ২০ আগস্ট কলকাতায় বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’ তবে জয়েন্ট ফোরামের আহ্বায়ক জিয়াউল আলমের অভিযোগ, এখন তাঁদের কৃষি শ্রমিকের সূচকে মজুরি দেওয়া হয়। কিন্তু তা দেওয়া উচিত শিল্প শ্রমিকের হিসেব অনুযায়ী। তাঁর যুক্তি, অসম সরকার দৈনিক ৩৫১ টাকা মজুরির প্রস্তাব দিয়েছে।
এ দিনের ঘটনায় রাজনীতির রং লেগেছে। তৃণমূলের চা শ্রমিক নেতা নকুল সোনার বলেন, ‘‘রাজ্য নিয়ম মেনেই মজুরির প্রস্তাব দিয়েছে। তা সত্ত্বেও কিছু নেতা ঝামেলা পাকাচ্ছেন।’’ তৃণমূলের দাবি, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে চা বলয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে বিরোধীরা।
ব্যর্থ আলোচনা
• চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি এখন দিনে ১৬৯ টাকা।
• ৩ টাকা বাড়িয়ে ১৭২ টাকা করার প্রস্তাব রাজ্যের।
• তা নাকচ করে দার্জিলিং বাদে উত্তরবঙ্গের চা বাগানে তিন দিন ধর্মঘটের ডাক ফোরামের।
• ধর্মঘটে অবশ্য নেই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন।
• মঙ্গলবার ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক উত্তরকন্যায়।
সন্ধ্যায় উত্তরকন্যায় এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য এবং কংগ্রেস নেতা শঙ্কর মালাকার। অশোকবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার চা শ্রমিকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।’’ আরএসপির শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষের বক্তব্য, ‘‘শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক বৈঠকে ছিলেন না। রাজ্যের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে।’’ মলয়বাবু বলেন, ‘‘আমি যেতে পারিনি। তবে সচিব গিয়েছিলেন। একটি ন্যূনতম মজুরি কমিটি তৈরি হয়েছে। তাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে।’’ চা বাগান মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়া টি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অরিজিৎ রাহা বলেন, ‘‘ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। ভরা মরসুমে চাষের ক্ষতি হবে।’’
দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র চা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত। দার্জিলিং বাদে বাকিগুলি এখন তৃণমূলের হাতে। তবে সম্প্রতি কোথাও কোথাও বিজেপির প্রভাব বেড়েছে। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ফোরামের কোনও প্রভাব নেই। ধর্মঘট সফল হবে না।’’