কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের এখন ভরা মরসুম। প্রায় প্রত্যেক দিনই প্রকাশিত হচ্ছে ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষের একগুচ্ছ প্রথম ত্রৈমাসিক ফল। যার জেরে এ পর্যন্ত মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে শেয়ার বাজারে। প্রত্যাশার তুলনায় ভাল ফল করেছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস। আশানুরূপ ফল দেখিয়েছে উইপ্রো-ও। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের লাভ বাড়লেও অনুৎপাদক সম্পদ বৃদ্ধি চিন্তায় রাখছে লগ্নিকারীদের। আয় কমলেও লাভ বেড়েছে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ-এর।
বিশাল সিক্কার নেতৃত্বে এ বার নজরকাড়া ফল করেছে ইনফোসিস। প্রথম তিন মাসে ঝুলিতে ৩,০৩০ কোটি টাকার নিট মুনাফা। আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ৫% বেশি। এই সময়ে আয় বেড়েছে ৭%। সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ৭৯ জন নতুন গ্রাহক। মোট ক্রেতার সংখ্যা পৌঁছেছে ৯৮৭-তে। সিক্কা আশার কথা শুনিয়েছেন সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়েও। ফলে আশবাদী লগিকারীরাও। ১:১ অনুপাতে বোনাস শেয়ার ইস্যুর পরে ইনফোসিসের ৫ টাকার প্রতিটি শেয়ারের বাজার দর এখন ১,০৮৯ টাকা। অন্য দিকে, উইপ্রোর মোট আয় ১,২২৬ কোটি টাকা বেড়ে পৌঁছেছে ১২,৮৯৫ কোটিতে। ৮৫ কোটি টাকা বেড়ে লাভ স্পর্শ করেছে ২,১৮৮ কোটি টাকা।
রিলায়্যান্সের আয় ২৩% কমে ৮৩,০৬৪ কোটি টাকায় পৌঁছলেও নিট লাভ ২৬৫ কোটি বেড়ে ছুঁয়েছে ৬২২২ কোটি টাকা। ভাল ফলাফলের তালিকায় এ বারও নাম উঠেছে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের। ১২,২৩৪ কোটি টাকা আয়ের উপরে বেসরকারি এই ব্যাঙ্ক ঘরে তুলেছে ১,৯৭৮ কোটি টাকার নিট মুনাফা। তবে বেড়েছে অনুৎপাদক সম্পদ বা খারাপ ঋণের বোঝা। বেসরকারি এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের আয়ও বেড়েছে ২৩.৫%। লাভ ২০.৭% বেড়ে পৌঁছেছে ২৬৯৬ কোটিতে। তবে খারাপ ঋণ বাবদ সরিয়ে রাখতে হয়েছে ৭২৮ কোটি টাকা।
খারাপ ফলাফলের তালিকাতেও আছে বেশ কিছু নামী কোম্পানি। রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস অথরিটির লাভ কমেছে ৩২%। ১০০ কোটি টাকা মুনাফা কমেছে ওষুধ সংস্থা লুপিন ল্যাবের। প্রথম ত্রৈমাসিক ফলাফলে কিছুটা হতাশ করেছে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার। আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হবে আরও বেশ কিছু ফলাফল। ফল প্রকাশের পালা শেষ হবে ১৪ অগস্ট।
অর্থনীতির জন্য সুখবর হল কম বৃষ্টির ভয় কেটেছে। নিয়ন্ত্রণে গ্রিসের ইউরোপে টিকে থাকার সমস্যাও। বিশ্ব বাজারের মন্দার চাপ বাড়ায় কিছুটা দুর্বল হলেও সেনসেক্স এখনও ২৮ হাজারকে ধরে রাখতে পেরেছে। দেশের বেশির ভাগ অংশে ভাল বৃষ্টি হওয়ায় ফসল বোনার কাজ বেশ এগিয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ বার ফসল গত বছরের তুলনায় বেশি হবে। ফলে সম্ভাবনা থাকবে খাদ্যপণ্যের দাম কমার। দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলে সুদ কমার পথও সুগম হবে।
৪ অগস্ট রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণনীতি ফিরে দেখবে। ওই দিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার অপেক্ষায় সকলে। যদিও এখনই সুদ কমার বড় আশা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমালে আমরা বাজারের ঊর্ধ্বগতি দেখতে পাব। নজর থাকবে বাকি কোম্পানি ফলাফলের দিকেও, যেগুলি শীঘ্রই প্রকাশিত হবে।
সোনা ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচু জায়গায় পৌঁছে সামান্য উঠেছে। দাম বেশ আকর্ষণীয় জায়গায় পৌঁছলেও এক লপ্তে লগ্নির জন্য বেশি সোনা না-কেনাই ভাল। মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনা এখনও স্থিরতা পায়নি। এই দামে অল্প অল্প করে সোনা বা গোল্ড ইটিএফ-এ লগ্নি করা যেতে পারে। নজর রাখতে হবে বিশ্ব বাজারে সোনার গতিবিধির উপরে।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রধানমন্ত্রী জন-ধন প্রকল্প সাফল্যের পথে অনেকটাই এগিয়েছে। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত খোলা নতুন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা যেখানে ছিল ৬. ৮৭ কোটি, সেখানে তা ১৪ জুলাইয়ে বেড়ে হয়েছে ১৬.৯২ কোটি। ৩১ অক্টোবর ওই সব অ্যাকাউন্টে জমার পরিমাণ ছিল ৫১৮০ কোটি টাকা। তা ১৫ জুলাই বেড়ে হয়েছে ২০,২৮৮ কোটি। শূন্য ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট আগে ছিল ৭৫.৯২%। তা কমে হয়েছে ৪০.৫৯%। এই তথ্য ইঙ্গিত দেয়, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না-থাকা পরিবার অন্তত একটি অ্যাকাউন্ট খোলায় সঞ্চয়ের প্রবণতা বেড়েছে।
অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে বহু মানুষ যোগ দিয়েছেন নতুন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিতে। প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনায় বছরে মাত্র ৭১২ টাকা প্রিমিয়ামে ১৪ জুলাই পর্যন্ত লগ্নি করেছেন ৭৮ কোটি মানুষ। বছরে ৩৩০ টাকা প্রিমিয়ামে ২.৭ কোটি যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা প্রকল্পে। এটি কম খরচের জীবনবিমা। ৪.৭ লক্ষ মানুষ সামিল হয়েছেন অটল পেনশন প্রকল্পে। গ্যাস বাবদ ভর্তুকি সরাসরি অ্যাকাউন্টে জমা পড়ায় সরকারের বার্ষিক সাশ্রয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। আগে ভর্তুকিপ্রাপ্ত সিলিন্ডারের একটি বড় অংশ কালো বাজরে বিক্রি হত। চলে যেত অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে।
এত সংখ্যায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলায় সরকারের সাফল্য কিছুটা হলেও আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। অ্যাকাউন্ট খোলার এই সরকারি প্রয়াস চলতে থাকলে কালক্রমে সকলের অজান্তে একটি ছোটখাটো অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটে যেতে পারে।